শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলায় আ.লীগ দায়ী: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ৪:৪১ পিএম

নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর-দোকান পাট-মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করেছে বিএনপি

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা দলীয় তদন্ত টিমের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ তদন্ত টিম সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আক্রান্ত পরিবার এবং স্থানীয় জনসাধারণের বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীতি হয়েছে যে, ঘটনাটি নিশ্চিতরুপে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিয়ের নগ্ন বহির্প্রকাশ। তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যেই সংখ্যালঘুদের একটি সহজ উপাদান হিসেবে করা হয়। যেটা অন্যান্যা জায়গার মতো নড়াইলেও ঘটেছে।”

‘‘ নড়াইল আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ‍সুভাষ বসু-তিনি ২/৩দিন পরে ওখানে যান। ওখানের উপজেলা চেয়ারম্যান তিনিও সম্ভবত যান নাই। প্রশাসন নির্লিপ্ত এবং এটা সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমরা সেখানে গিয়ে তা সরেজমিন দেখে,ক্ষতিগ্রস্থসহ সাধারণ মানুষের কথা বলে এটা প্রত্যক্ষ করেছি।”

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ নড়াইলের এই ঘটনার সাথে সরকারই দায়ী। প্রতিবেদনে তার পরিস্কার করে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই যারা সংখ্যায় কম সেই সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন-হামলা-লুটপাট-ভায়ংচুরের এই ঘটনাগুলো বেড়েছে এবং তাদের সম্পত্তির বেশির ভাগ মালিক কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।”

‘‘ আমরা মনে করি যে, গণতন্ত্র এই ঘটনাগুলো ঘটছে অর্থাত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে তাদের গৃহ থেকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের সম্পদ দখল করা হচ্ছে তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে আছে।”

নড়াইলের ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘‘ দূ:খজনক হচ্ছে যে, আজ পর্যন্ত এই ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দেখতে পাইনি।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সার) কে কটুক্তি করে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই সকালে নড়াইলের দিঘলীয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৩ জুলাই তদন্ত টিম নড়াইলের দিঘলীয়া সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে সরজমিন তদন্ত করে।

তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘ ১৫ তারিখ হঠাত করে মাগরেবের নামাজের পরে প্রায় দুই-তিন‘শ উতশৃঙ্খল লোকজন সাম্প্রদায়িক শ্লোগান দিয়ে সাহাপাড়াতে প্রবেশ করে। সেখানে ১০/১২ বাড়ি ঘর ভেঙে নচনচ করে, সেখানে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হয়, আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মন্দিরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, মন্দিরের প্রতিমা ভাঙে। তার অদূরেই পুলিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। পুলিশের নাকের ঠগার উপরে এই ঘটনাটা ঘটলো।”

‘‘ ওই গ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান। এই ঘটনায় বাড়িঘর ভাংচুর হচ্ছে, দরজা ভেঙে ফেলছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে অথচ এরা(আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান) নির্বিকার। কারণ যে চেয়ারম্যান হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। আর পাশের গ্রামের আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী সে পরাজিত হয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। এখন দ্বন্দ্বটা শুরু হয় বিদ্রোহী(স্বতন্ত্র) প্রার্থী পাস করলো কিভাবে? দিঘলীয়া গ্রামের ৭০% ভোট হিন্দু ভোট। হিন্দুরা ভোট দিয়েছে সেই প্রার্থীকে। কেনো দিলো ভোট? এখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত।”

বর্তমানে নড়াইলের দিঘলীয়া গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ এখানে ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই অঞ্চলটাই ছিলো যশোর-নড়াইল-বগুড়া মুক্তাঞ্চল।ওই সময়েও এখানে এরকম ঘটনা ঘটে নাই। সেই গ্রামের ওপরে এরকম নির্মমতা সেখানকার লোকজন মর্মবেদনায় ভুগছেন।”

‘‘ আমরা পার্টির তরফ থেকে সেখানে কিছু সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব করলে তারা(ক্ষতিগ্রস্থরা) বলেন, আমরা কোনো সাহায্য্ চাই না। আমাদেরকে অনেক সাহায্য দিতে এসেছে আমরা সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণটা হচ্ছে যে, সাহায্য দিয়ে হয়ত আমাদের ঘরটা মেরামত হতে পারে কিন্তু হৃদয়ের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষত মুছে যাবে কিভাবে। সেখানে এখন ভয়াবহ আতঙ্ক, শশ্মানের আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানে একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়ে যেরকম আতঙ্ক বিরাজ করেছে এখন সেরকম আতঙ্ক বিরাজ করছে।”

তদন্ত প্রতিবেদনে ২২ জন ক্ষতিগ্রস্থের বাড়ি-ঘর, দোকান-পাটের তালিকা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দিঘলীয়া রাধা মন্দির, আভরাবাগড়ি সর্বজনীন দূর্গা মন্দির, একাবাড়ি কালি মন্দির, দিঘলীয়া পালপাড়া দুর্গা মন্দির, পালপাড়া গোবিন্দ মন্দির, স্বপন সাহার বাড়ির শিব মন্দির, শশ্মান কালী মন্দির, ঋষিপাড়া চান্দি মন্দির, আখড়া বাড়ি নন্দ মাস্টারবাড়ি দূর্গা মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

ঠাকুরগাঁও এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার নিজের নির্বাচনী এলাকায় রাজবংশী সম্প্রদয়ের মানুষ প্রচুর, এক লক্ষ ৭ হাজার ভোটারই আছেন রাজবংশী লোকেরা। তাদের মধ্যে একজন আমার ছাত্রই ছিলেন তিনি, নাম ছিলো অমর রায়। সে খুব চমকতার একটা কথা বলতো বক্তৃতা দেয়ার সময়ে- আমাদের দেশী ভাষায় হামরা হচ্ছি বিহার দিনের পগরি। মানে দুই-একদিনের পাগরি হচ্ছি আমরা। ওই নির্বাচনের দিন পাগড়ি পরা হয় আর কখনো হয় না। ওই পাগড়ি পরে নৌকাকে ভোট দিতে হয় ৃ”

‘‘ এখানে আওয়ামী লীগ তাদেরকে মনে করে যে তাদের লোক, তারা তাদের সম্পত্তি, তারাই এদের রক্ষক। তারাই যা ভোট-টোট যা কিছু আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। যা কিছু অত্যাচার-নির্যাতন, তাদের সম্পদ লুট করা- এটা আবার তারাই করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে নড়াইলের ঘটনার তদন্ত টিমের সদস্য অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অমলেন্দু দাস অপু ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন