শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

আহরন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরই বঙ্গোপসাগরে ইলিশের সমারোহ

৬৫ দিনের বেকার সময় কাটিয়ে জেলেদের মুখে হাসি

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২২, ৯:৪৪ এএম

মৎস্য আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর পরই বঙ্গোপসাগরের বেশীরভাগ এলাকা যুড়ে এখন ইলিশের ব্যাপক প্রচুর্য। ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। টানা দু মাসের বেকার সময় কাটিয়ে সাগরে জাল ফেলে জেলেদের মরিনন বদন উজ্জল হতে শুরু করেছে। প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সব ইলিশ মোকামগুলো। বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের খুচরা বাজারেও গত দুদিনে ইলিশের সরবারহ বেড়েছে যথেষ্ঠ। দামেও কিছুটা ইতিকবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরিশালেল খুচরা বাজারগুলোতে ১ কেজি সাইজের ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকা থেকে ইতোমধ্যে ১২শ টাকায় নেমে এসেছে। ১ কেজি নিচের সাইজের ইলিশ বিক্রী হচ্ছে প্রতি কেজি ৯শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। ৮শ গ্রাম সাইজের গুলো বিক্রী হচ্ছে ৯শ টাকা কেজি।
প্রতিদিনই আলীপুর-মহিপুর, গলাচিপা, পাথরঘাটা, পাড়ের হাট, চর মোন্তাজ, ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি সহ সাগর পাড়ের আরো বেশ কিছু মোকাম থেকে বরফ বোঝাই করে ছোট বড় ট্রলার ছুটছে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরনে। এসব ট্রলার ১০-১২ দিনের জন্য বরফ সহ জেলেদের খাবার নিয়ে সাগরে গেলেও গত তিন দিনেই বেশ কিছু ট্রলার ইলিশ বোঝাই করে মোকামে ফিরে এসেছে। মহিপুর-আলীপুর ও গলাচিপার একাধীক জেলে ও আড়তদার জানিয়েছেন, ‘এবার ইলিশের সাইজ ভাল। সাগর থেকে ৮শ গ্রাম থেকে ১২শ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ নিয়ে ফিরতে শুরু করেছে জেলেরা’।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ‘দেশের উপক’লীয় তটরেখা এবং সমুদ্রের ২শ নটিক্যল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা’র ১ লাখ ১৮ হজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের প্রায় সর্বত্রই ইলিশের বিচরন রয়েছে’। তবে দূর্যোগপূর্ণ মৌসুম বিধায় বর্তমানে দুবলা পয়েন্ট থেকে ভোলার মনপুরার ভাটিতে ঢালচর ও চর কুকরী-মুকরী হয়ে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তি সাগর এলাকা পর্যন্ত জেলেরা জাল ফেলতে পারছে। এসব এলাকাতেই ঝাকে ঝাকে ইলিশ উঠে আসছে জালে।
আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগে পরে মূল প্রজনন কালেল ২২দিন সহ ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরেও দেশে ইলিশের সহনীয় আহরন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনের ওপরে। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার টন বেশী। উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৬৮%। দেশের অভ্যন্তরীন, উপক’লীয় ও সাগর এলাকায় আহরিত ইলশের ৭০ ভাগের উৎপাদন ও আহরনই ছিল দক্ষিণাঞ্চলে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন ১৯৮৭Ñ৮৮ অর্থ বছরে ১.৮৩ লাখ টন থেকে এখন ৫.৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে। আর এ কারণেই আমাদের সাগর এলাকায় আহরন নিষেধাজ্ঞার সময়ে ভারতীয় জেলেরা অনেক সময়ই নির্বিঘেœ মাছ লুটে নেয়।
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদকে সমৃদ্ধ করতেই মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১৫ সাল থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে এবং ২০১৯ সাল থেকে সব মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রেই ৬৫ দিনের মৎস্য আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশের সামুদ্রিক এলাকায় মাছের উৎপাদন প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টন থেকে ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রায় ৬.৮৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে তা আরো বৃদ্ধির আশা করছেন মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের মাঝে যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি হয়েছিল, তা ক্রমে কেটে যাচ্ছে। তাদের মতে, কোন সম্পদই অফুরন্ত নয়। তাই আমাদের সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে বঙ্গোপসাগরে অতি আহরন নিয়ন্ত্রনের কোন বিকল্প নেই।
এদিকে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ সালে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশের লার্ভা নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে গিয়ে পরিপক্কতা অর্জন করে। বঙ্গোপসাগরে ১২-১৮ মাস বিচরন করে পরিপক্ক হয়েই নিকট অতীতের জাটকা প্রজননক্ষম পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিনত হয়ে আশি^নের বড় পূর্ণিমার সময় স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।
সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে চিঞ্হিত করে দক্ষিণাঞ্চলে ৬টি অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন