শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

শিশুর অধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হেলেনা জাহাঙ্গীর : আমাদের দেশে অব্যাহতভাবে শিশুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে চলেছে। হরণ করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে শিশুদের অধিকারও। বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও এখনও বহু দেশে তা চালু আছে। আমাদের দেশেও শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
এখনও শিশুরা বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, বিভিন্ন যানবাহনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। অথচ শিশুদের লেখাপড়াসহ তাদের অন্নবস্ত্র ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা থাকা খুব জরুরি। এই শিশুরা যদি পড়ালেখা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও অন্নবস্ত্রের নিশ্চয়তা না পায় তারা কীভাবে বেড়ে উঠবে? শিশুদের এসব অধিকার নিশ্চিত করা দূরে থাক, আমাদের এ নিষ্ঠুর সমাজে তাদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে, ছেঁকা দিয়ে, এমনকি নিভৃত ঘরে বন্দী করে রেখে দানা-পানি না দিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটছে আমাদের দেশসহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশে। এ যে কতবড় লজ্জাজনক তা ভাবলে শিউরে ওঠা ব্যতীত কোনও করণীয় থাকে না অনেকেরই। এ পরিস্থিতি  থেকে শিশুদের রক্ষা করা খুব জরুরি।
শিশুদের মানবাধিকার এবং সকল শিশুর জন্য যেসব অধিকার অর্জন করতে হলে সব দেশের সরকারকে যে নিরিখগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে সেগুলো খুব সংক্ষেপে অথচ সম্পূর্ণভাবে বিবৃত হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে : এটি হচ্ছে শিশু অধিকার সনদ। এ সনদ ইতিহাসের সবচেয়ে সর্বজনীন মানবাধিকার দলিল। তাই এ দলিল মানবাধিকারের সর্বজনীন প্রয়োগ অন্বেষায় অনন্যভাবে শিশুদেরকে মধ্যমণি করে তুলেছে। দলিলটি অনুমোদনের মাধ্যমে জাতীয় সরকারগুলো শিশুদের অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে এবং এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের দায়বদ্ধ করে তুলেছে।
বৈচিত্র্যপূর্ণ আইনব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে  তৈরি শিশু অধিকার সনদটি সর্বজনীনভাবে গৃহীত কিছু অবিনিমেয় নিরিখ ও দায়দায়িত্বের সমাহার। এতে বর্ণিত রয়েছে শিশুরা সর্বত্র বৈষম্যহীনভাবে ভোগ করতে পারে এমন কিছু মৌলিক মানবাধিকার: বেঁচে থাকার অধিকার; পূর্ণ মাত্রায় বিকাশের অধিকার; কুপ্রভাব, নির্যাতন ও শোষণ থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার; এবং পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে পুরোপুরি অংশগ্রহণের অধিকার। সনদে বর্ণিত প্রতিটি অধিকার প্রত্যেক শিশুর মানবিক মর্যাদা ও সুষম বিকাশের জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষা ও আইনগত, নাগরিক ও সামাজিক সেবা প্রদানের মান নির্ধারণের মাধ্যমে এ সনদ শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে।
এছাড়া আমাদের অনেক শহর ও বন্দর ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে শিশুরা একা একা স্কুলে যায়। মাঠে খেলে বেড়ায়। প্রায়শ অভিভাবক থাকেন না শিশুদের সঙ্গে। ফলে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত শিশুদের অপহরণ করে বিদেশে পাচার করে দেয়। জিম্মি করে অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। কখনও কখনও তা আদায় সম্ভব না হলে অপহৃত শিশুদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটানো হয়। আবার শিশুশ্রমের কাজ করতে গিয়ে এরা কখনও কখনও কলকারখানাতে দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যায়।
শুধু তাই নয়, অনেক অবিবেচক শুধু সন্দেহবশত চুরির অভিযোগে শিশুকে ধরে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছে আমাদের এ সমাজে। সিলেটের শিশু রাজন হত্যার ঘটনাটি এখনও আমাদের এ সমাজের দগদগে ক্ষতচিহ্ন হয়ে মানুষের চোখে চোখে ভাসছে। এমন ঘটনা শুধু একটি বা দু’টি নয়। আরও অনেক ঘটছে। এ  সবের কোন  কোনওটি মিডিয়ার বদৌলতে বিচারের আওতায় এলেও অনেক ঘটনা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়। বিচারের দোরগোড়ায় যেতেও পারে না শিশু অধিকার হরণসহ নির্যাতনের অনেক ঘটনাই। নির্যাতনের ফলে অপমৃত্যুর শিকার শিশুর অভিভাবকরা অনেকে জানেনও না এর বিচারের জন্য কোথায় এবং কিভাবে যেতে হয়।
যাই হোক, বর্বর অমানবিক শিশুনির্যাতন সভ্য সমাজে চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজকর্মী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। শিশুর অধিকারহরণ কিংবা এদের ওপর জুলুম-নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সবাইকে। শিশুর অধিকার হরণ কিংবা কোনও অমানবিক ঘটনা দেখলেই তা অবিলম্বে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে খবর দিয়ে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউেন্ডশন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন