রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন ও দাম পেয়ে খুশিতে আছেন গোদাগাড়ী কৃষকরা। এতে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে উৎসবের আমেজ, নবান্ন, পিঠ পুলির আনন্দ, মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন অনেকে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমে আবহাওয়া অনুুুকূলে থাকায় ধানের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ১৮৪ দশমিক ৮৭ বর্গমাইল। আবাদি জমির পরিমাণ ৩৫ লাখ ৭শ হেক্টর, ব্লকের সংখ্যা ২৭টি, মৌজার সংখ্যা ৩৯৪টি, গ্রাম ৪৩০টি, লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার, ৫৫ জন (প্রায়), পুরুষ ১ লাখ, ৬৫ হাজার ৬৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৯ জন। শিক্ষার হার ৫২ দশমিক ২৭ ভাগ। কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৭২ হাজার ২৮০ জন। চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় এবার আমন ধানের চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ীতে যে সকল ধান চাষ হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গুটি স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫৬, ব্রি-৫৭, ব্রি-২৮, কিছু আতপসহ কিছু পুরাতন দেশি জাত রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ধান উঠার সাথে সাথে কৃষকরা ধানের বাজারে ধান বিক্রয় করতে গিয়ে ধানের দাম বেশ ভালো পাওয়ায় খুশ মেজাজেই আছেন কৃষক। গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে জানা যায়, ধানের আড়তগুলোতে কৃষকরা গুটি স্বর্ণা-৮২৫ টাকা, সুমন স্বর্ণা- ৮৩০-৮৩৫ টাকা, লাল স্বর্ণা- ৮২০ টাকা, ব্রি-৪৯- ৮৩৫ টাকা, ব্রি-৫১- ৮২৫ টাকা দরে বিক্রয় করছেন এবং ব্রি-২৮, জিরা সাইল- ৯২০-৯৪০ টাকা দরে বিক্রয় করছে। গোদাগাড়ী বাজারে ধান বিক্রয় করতে আসা গোদাগাড়ী পৌরসভার মাহশালবাড়ী মহল্লার বর্গাদার কৃষক আলাউদ্দিন জানান, আজকের বাজারে গুটি স্বর্ণা ধান ৮২৫ টাকা দরে বিক্রয় করলাম। এ দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা লাভবান ও খুশি থাকবেন বলে জানান। এক বিঘা জমি ধান চাষ করতে সেচ খরচ থেকে শুরু করে ফসল উঠা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে, ৫-৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ১৮-২২ মণ ফলন হচ্ছে, সেই হিসেবে কৃষকরা সব খরচ বাদ দিয়ে এক বিঘা জমির ধান বিক্রয় করে প্রায় ৯ হাজার টাকা সঞ্চয় করতে পারবে বলে জানা যায়। উপজেলার পুষু-া গ্রামের কৃষক আশরাফুলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এবার ৭ বিঘা জমি চাষ করেছি প্রতি বিঘায় জমিতে ৫ হাজার টাকা খরচ হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ৭ বিঘা জমিতে ১২৬ মণ ধান মাড়াই করে ঘরে তুলেছি। এই ধান ৮২৫ টাকা দরে বিক্রয় করলাম। সব খরচ বাদে আমি ৬৮ হাজার ৯৫০ টাকা সঞ্চয় করতে পারব। এই নিয়ে আমার ছেলেমেয়ে ও পরিবারের খরচ চালাতে সুবিধা হবে। কৃষক মানুন জানান, বর্তমানে যে ধানের বাজার প্রত্যেক কৃষকই খুশি আছেন। ধানের এই দাম যাতে কমে না যায় সেজন্য সরকারের প্রতি নজরদারি করার অনুরোধ জানান। ধানের আড়তদার আব্দুল্লাহ্ বলেন, বর্তমানে আমন ধানের যে বাজার চলছে এই ধানের দাম পেয়ে কৃষকরা বেশ খুশিতেই আছেন। ২০০৮ সালের দিকে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ধানের দাম ৮০০-৮৫০ টাকা হয়েছিল সেই সময়ে কৃষক বেশ খুশিই ছিল। দীর্ঘদিন পর সেই অবস্থা এ মৌসুমে ফিরে এসেছে। ধানের মোকামগুলোতে বেশ চাহিদা থাকায় আমরাও ধান ক্রয়-বিক্রয় করে বেশ লাভবান হচ্ছি। একটি কুচক্রী মহল কৃষকদের বিভিন্নভাবে অপপ্রচার করত যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে ধান, গমসহ কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের নায্যমূল্য পায় না। ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের কাছে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার তৌফিকুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধানের তেমন রোগ-বালাই ছিল না। আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, তাই ধানের ফলনও বিঘাপ্রতি ১৮-২২ মণ হয়েছে। আর ধানের দাম পেয়ে কৃষকরাও লাভবান হবেন বলে জানান। একই মন্তব্য করেন উপÑসহকারী কৃষিকর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন