বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে গত ৭ জুন থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন অবস্থানের পর এবার লংমার্চ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত লংমার্চ করেন। কমলাপুর থেকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গিয়ে কিছুক্ষন অবস্থানের পর রেল ভবনে গিয়ে মহাপরিচালকের কাছে ছয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। এরপর সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন।
জানা যায়, গত ১৩ জুন রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট কাটার চেষ্টা করেন রনি। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ থেকে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠানো হয়। কিন্তু পিন নম্বর দিয়ে সেটি নিশ্চিত করার আগেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিটের মূল্য কাটা হয়। ঘটনার পর রনি দ্রæত কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের সার্ভার রুমে অভিযোগ করেন। সেখান থেকে কারণ হিসেবে জানানো হয়, সিস্টেমের কারণে এমন হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে অভিযোগ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে গত ৭ জুলাই থেকে তিনি ছয়টি দাবিতে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান শুরু করেন।
রনি জানান, সেদিন তার চোখের সামনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি আরেক যাত্রীর কাছে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর। এরপর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে ১৪ এবং ১৫ জুন দুই বার অভিযোগ করেন। তবে এখন পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কোনো শুনানির ডাক আসেনি।
সাংবাদিকদের তিনি জানান, তার ৬ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসা শিক্ষার্থীদের খাবার, অবস্থানের আনুষঙ্গিক খরচ এবং সহজ ডট কমের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পরিচালনা করার খরচ জোগাতে তিনি ১৯ হাজার টাকা দিয়ে তার ক্যামেরাও বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি তার উকুলেলে, কাহন, গিটার আর কম্পিউটারও বিক্রি করতে চান। রনি বলেন, আমি কারও থেকে সাহায্য নিতে চাই না। অনেকেই টাকা পাঠাতে চেয়েছেন। তাদের প্রতি আমি আমৃত্যু কৃতজ্ঞ। কিন্ত আমি আমার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছি না। তাই তাদের টাকা পাঠাতে নিরুৎসাহিত করেছি।
রনির ৬ টি দাবি হলো-
১. টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি হয়রানির ঘটনায় তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।
৩. অনলাইন-অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত¡াবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাÐ সার্বক্ষণিক মনিটর ছাড়াও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন