মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে

ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২২, ৯:১১ এএম

ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ে মুসুল্লিদের ঢল। আজ রবিবার মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্স থেকে তোলা - এস এ মাসুম


সারাদেশে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় আজ রোববার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহসহ সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোতে পেশ ইমাম ও খতিবরা ঈদ জামাত পূর্ব বয়ানে কোরবানির তাৎপর্য ও ফযিলত সর্ম্পকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা কোরবানির জবাইকৃত পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কারের তাগিদ দেন। সারাদেশের ঈদগাহ ও মসজিদগুলোর ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছেন। প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ ঈদ পালিত হয়।

এদিকে, শনিবার মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত করেছে। ঈদে নানা রঙে-ঢঙে সেজেছে ছোট্ট শিশুরা। শনিবার সকালে মধ্যপ্রাচ্যের সউদী আরবে যথাযথ মর্যাদায় মসজিদুল হারাম শরিফে ঈদের নামাজ আদায় করেন লাখ লাখ মুসল্লিরা। এরপরই একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লিরা। ঈদ জামাত শেষে পেশ ইমাম ও খতিবরা মোনাজাতে বলেন, সারা বিশ্বের মুসলিম মুমিনদের জীবনে ঈদুল আজহা বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রকৃত সফলতা। তারা দেশ জাতির উন্নতি সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। মোনাজাতে আল্লাহর নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের আশায় মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। আল্লাহ হুম্মাহ আমিন আল্লাহ হুম্মাহ আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে ঈদগাহর ময়দান। বৈশ্বিক করোনা মহামারি থেকে দেশবাসিসহ মুসলিম উম্মাহর হেফাজতে মোনাজাত করা হয়। প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও ফজিলত সর্ম্পকে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, মুসলিম উম্মাহর জীবনে অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সকল জাতির নিজস্ব উৎসব আছে, ঈদ হল আমাদের উৎসব। আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় আজও মুসলমানের সামনে হাজির হয়েছে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এ ইবাদত। ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল। কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ননা করতে গিয়ে খতিব বলেন, হাদিস শরিফে আছে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো। অন্য হাদিসে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশম এবং লোমের বিনিময়ে আল্লাহ নেকি দান করবেন।
আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের উত্তম নির্দশন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট তোমাদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এ জন্য কোরবানি করার আগেই আমরা নিয়্যাত পরিশুদ্ধ করে নিব। যেন কোন কারণে আমাদের আমল নষ্ট না হয়।
কোরবানির গোশতের ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং গরীবদের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বিত্তশালীদের সাথে সাথে তারাও যেন ঈদের খুশিতর শামেল হতে পারে। ঈদের বয়ানে খতিব পশুর জবাই করার সাথে সাথে নিজের মনের পশুত্বকেও কোরবানি করে স্বচ্ছ ভাবে জীবন যাপনের আহ্বান জানান। নামাজ শেষে খতিব দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা, বানভাসি ও নির্যাতিত মুসলিম ও বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করেন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বলেন, মুসলমানের ঈদ ইবাদাত তুল্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে বন্দেগীর মাধ্যমে নেকি অর্জনের মহা উৎসব। অন্য জাতির সংস্কৃতি, নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, আনন্দ, উৎসবের মত নয়। বিশেষত পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম মিল্লাতের অনন্য এক ঈমানী চেতনার নাম। যার সাথে মিলে আছে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে মুসলিম জাতির ধর্মীয় পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর মান্যতার উজ্জল দৃষ্টান্ত। পৃথিবীর ইতিহাসে তার নজির বিরল। তাইতো আজও বিশ্ব মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে তার অনুসরনে অত্যন্ত আগ্রহ, উদ্দীপনায় প্রতি বসর পশু কোরবানি করে ত্যাগ বিসর্জনের মাধ্যমে আনন্দ ও খুশির উচ্চাস প্রকাশে নিজেকে ধন্য মনে করে। নিজের ভেতরের পশুত্বকে জবাহ করত: সর্ব প্রকার গুনাহ ও অশ্লিল কাজ থেকে বিরত থাকার দৃঢ প্রতিজ্ঞা করে। অন্যায় অবিচার ও তাগুতের বিরুদ্ধে লৌহ ইস্পাত তুল্য শীশা ঢালা প্রাচীর সাদৃশ অটল অবিচলতার ভূমিকা পালনে উৎসাহী হয়। এ সব ত্যাগ বিসর্জনের মাঝেই নিজের আনন্দ ও তৃপ্তি খুজে পায়। নিজেদের খুশির সাথে অসহায় গরিবদের শামিল করার লক্ষে কোরবানির গোশতের কিছু অংশও যেমন তাদের মাঝে বন্টন করে থাকে তেমন অন্য সময়েও তাদের জীবনে আনন্দ প্রদান, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে সতেষ্ট হয়। ইসলামের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে সর্বদা সাচ্ছন্দবোধ করে।
খতিব আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহায় যেমন ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাকআত নামাজ আদায় করে নিজের সব ভেদাভেদ ভুলে যায়। পরস্পরে কুশল বিনিময়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে, জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময়ী এবং আন্তরিকতাপূর্ণ করে তুলে তেমনি সকলকেরই পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের কল্যাণে, মানুষের মঙ্গলে, ধর্মীয়, চেতনায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা উচিৎ । ঐক্যবদ্ধ ভাবে অন্যায় অবিচার, দুর্নীতি দূরাচার, সেচ্ছাচারিতাসহ সকল প্রকার চরিত্র বিধংসী, ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্ম এবং শান্তি শৃংখলা বিরোধী কার্য্যকালাপের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হওয়া সময়ের দাবি। পরিশেষে তিনি ” আর নয় ভেদাভেদ বৈষম্ম সংঘাত, ইসলামের তরে মানুষের কল্যাণে অন্যায় অবিচার করে ছাড়ব উৎখাত “ নীতি অবলম্বনের আহবান করে সকলকে নিয়ে তওবা ইস্তেগফারান্তে মুসলিম উম্মাহের শান্তি, দেশ ও জাতির কল্যাণে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাত পেশ করেন।
ভোলার সদরের নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব আল্লামা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন ঈদুল আজহার সলাত পূর্ব আলোচনায় ঈদ শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ঈদ শব্দের অর্থ পুনরাগমন, যে উৎসব বা পর্ব নির্ধারিত দিনে বা সময় প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে তাকেই ঈদ বলা হয়। যেমন জুমার দিবসকে সপ্তাহিক ঈদ বলা হয়। কেননা প্রতি সপ্তাহে এ দিনটি ঘুরে ঘুরে আসে। হাদীস শরীফে রাসূল (সা.)বলেছেন যে মহান আল্লহ তায়ালা আমাদেরকে বাৎসরিক ঈদ হিসাবে দুটি দিয়েছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন। ইসলাম সামাজিক আনন্দ ও উৎসবকে ইবাদত ও জনকল্যাণের সাথে সংযুক্ত করেছে। যেমন ঈদুল ফিতরের দিন প্রথমে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে ফেতরা আদায় এবং সালাত আদায়ের পর সামাজিক আনন্দ তথা বৈধ বিনোদন। ঠিক তেমনি ভাবে ঈদুল আজহায় প্রথমে সালাত আদায়ের পরে কোরবানি করা ও গরীব অসহায়ের মাঝে গোশত বিতরন করা ও বৈধ বিনোদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
কোরবানি মানে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিলের জন্য কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া। যেমন আমাদের রুহানী পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) হয়েছিলেন এবং কৃতিত্তের সাথে উত্তীর্ন হয়ে এ আদর্শই রেখে গেছেন যে আল্লহর চেয়ে বেশি ভালোবাসার পাত্র আর কেউ নয়। কাজেই ঈদুল আজহা পালন করা তখনই প্রকৃতপক্ষে সার্থক হবে যদি আমরা এই চেতনা নিয়ে জীবন যাপন করি যে দুনিয়া আমাদের জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র এবং এই পরীক্ষায় পাশ করেই আল্লাহর মহব্বত অর্জন করতে হবে।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী পবিত্র ঈদুল আজহার নামায পূর্ব বয়ানে বলেন, আজ তাওহীদের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় নির্দেশের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের এক অনুপম বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে ঈদুল আজহা। মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এদিন আমরা নির্ধারিত পশু কোরবানি করি। কোরআন হাদীসে এ ব্যাপারে ব্যাপক তাকিদ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন (সূরা কাওসার : ২)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (ইবনে মাজাহ)। সুতরাং সামর্থবান প্রত্যেক মুসলমানকেই কোরবানি করতে হবে। এটা ওয়াজিব। কোরবানি না করে সে অর্থ আল্লাহর রাস্তায় বা গরীব অসহায়দের দান করলে ওয়াজিব দায়িত্ব আদায় হবে না।
খতিব আরও বলেন, আমাদেরকে ঈদুল আজহার শিক্ষা ও প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে। ঈদুল আজহা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, বিবি হাজেরা ও ইসমাঈল আ. এর পরম ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত উৎসব। কোরবানির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে রাজি আছে কিনা সেটিই পরীক্ষা করা হয়। ঈমানের এসব পরীক্ষায় যার যত বেশি ইখলাস ও তাকওয়া থাকবে সে তত বেশি সফলতা লাভ করতে পারবে। কোরবানি শুধু পশু কোরবানির নাম নয়। বরং নিজের পশুত্ব, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহঙ্কার ত্যাগের নাম। নিজের নামাজ, কোরবানি, জীবন-মরণ ও যাবতীয় বিষয় কেবল আল্লাহর নামে, শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য করাই হচ্ছে প্রকৃত কোরবানি। এটা লোক দেখানো বা গোশত খাওয়ার কোন উৎসব নয়। অনেককে দেখা যায় গরিব-মিসকিনদের যথাযথভাবে কোরবানির গোশত না দিয়ে ঈদের দিন নিজেরা যৎসামান্য গোশত রান্না করে বাকিটা ফ্রিজে রেখে দেয়। এগুলো কোনো অর্থেই প্রকৃত কোরবানির পর্যায়ে পড়ে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, গোশত খাওয়ার নিয়তে বা হারাম সম্পদ দ্বারা কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না। বরং তা পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কোরবানিদাতাদের সাবধান করে দিয়েছেন, কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হজ : ৩৭)। এছাড়া আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করা ও তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ করাটাও ঈদুল আজহার অন্যতম তাৎপর্য। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করেন, আমীন।
ঢাকর মোহাম্মদপুর লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা ঈদুল আজহা খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ দিনগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ তায়ালা উপহার হিসেবে দান করেছেন এই হজ্জের মৌসুমে। বায়তুল্লাহ শরীফের তোয়াফ, মীনা, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান , কোরবানি ও ঈদুল আজহার নামাজ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ধনী গরীবের একাকার মিলন এসবকিছুর অফুরন্ত নেয়ামত ও আনন্দ আল্লাহতালা কেবলমাত্র মুসলিম উম্মাহকেই দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহতালার লাখো শুকরিয়া আদায় করছি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে রাসূল আপনি বলুন," নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য নিবেদিত" আল্লাহ আরও বলেন, " এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সুতরাং তোমরা পরস্পর মাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হও" । রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, " সারা বিশ্বের মুসলমানরা একটি দেহের ন্যায়। দেহের যে কোন স্থানে ব্যাথা হলে সমগ্র দেহে যেমন ব্যাথা অনুভূত হয় ঠিক তেমনি এক মুসলমানের উপর যে কোন স্থানে আঘাত আসলে সকল মুসলমানের উপর সে আঘাত আসছে মনে করতে হবে। অপরদিকে যে কোন মুসলমানের আনন্দ এবং উৎসব ও একই ভাবে সকল মুসলমানের আনন্দ - উৎসব ।
আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের আনন্দ উৎসবের জন্য বছরে দুটি ঈদ দিয়েছেন যার মধ্যে শুধু আনন্দই নেই বরং আছে ভাতৃত্ব, মানবতা,ত্যাগ,নিষ্ঠা ও ইবাদত। যা পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম বর্ণের মধ্যে পাওয়া যায় না। আল্লাহ আমাদেরকে সকল অবস্থায় খাঁটি ঈমানদার হওয়ার তৌফিক দান করুন, ঈদুল আজহার দিনে এটাই মহান আল্লাহর নিকট আমাদের আরাধনা। আমীন । মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মাতৃত্ব বন্ধনে ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে উম্মাহর সার্বিক কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন।
গুলিস্তানস্থ ফুললবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী ঈদুল আজহার খুৎবায় বলেন, ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন-হাদীসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তাগিদ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর কোরবানির পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ ৩৬)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আমি তাঁর (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবাহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কোরবানি। আমি এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ১০৭-১০৮)। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কোরবানি কর’ (কাওছার ২)।
খতিব বলেন, ঈদুল আযহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি ইবরাহিমী সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে। হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ। যা প্রতি বছরই আমাদেরকে তাওহীদী প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। আমরা নিবিড়ভাবে অনুভব করি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব। ঈদের উৎসব একটি সামাজিক উৎসব, সমষ্টিগতভাবে আনন্দের অধিকারগত উৎসব। ঈদুল আজহা উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কোরবানি। কোরবানি হল চিত্তশুদ্ধির এবং পবিত্রতার মাধ্যম। এটি সামাজিক রীতি হ’লেও আল্লাহর জন্যই এ রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। তিনিই একমাত্র বিধাতা প্রতি মুহূর্তেই যার করুণা লাভের জন্য মানুষ প্রত্যাশী। আমাদের বিত্ত, সংসার এবং সমাজ তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত এবং কোরবানি হচ্ছে সেই নিবেদনের একটি প্রতীক। আল কোরআনে আল্লাহ বারবার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল মালের কিছু অংশ এবং আমি যা তোমাদের জন্য যমীন হতে বের করেছি তার অংশ ব্যয় কর’ (বাক্বারাহ ২৬৭)। ঈদুল আযহার লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয় নম্র আচরণ করা। কোরবানির দিন কোন সৎ কর্মই আল্লাহর কাছে রক্ত প্রবাহিত করার চাইতে অধিকতর প্রিয় নয়। আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কোরবানিদাতাদের সাবধান করে দিয়েছেন, ‘কোরবানির পশুর রক্ত, গোশত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল তোমাদের তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি’ (হজ্জ ৩৭)। আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে কোরবানির ফজিলত বুঝে তা অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন