পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিন ২৬ জুন থেকে সড়কপথে ঢাকা থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আসতে শুরু করে পর্যটকবাহী যানবাহন। এদিকে পর্যটকদের ব্যাপক আগমনে গত একমাসে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে ঘিরে হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউজ, খাবার হোটেল, রাখাইন মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ীক মন্দা কাটিয়ে হাসি ফুটতে শুরু করেছে।
পটুয়াখালী বাসমালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি দুলু মৃধা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে পটুয়াখালী জেলা থেকে প্রতিদিন সকাল-রাতে মিলে ৯০-১০০টি বাস রাজধানীতে যাতায়াত করতো। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন ১৪০টি পরিবহন ঢাকা যায়, ঈদের সময় সড়কপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকসহ জেলামুখী বাসিন্দাদের ব্যাপক চাপ থাকায় এ সংখ্যা দেড় শতাধিক ছাড়ায়।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রটারী এম মোতালেব শরীফ জানান, ইতোমধ্যে পায়রা সেতু চালু হয়েছে, পদ্মা সেতু চালুর ফলে পর্যটকরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছতে পারছেন। ফলে মানুষ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টায় সময় ব্যয় করে কক্সবাজার না গিয়ে স্বল্প সময়ে কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছেন।
তিনি আরো জানান, সাগর কন্যা কুয়াকাটায় ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল। ঈদের ১১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত কুয়াকাটার অধিকাংশ হোটেল মোটেলগুলোর রুমগুলো বুকিং হয়ে যায়। এবারে আমরা লাখ করেছি ব্যক্তিগত ট্রান্সপোর্ট নিয়ে ব্যাপক পর্যটক কুয়াকাটায় আসেন, তারা প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোকে বেশি পছন্দ করেন। তবে এবারে পদ্মা সেতু কারণে ঈদে এত পরিমাণ পর্যটক আসে যা কোনো শ্রেণির হোটেলেই কোনো রুম খালি ছিলনা, এমনকি পর্যটকরা হোটেল মোটেলে স্থান না পেয়ে আবাসিক বাসাবাড়িতেসহ সাগর পাড়ের বেঞ্চে রাত কাটাতে বাধ্য হয়। এদিকে পর্যটকদের এ আগমন বর্তমানে শুক্রবার ও শনিবার ছাড়াও থাকছে শুধুমাত্র সড়কপথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ার কারণে।
তিনি আরো জানান, পর্যটকদের আকর্ষীত করতে কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত সাইটট্যুরের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষীত করতে মেরিনড্রাইভসহ অন্য সাইটট্যুরসহ ইন্টারকানেকশন রোড এবং ফোর লেনের দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করেন।
পযর্টনকেন্দ্র কুয়াকাটায় ট্যুরিস্টদের ছবি তোলার কাজে নিয়োজিত কুয়াকাটা সীবিচ ফটোগ্রাফার সমিতির সদস্য ইমরান হোসেন জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ছুটির দিন ব্যতীত অন্যান্য দিন ২শ’ টাকা রোজগার করাই কঠিন হয়ে যেত। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে এখন প্রতিদিনই কম-বেশি পর্যটক আসছেন, যার কারণে প্রতিদিন গড়ে এখন ৫ শ’ টাকা রোজগার করতে পাড়ছি ছবি তুলে। ঈদের সময় এক সপ্তাহ প্রতিদিনই গড়ে খরচ বাদ দিয়ে ২ থেকে তিন হাজার টাকা রোজগার করতে পেরেছি।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে ২৬ জুন থেকে আজ ২৬ জুলাই পর্যন্ত পটুয়াখালীর প্রবেশমুখ পায়রা সেতুতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার অধিক টোল আদায় হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগের দিন গত শুক্রবার পটুয়াখালীর পায়রা সেতুতে টোল আদায় হয় ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯১০ টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের গত শুক্রবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকায়। এবারে ঈদের ছুটি শুরুর পর থেকে পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে ব্যাপক যানবাহন পটুয়াখালীতে আসছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন