শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

রায়পুরে ঋণের জালে বন্দি জীবন

এ কে এম ফজলুল হক, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ী, জেলে দরিদ্র ও চাষি পরিবারগুলো ঋণের জালে বন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চল ও জেলে পল্লীর হাজার হাজার পরিবার এনজিও, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে এখন জিম্মি। গ্রামীণ সমাজ উন্নয়নের নামে এসব দাদন ব্যবসায়ী এবং এনজিও প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর তাদের ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে মানবেতর জীবনযাপন এমনকি ভিটেমাটি হারাচ্ছেন অসংখ্য পরিবার। নাম সর্বস্ব সাইনবোর্ডধারী অনুমোদনহীন কিছু এনজিও ও সমিতি এসব ব্যবসা চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের নেই তেমন কোনো নজরদারী।

রায়পুর উপজেলায় শিল্প-কলকারাখানা ও বৃহৎ কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ মানুষ রিকশা-ভ্যান চালানো, মাছ ধরা, কৃষিকাজ, খুচরা মালামাল বিক্রয়, মুদি মালামাল, পোশাকের দোকান ইত্যাদি পেশার ওপর নির্ভরশীল। এসব ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মূলধন না থাকায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সমিতির দারস্ত হতে হচ্ছে তাদের। এদিকে করোনাকালীন সময়, ব্যবসা মন্দা এবং বিনিয়োগ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেচা-বিক্রি না হওয়ায় দিন দিন ঋণের বোঝা চেপেই বসেছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী, জেলে ও প্রান্তিক চাষিদের উপর। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই এনজিওদের ঋণ সেবার নামে সর্বশান্ত করার পাঁয়তারা। এক এনজিওর কিস্তি শেষ হতে না হতেই এসে যায় অন্য এনজিওর কিস্তি। একটি সংস্থার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে তারা অন্য সংস্থার ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা দলবেঁধে বাড়িতে এসে টাকা আদায় করে নেয়। অনেকে আবার ভয়ভীতি দেখায়, করে অসৌজন্যমূলক আচরণ, দেখা দেয় বাগ-বিতন্ডা। ইতোমধ্যে অনেকে ঋণ শোধ করতে না পেরে ভিটেমাটি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গোপনে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
জালিয়ার চর, মেঘনাবাজার এলাকার জেলে মো. আব্দুল আলী ও সেলিম হোসেন বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে একটি এনজিও থেকে ঋণ নেই। ঐ ঋণের টাকা দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকা তৈরি করি। কিন্তুু মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমে আগের মত জালে মাছ না পড়ায় ঋণের বিপরীতে সুদের টাকাও পরিশোধ করতে পারছিনা। ঐ এলাকার কয়েকজন জেলেও একই সুরে কথা বলেছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় একই রকম তথ্য। আলাপকালে চান্দারখাল ও পুরান বেড়ি এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বেচাকেনা কম হওয়ায় আর ঋণের সুদ দিতে না পারায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এরকম অনেক ব্যবসায়ী ঋণের বোঝা বহন করতে না পেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অন্যত্র কাজের খোঁজে চলে গিয়েছেন বলে এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেকে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনজন দাস বলেন, ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলের মানুষ এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ী দ্বারা জিম্মি এ বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে ঐ অঞ্চলে দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কিছু এনজিও অধিক সুদে ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন