শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সৈয়দপুরে কালের সাক্ষী রেলওয়ের ন্যারোগেজ ইঞ্জিন

মিউজিয়াম ঘুরে অনেকেই অতীত ঐতিহ্য খুঁজেন

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার অভ্যন্তরে রাখা ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও গড়ে উঠা রেলওয়ের মিউজিয়াম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন দেশের প্রথম কয়লাচালিত লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দেখতে। কেউ কেউ রেলের মিউজিয়াম ঘুরে অতীত ঐতিহ্য খুঁজে ফিরছেন।

বৃটিশ শাসনামলে ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে সৈয়দপুরে নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। রেলওয়ের ছোট-বড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের কোচ মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়। রেল সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কারখানা পরিদর্শন করেন।
সৈয়দপুর রেল কারখানা চত্বরে যে তিনটি লোকোমোটিভ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে একটি ন্যারোগেজ ইঞ্জিন, একটি কয়লাচালিত ব্রডগেজ এবং অন্যটি ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন। কয়লাচালিত ন্যারোগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন সিএস ১৫। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে।
বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডবিøউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১ দশমিক ৭৬ টন। খুলনা-বাগেরহাট রুটে কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করত। সর্বশেষ ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে এই কয়লাচালিত ন্যারোগেজ স্টিম লোকোমোটিভ।
রেলের আরেকটি ইঞ্জিন কয়লাচালিত ব্রডগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এসজিসি-জেড ২৪০। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। ১৯২১ সালে তৈরি হয়েছিল। এই ইঞ্জিন দিয়ে পাকশী রুটে ট্রেন চলাচল করত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী ছিল এ ইঞ্জিন। সৈয়দপুর রেল কারখানার চত্বরে ডিজেলচালিত একটি মিটারগেজ লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) রাখা আছে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এ ইঞ্জিনটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি দিয়ে পার্বতীপুর-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল করত বলে জানা গেছে। এই ইঞ্জিন ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে।
রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেলসেবা চালুর পরবর্তী শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইঞ্জিনগুলো চলাচল করেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণির মিটারগেজ ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের সূচনা হয়। রেলে ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে।
বর্তমানে ডিজেল লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয় রেল পরিবহন ব্যবস্থায়। ডিজেল লোকোমোটিভের মধ্যে ডিজেল ইলেকট্রিক ও ডিজেল হাইড্রোলিক দুই ধরনের ইঞ্জিন রয়েছে দেশে। অফরদিকে ন্যারোগেজ রেলপথের ব্যবহার বর্তমানে না থাকায় সচল নেই কোনো ন্যারোগেজ ইঞ্জিন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সর্বশেষ রেলওয়েতে ১৯৮৪ সালে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়। এরপর আর কোনো স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়নি। ব্রিটিশ আমলের এসব ইঞ্জিন পরিবর্তন হয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে আধুনিক সব ইঞ্জিন। যেহেতু এই কারখানায় এক সময় স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত করা হত। আমরা সেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই লোকোমোটিভ এখানে রেখেছি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন