সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

হামার ঈদ বানের পানিতে ভাইসে গেছে’

ফয়সাল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ধনী-গরিব নির্বিশেষে ঈদের আনন্দ সবার হওয়ার কথা। কিন্তু সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের আনন্দ থেকে যায় দৃষ্টির আড়ালেই। ঈদ উৎসবে যাদের নতুন পোশাক তো দূরের কথা, দু’বেলা ভাতও জোটে না। এমনই একটি গোষ্ঠী ভাসমান নদী ভাঙনের শিকার মানুষজনের বসবাস বাঁধে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অবদা বাঁধ ও কেচি সড়কের দু’পাশে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে এই ভাসমান মানুষেরা।

সরজমিন দেখা গেছে, শিক্ষার আলোর মতো ঈদ আনন্দও পৌঁছেনি গৃহহারা মানুষজনের কাছে। খোলা আকাশের নিচে মাথার উপর ছেঁড়া পলিথিন বা দু’চারটা টিন দিয়ে চারদিকে কাপড় বা খড়ের বেড়া দিয়ে কোনমতে ছাপরায় করছে জীবন যাপন। তাঁবুর বাসস্থানের মতোই তাদের জীবনের আনন্দ। আবার রয়েছে উচ্ছেদের ভয়। ঈদের দিনেও সন্তানের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে কাটাতে হয় কাজ কামে। একজনের আয়ে আহারের ব্যবস্থা হয় না বলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও খড়কুটা কুড়ানো, অন্যের বাড়িতে গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়।
সেখানে নতুন পোশাকের স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে যায়। ঈদ প্রসঙ্গে কথা হয় খড়খড়িয়া বাঁধে বাসরত আলমঙ্গির, মমেনাসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, ঈদ গেছে কিন্তু ঈদের আনন্দ তা ছিল তাদের কাছে সোনার হরিণের মতো। অবদা বাঁধে বসবাসরত শিশু সুমি (৮), মমিনুল (৬), মিম (১০) ও পারভিন জানায়, ঈদ বলে তাদের কোন বিশেষ দিন নেই। ঈদে তাদের দেয়া হয় না নতুন জামা কাপড়। এমনকি ঈদের দিন তাদের এই ছোট্ট ঘরে হয় না পোলাও মাংস রান্না। রাজার ভিটা বাঁধের পাশে সংসার গড়া রমজান, বলেন, বারবার নদী ভাঙ্গনের ফলে জন্মের পর থেকেই বাঁধ বা সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাযাবরের জীবনযাপন করছি। এক সময় শরীরে শক্তি ছিল, কাজ করতে ভালো লাগতো। আর এখন কাজ করি শুধু পেট বাঁচানোর জন্য। এখন আর ঈদ বলে আলাদা কিছু নেই।

এলাকার সচেতন মহল বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জন্য অনেক ভালো কাজ করছে। নদী ভাঙ্গনে সর্বহারা মানুষজনের জন্য যদি থাকার একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতো তাহলে হয়তো কোন এক সময়ে এ কষ্টের জীবনের অবসান ঘটতো। পুটিমারি, রাজারভিটা, জোড়গাছ, খড়খড়িয়া, পাত্রখাতা অবদা বাঁেধর উপর বসবাস পরিবারগুলো ভয়াবহ কষ্টময় জীবনযাপনসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এসব পরিবারের পুরুষরা মাছ ধরা, ভিক্ষাবৃত্তি, শ্রমবিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

এই পরিবারের যুবতীরা এ পরিবেশে চরম নিরাপত্তা হীনতায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে চুপ হয়ে থাকতে হয় ওদের। এই অভাবি ভুকানাঙ্গা মানুষজন এভাবে প্রতিদিন নীরব যন্ত্রণার শিকার হয়ে অতিক্রম করতে হয় জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত। সমাজে এসব পরিবারের মানুষ যাদের ঈদ আনন্দ থেকে যায় দৃষ্টির আড়ালেই। ঈদ উৎসবে তাদের নতুন পোশাক তো দূরের কথা, দু’বেলা দু’মুঠো ভাতও জোটে না। কোরবানির মাংস জুটবে কি করে?

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার গৃহহীন মানুষের গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে, ইতোমধ্যে শত শত মানুষ পেয়েছে সুখের ঠিকানা এবং ধীরে ধীরে সকল ভূমি ও গৃহহীন মানুষ একসময় সকল সুবিধাসহ পাবে সুখের আশ্রয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন