১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গের পর দীর্ঘ ১০ বছর নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্যার নবাব সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিদের প্রাণান্ত কোশেশের ফলস্বরূপ ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ববঙ্গের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষায় প্রথম পছন্দ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।এখানে ভর্তির সুযোগ পেলে প্রায় সবাই এখানেই পড়েন, যদি না স্কলারশিপসহ বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান।কদাচিং মেডিকেল, বুয়েট কিংবা অন্য কোথাও ভর্তির ব্যাপারেও কারও কারও আগ্রহ থাকে। সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটিই শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ।
প্রশ্ন ওঠেছে, একশ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেকে মেলে ধরতে কতটা সফল? গত ৮ জুন ২০২২ যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস (কিউএস) বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বিশ্বসেরা এক হাজার ৪০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবারো প্রথম ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থান হয়নি। গত বছরের মতো এই বছরের তালিকাতেও দেশের শীর্ষ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে।
জানা যায়, একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাতের ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১২ সালে কিউএস’র তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১ এর মধ্যে। ২০১৪ সালে তা পিছিয়ে ৭০১তম অবস্থানের পরে চলে যায়। ২০১৯ সালে তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরও পেছনের দিকে চলে যায়। অথচ ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ২০২৩’-এ শীর্ষ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৯টি ও পাকিস্তানের তিনটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্বসেরা দশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তালিকার এক নম্বরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। এরপর রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক), লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইউনিভার্সিটি।
র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় পিছিয়ে কেন, তা জানার জন্য র্যাংকিং করার মানদন্ডগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিত। আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানদন্ড কিংবা গবেষণায় সুযোগ সুবিধায় আমরা অনেক পিছিয়ে। ছোট করে যদি বলি, গত ১১ জুন দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘১৭০টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়ছে মদিনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, গিনেসবুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস!’ খবরে বলা হয়, সউদি আরবের মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক নাগরিক অধ্যয়ন করছে। ১৭০টি দেশের ছাত্র এখন মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনাখরচে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছে। তাহলে খুব সহজেই প্রশ্ন জাগে, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়টি দেশের এবং কতজন শিক্ষার্থী পড়ছে?আমরা কেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের টানতে পারছি না? ঢাবির ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে বাজেট ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, সেখানে এমআইটির শুধুমাত্র স্পন্সর রিসার্চ (গবেষণা ব্যয়) মাত্র ১৭৭৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। কী বলবেন?
সাধারণ ধারনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ দুটি। এক. জ্ঞান উৎপাদন (গবেষণা) দুই. জ্ঞান বিতরণ (পাঠদান)।প্রথমটিতে আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক। বাজেটে শিক্ষা বা উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে খুবই কম। দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোসহ দেশের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ করার দাবি করে আসছে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটছে না। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। গুণগত শিক্ষার জন্য বরাদ্দের হার আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমার প্রশ্ন, শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর দায়িত্ব কার? আর আমরা দায় দিচ্ছি কাদের?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এসএম আমানুল্লাহ র্যাংকিং নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন। আসুন শুনি, তিনি কী বলতে চান। তিনি লিখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি বাংলাদেশের ভিত্রে না বাহিরে? বাংলাদেশে কি বিশ্ববিদ্যালয় একটাই? আর নাই? ওরা কি র্যাঙ্কে আইসা গেছে? এতো ট্রল করছেন কেন? কিছু না জানার ভান করছেন কেন? প্রতি বছর শিক্ষার বাজেট কি আমরা কমাচ্ছি? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন কি আমাদের হাতে? একটা শব্দ করলে শিক্ষকদের চাকুরি চলে যাচ্ছে। আপনি খাওয়াবেন তার পরিবারকে? তার সারাজীবনের তিলে তিলে গড়া ইজ্জত নিয়ে যাচ্ছে। আপনি ফিরিয়ে দিবেন তার ইজ্জত? একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষকগোষ্ঠী নিজে নিজেই ওএসডি হয়ে বসে আছে, সাবমেরিনের মতো, চোরের মতো বিভাগে আসে যায়, কেরানীর মতো মাথা নীচু করে, নীচু স্বরে ফিসফিস করে কথা বলে। তার সামনে কেউ গুলি করলেও সে বলে, আমি কিছুই দেখি নাই! কেন সে কিছু দেখে না? তার উত্তর আপনি দেন দেখি? কোন কোন শিক্ষকের পিছনে পঙ্গপালের মতো জুনিয়র শিক্ষকরা ঘুরে বেড়ায় কেন, তা কি কখনো জানতে চেয়েছেন? যে সময়টাতে সে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শিখবে, ঠিক সেই সময়টাতেই আপনি তাকে চোরাবালিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। দালালী শিখাচ্ছেন, শর্টকাট পথ বাতলে দিচ্ছেন। সে কি আপনাকে র্যাঙ্ক এনে দিবে? শিক্ষকদেরকে চোর বানাচ্ছে কারা? জানেন না আপনি? বলেন দেখি নামগুলো? রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে শিক্ষক মারা যাচ্ছে কোটি টাকার গাড়ির নিচে চাপা পড়ে! যার গাড়ির নিচে চাপা পড়লেন শিক্ষক, হয়ত সেই গাড়ির মালিক উনারই কোন এক গুণধর ছাত্র! এই হলো শিক্ষকের মর্যাদা? একটা পেপার পাবলিশ করতে লাগে ২০০০ ডলার। ভিক্ষা মাগতে হয় বিদেশীদের নিকট বা উনাদের নাম দিতে হয় পেপারে! আর এই শিক্ষক এনে দিবেন আপনাকে র্যাংক?
বাপের জায়গা বেইচ্চা গবেষণা করবো? হলে হলে ভিসি/প্রো-ভিসি গিয়া ছাত্রলীগ/ছাত্রদল ঠেকাবে? কাম টু সেন্স ম্যান! এই দর্জির জাতের কোন প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ৫০০ সফল প্রতিষ্ঠানে জায়গা পাইছে? আসল জায়গায় চুলকানোর ক্ষমতা না থাকলে মানুষ এসব ট্রল করে। সমাজবিজ্ঞানে এটাকে ব্লেইম বা স্কেপগোট থিওরি বলে। ভিসি ঠিকই বলেছেন। পঞ্চাশ বছরের জঞ্জালে ভরা এদেশের উচ্চশিক্ষা কারো একার পক্ষে কি সমাধান করা সম্ভব? একটু চিন্তা করে দেখেন। এতোই যখন চুলকানি তাহলে আপনার ১০০,০০০ বাচ্চাকে পাঠাচ্ছেন কেন আমাদের কাছে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য? সিটতো আমাদের মাত্র ২০০০? যান না, র্যাংক ইউনিভার্সিটিতে পাঠান না, কেউ কি বাধা দিচ্ছে আপনাকে? এলুমনাই হিসেবে কয় পয়সা দিছেন জীবনে আপনার নিজের আলমা ম্যাটারকে? সবাই বলছেন কিছুই শিখি নাই, কিছুই শিখি নাই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তো কিছুই যখন শিখেন নাই, তখন আবার একই ভুল করছেন কেন নিজের সন্তানকে একই গার্ভেজ জায়গায় পাঠিয়ে? কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি আপনাকে শিক্ষিত করে তুলতে পারে? আমরা কি কিছু না শিখেই বিশ্বের প্রথম দুই ডজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদবির, চেতনা, রাষ্ট্রিয় ভিক্ষা ছাড়াই কম্পিটিটিভ সিলেকশনে গিয়ে পিএইচডি করে এসেছি? আমি ক্যামনে শিখলাম, আপনি ক্যামনে শিখেন নাই একই ব্যাচে পড়ে? আমার ছাত্ররা সারা বিশ্ব দখল করে ফেলতেছে! ওরা কিছুই শিখে নাই আমাদের কাছ থেকে?
কিছু শিখি নাই কিছু শিখি নাই এর মানে কি? আমাদের/উনাদের বাপদেরকে যে ক্যাম্পাসে দেখেছেন এটাই তো বড় শিক্ষা! চমস্কি কী শিক্ষা দিবে? রাজ্জাক স্যার কী শিক্ষা দিবে? নাজমুল করিম কী শিক্ষা দিবে? সাখাওয়াত আলী কী শিক্ষা দিবে? গোবিন্দ চন্দ্র দেব কী শিক্ষা দিতেন? হুমায়ুন আজাদ কী শিক্ষা দিবে? অজয় রায় কী পড়াবে আপনাকে? আহমেদ শরীফই বা কী পড়াবে আপনাকে? আপনি শুধু উনাদেরকে দেখবেন আর নিজেকে পরিবর্তন করবেন! নাবালক থেকে সাবালক হবেন। দেশের কথা ভাববেন। খালি নিজের পুতের কথা ভাববেন না! মেরুদণ্ড ভেঙে ফকিরের মতো একটা ঝোলা কাঁধে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন অধ্যাপক বাসা ভাড়া, ট্যাক্স কেটে বেতন পান এই ৬০/৭০ হাজার টাকা। বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসে প্রায় ৮০% শিক্ষকের কোন ব্যক্তিগত গাড়ি নাই। র্যাংঙ্ক চাই, খালি র্যাংঙ্ক! এতো অধঃপতনের মধ্যেও এদেশে অন্তত ৫০ শতাংশ শিক্ষক আছেন যারা সিম্পলি ওয়ার্ল্ড ক্লাস। এরা একদিন ঘুরে দাঁড়াবেই। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা বেঁচে আছি!
আমরা তাঁর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাথে একমত না-ও হতে পারি। কিন্তু যারা আপনাকে র্যাংক এনে দেবেন, তাদের আমরা কতটা কদর করছি, তার একটা ছোট্ট বিশ্লেষণ তিনি দিয়েছেন। সহজ কথায় র্যাংক আনতে টাকা লাগবে। আর এজন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। লাগবে সঠিক ইম্পলিমেন্টেশন। প্রজেক্ট করার উদ্দেশ্য যদি হয় সরকারি টাকা লুটপাট ও দুর্নীতি, তাহলে দরকার নেই। আমরা দেখেছি, মিড ডে মিল প্রজেক্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়েছে। ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি শিক্ষাখাতকে প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তার আওতায় না আনার বিষয়টি। আমাদের পরামর্শ, অন্য মেগা প্রজেক্ট দু-একটা কমিয়ে হলেও শিক্ষা ও গবেষণায় মেগা প্রজেক্ট নেয়া জরুরি ও সময়ের দাবি। শুধু উচ্চ শিক্ষায় নয়, প্রাথমিক শিক্ষায়ও এমন দু-একটি মেগা প্রজেক্ট নেয়া দরকার। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে মেধাবী চাকুরিপ্রার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হতে লাইন ধরবেন, যদি পদমর্যাদা (গ্রেড) ও বেতন কাঠামো (স্কেল) আকর্ষণীয় হয়। তখন ঢাবিসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্ট ক্লাস পাওয়া মেধাবীদের এমনকি পিএইচডিধারীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এবং একদিন শিক্ষা সেক্টরের চেহারাই হয়তো বদলে যাবে। তৈরি হবে একটি মেধাবী নতুন প্রজন্ম। দেশপ্রেম কিংবা বিবেকের তাড়নায় এখন যদি কেউ ঢাবি থেকে পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন, তাকে শুনতে হয়, ‘কোথাও জায়গা হয়নি তো, তাই প্রাইমারী স্কুলে!’ এমন বেদনাদায়ক ট্রলের শিকার আর কতদিন হবেন দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষকরা?
কদিন আগে দেখা হলো অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. সাদেকের সঙ্গে। প্রায় ঘণ্টাখানেক কথা হলো তার সাথে র্যাংকিং ও সেদেশ-এদেশের শিক্ষা নিয়ে। তিনি অবাক হলেন না আমাদের ঢাবি বা বুয়েটের র্যাংকিং পশ্চাদপদতা নিয়ে। বললেন, প্রায় শতাধিক কমপোনেন্ট থাকে, যেগুলোতে নাম্বারিং করে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং ফিক্সড করা হয়। আমরা কয়দিক থেকে এগিয়ে?যেহেতু দেশটি ধনী দেশ নয়, সেহেতু আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টদের আকর্ষণ করতে তাদেরকে গবেষণা সুবিধা দিতে এবং স্কলারশিপ দিয়ে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের অপারগতা আছে। অধিকন্তু এই সমস্যার কারণে দেশের মেধাবীরা পাড়ি জমায় র্যাংকিংয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোয়। তিনি বলেন, তাদের শীর্ষস্থান দখলে আমাদেরও সামান্য অবদান আছে। আমি বলব, র্যাংকিং র্যাংকিং করে ঢাবি বা বুয়েটের বিশ্বমানের শিক্ষকদের বিরক্ত করার পরিবর্তে সরকারেরই দায়িত্ব র্যাংকিংয়ে সাফল্যের জন্য সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
লেখক : সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন