শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজারে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ খাচ্ছে ইজিবাইক

প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে ১৫০-১৬০ মেগাওয়াট, ৬০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ যাচ্ছে ইজিবাইকে

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০২ এএম

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সারাদেশে চলছে লোডশেডিং। কক্সবাজারেও লোডশেডিং এ বিপর্যস্থ জনজীবন। এই সঙ্কটেও কক্সবাজার জেলায় ২৮ লাখ মানুষ ও কলকারখানার জন্য সরবরাহকৃত বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেকই গিলে খাচ্ছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক।

জানা গেছে, কক্সবাজারে প্রতিদিন বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ মেগাওয়াট। তার মধ্যে প্রতিদিন ৬০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ যাচ্ছে ইজিবাইকের (টমটম) ব্যাটারি চার্জে। সচেতন মহলের মতে, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে সীমাহীন যানজট ও বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে জেলাবাসীকে। তবে কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ থেকে বলা হয় ইজি বাইকের চার্জে নয়, বরং বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি হওয়ায় লোডশেডিং এ সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে অতি সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ চাহিদা পূরণে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগ কোনভাবেই প্রস্তুত নয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন হতে যাচ্ছে। তবে ওসব কেন্দ্র থেকে খুব কাছাকাছি সময়ে বিদ্যুৎ পাওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই। সচেতন মহলের মতে সব মিলিয়ে আগামীতে পরিবর্তিত কক্সবাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজ গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এখনই যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেল লাইন চালু হলে এবং সড়ক ব্যবস্থা আরো উন্নত হলে পর্যটক সংখ্যা বহুগুণ বাড়বে। তখন কলকারখানা ও স্থাপনা বাড়বে দ্বিগুণ। সেই পরিবর্তিত কক্সবাজারে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার।

কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুধু কক্সবাজার পৌরসভায় ৫৫ হাজার গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪০ মেগাওয়াট। বর্তমানে প্রতিদিন ৩২-৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রাহকের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমবায় সমিতির আওতায় জেলায় গড়ে প্রতিদিন ১১০-১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ৯০-৯৫ মেগাওয়াট। এত সঙ্কটের পরও বৈধ-অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলায় সহস্রাধিক টমটম গ্যারেজে। যেখানে শুধু কক্সবাজার পৌরসভা ও আশপাশে দুই শতাধিক গ্যারেজে প্রতিদিন ১৫ হাজারের বেশি টমটম চার্জ দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য পৌরসভা ও নয় উপজেলা মিলে আরও প্রায় ২০ হাজারের বেশি টমটমে চার্জ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভা ও উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ১৫ হাজার, টেকনাফ উপজেলায় ৫ হাজার, চকরিয়ায় ৪ হাজার, উখিয়া উপজেলায় ৩ হাজার, মহেশখালী উপজেলায় ৩ হাজার, পেকুয়া উপজেলায় ৪ হাজারসহ নয় উপজেলা মিলে প্রায় ৪০ হাজার ইজিবাইক (টমটম) চালু রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ের তথ্যমতে- গড়ে প্রতিটি গাড়িতে ১.৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন শুধু টমটমে (ইজিবাইক) চার্জ দিতে প্রয়োজন পড়ছে প্রায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শহরের প্রবেশদ্বার লিংকরোড থেকে শুরু করে বাসটার্মিনাল, আলিরজাহাল, সিটি কলেজ এলাকা, এসএমপাড়া, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, কালুরদোকান, পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, কলাতলি, সমিতিপাড়া, বাহারছড়া, গাড়ির মাঠ, নুনিয়ারছড়া, মোহাজের পাড়া, খুরুশকুলসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ শতাধিক গ্যারেজে প্রায় ১৫ হাজার টমটম (ইজিবাইক) চার্জ নিয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একদিকে যেমন অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে তেমনি অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ টমটম চার্জে চলে যাচ্ছে। এতে লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়েই চলছে। এ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক নেতা জহিরুল হক বলেন, কাগজে-কলমে পৌরসভায় ৩ হাজার টমটম চললেও বাস্তবে সাত হাজারের বেশি টমটম চলছে।

কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলী মো. আবদুল কাদের গনি বলেন, শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে বিদ্যুৎ সমস্যা চলছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে আসায় লোডশেডিং একটু বেড়েছে। তিনি বলেন, পৌরসভায় অনুমোদিত টমটমের লাইসেন্স বাতিল করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হবে। তবে আমরা গ্যারেজে ফ্রি-পেইড বিলের মিটার সংযোগ দিয়েছি। ফলে অবৈধ সংযোগ নেই। কক্সবাজার জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জিএম মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান লস্কর বলেন, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় সাত থেকে আটশো গ্যারেজ রয়েছে। টমটমে ৫টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারিতে প্রতিদিন দেড় কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। গ্যারেজের জন্য আলাদা ট্রান্সফরমার দেয়া হয়েছে। তবে গ্রাহকের মোট চাহিদা থেকে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ এর চাহিদা বেশি রয়েছে। এ কারণে ইজিবাইক গ্যারেজগুলোতে এ সময়ের মধ্যে যেন কোনো ইজিবাইক চার্জ দেওয়া না হয় এজন্য সতর্ক করা হয়েছে। যদি এ সময়ের মধ্যে কেউ ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করে তাহলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা হবে।

এদিকে রাস্তার উন্নয়নের কাজ শেষ হয়ে গেলে কক্সবাজার পৌরসভার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) খুব দ্রুত বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবর রহমান। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নতুন করে ইজিবাইক নির্মাণ গ্যারেজগুলো বন্ধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে সচেতন মহল বলছেন, ইজিবাইক দিয়ে প্রায় লাখের বেশি পরিবারের সংসার চলে। তাই এসব নিষিদ্ধ না করে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকগুলোকে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে করা গেলে বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধন করা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন