বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আটোয়ারীতে লটারি ও হাউজি-জুয়ায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : এ যেন অন্য এক জনপদ। মাঠে-ময়দানে উন্মুক্ত জায়গা কোথাও নিয়ম নেই হাউজি খেলার। তারপরও আটোয়ারীতে চলছে এই অবৈধ খেলা। জানা গেছে, সরকারিভাবে এটি শুধুমাত্র জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রেসক্লাবের উদ্যোগে তাদের অভ্যন্তরে চলতে পারে। এই খেলা শুধু মানুষকে নিঃশেষ করে না, পাশাপাশি নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলে। স্বচ্ছল মানুষ শুধুই নয়, ফুতুর হয়ে যায় মধ্যবিত্তসহ সকল পেশার মানুষ। লোভনীয় এই খেলায় পুরো এলাকায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নজিরবিহীন এই দুরন্ত খেলাটি মানুষের সঞ্চিত অর্থকেও হাতিয়ে নিয়ে পঙ্গু করে দেয়। ফলে মানুষ বিপদগামী হয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। গত ১৩ নভেম্বর পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নাজমুল হক প্রধান, প্রধান অতিথি হিসেবে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ‘রাশ’ মেলাটির উদ্বোধন করেন। জানা যায়, এই মেলাটি এক সময়ে তার অতীত, ঐতিহ্য হারাতে বসেছিল। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রবীণদের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের কৃতী সন্তান তৎকালীন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী মরহুম মির্জা গোলাম হাফিজ ওই মেলাটিকে উজ্জীবিত করেন। তখন থেকে মেলাটিতে গরু, মহিষ, ঘোড়া, সার্কাস, চিত্ত বিনোদনমূলক সংস্কৃৃতির মাধ্যমে মেলাটি ঐতিহ্য বহন করে আসছিল। কিন্তু যোগ্য ও নেতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তি সৎ মনোভাবের অভাবে মেলাটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসে। কিন্তু গতবারে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দেয়ায় মেলাটি জমে ওঠেনি। এবার অনেক আশা নিয়ে ঐতিহ্যপূর্ণতাকে ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতায় মেলাটির উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু একটি স্বার্থন্বেষী মহল নিজের আখের গোছাতে মেলাটিতে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না করে এই হাউজি খেলা চালু করে। অনেকে বলেন, সৎ মানসিকতা হলে অবশ্যই সার্কাস, শিশু বিনোদনসহ কৌশলীভাবে সেখানে প্রতিদিন বিনোদনমূলক সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান করা যেত। তা না করে সর্বস্বান্ত হওয়া জুয়া, এই হাউজি চালানো হচ্ছে। এ কারণে মেলাটিতে শুরুর দিকে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৯ জন জ্ঞান হারিয়ে আটোয়ারী হাসপাতালে ভর্তি হন। পুলিশ অজ্ঞান পার্টির একজনকে আটক করে চালান দেয়। এই জুয়া খেলাকে প্রাধ্যন্য দেয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বিনোদনপ্রিয় জনগোষ্ঠী দেশের সংস্কৃৃতিকে ধারণ ও লালন করতে পারছে না। ফলে সমাজে অবক্ষয় বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এখানে বাম্পার হিসেবে ৭টি ভারতীয় মোটর বাইক দেয়া হয়। যার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। এই ১০ লাখ টাকার লোভনীয় মোটর বাইক পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে জনগণের পকেট থেকে তুলে নেয়া হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা নির্বিঘেœ। এদিকে ওই মেলায় নানা রঙের নি¤œমানের উপহারসামগ্রী দিয়ে একটি লটারি চালু করা হয়েছে। এসব লোভনীয় অফার দেখিয়ে জনগণসহ স্কুল-কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বিপথে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এই খেলায় ঝুঁকছেন। এতে অভিভাবকরা বেশ চিন্তিত। এই খেলায় দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও ও ডোমার হতে লোক আসছে। এসব জুয়ার টাকা রাতারাতি সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নামে একটি সিন্ডিকেট মহল ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। এব্যাপারে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ ম-লের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, হাউজি চললে আপনারা সাংবাদিকরা কেন বন্ধ করছেন না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনারা না পারলে পুলিশ নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে দিন। লেখালেখি করবেন না। পুলিশ সুপার মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, বিষয়টা আমি দেখি কী করা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন