আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় তৈরি প্লাস্টিক, সিলভার আর স্টিলের পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। ভালো নেই মৃৎশিল্পীরা। মাটির তৈরি পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ায় পুঁজি নেই এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের হাতে। অনেক কষ্টে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন হাতেগোনা কয়েকজন মৃৎশিল্পী পরিবার। এমনই একটি পরিবারের সদস্য, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ষাটশালা গ্রামের কুমারপাড়ার গোপাল পালের স্ত্রী মনি রানী পাল। তিনি জানান, এই কাজ করে ৬ জনের সংসারে কোন রকমে টিকে আছি। বর্তমানে একটি পাতিল তৈরি করতে খরচ হয় ১২ টাকা। আমরা পাইকারী বিক্রি করি ১৫ টাকা। দৈনিক ৩০/৩৫টি পাতিল তৈরি করতে পারি আর এই আয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি, আয় বলতে তেমন কিছুনা। এখন ছেলে মেয়েরা এই কাজ করতে আগ্রহী নয়। আমরাও চাই না ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসুক। ছেলে-মেয়েরা এখন পড়ালেখা করছে, আমরাও চাই তারা যেন এ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশা বেছে নেয়।
এমনি আরও কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মৃৎশিল্পী মৃত লাল মোহন পালের ছেলে ধনু পাল জানান, আগে আশপাশের ডোবা-নালা থেকে মাটি এনে হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করতেন। এখন এই মাটিটুকুও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। মাটির এইসব পণ্য আগুনে পোড়াতে প্রয়োজন লাকড়ি। আর এই লাকড়ির দামও নেই হাতের নাগালে। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মাটির পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকশানের বোঝা দিগুণ হয়েছে। বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য মৃৎশিল্প হারাতে বসার পেছনের গল্প জানান মৃৎশিল্পী সন্ধ্যারাণী পাল।
তিনি জানান, এই পল্লীতে কোনোএক সময় চারশ’ও বেশি পরিবার ছিল মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত। সময়ের পরিক্রমা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই এ পেশা থেকে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি আরও জানান, এক সময় মৃৎশিল্পপল্লীর শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করতেন, হিমশিম খেতেন ক্রেতার চাহিদা মেটাতে। হাটবাজারে মাটির বিভিন্ন পন্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও শিশুদের খেলনা, গৃহসয্যার শৌখিন পণ্যসহ বাহারি পণ্য থাকত কুমারপাড়া এলাকায়। এসব পণ্যে থাকত দৃষ্টিনন্দন আলপনার ছোঁয়াও। কিন্তু আজ এসবই হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। তবে সময়ের পরিক্রমায় মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও পয়ত্রিশটি পরিবার এখনও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও এ পেশায় জড়িয়ে আছেন পয়ত্রিশ পরিবার। অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবারগুলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন