আমদানি খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে তা কমতে শুরু করেছে। ঋণপত্র খোলার হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিষ্পত্তির হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, জুলাইতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলার, যা জুনের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলার কম। জুন মাসে এলসি নিষ্পত্তি ছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ০৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। বর্তমান অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি কমাকে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে এটারই খুব দরকার। আমদানি কমলে ডলারের বাজারও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। জুলাই মাসে ৫৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই মাসে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৬৮৫ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি কমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ওই মাসে নিষ্পত্তি ৬৫৫ কোটি ডলার। কিন্তু মার্চে এলসি নিষ্পত্তি বেড়ে যায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ। এ সময় নিষ্পত্তি হয় ৭৬৭ কোটি ডলার। এপ্রিলে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয় ৬৯৩ কোটি ডলার। মে মাসে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে হয় ৭২৫ কোটি ডলার। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণপত্র নিষ্পত্তির হার আবার বেড়ে যায়। জুনে ঋণপত্র নিষ্পত্তি ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে হয় ৭৭৫ কোটি ডলার। আগস্টে এ পর্যন্ত ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৯২২ কোটি ডলারের।
গত চার মাস ধরে ডলারের সঙ্কট চলছে। কারণ, আমদানি যে হারে বেড়েছে, রফতানি সে হারে বাড়েনি। এর ফলে অব্যাহতভাবে বাড়ছে ডলারের দাম, আর টাকার মান কেবলই কমছে। এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। বর্তমানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। তবে সব ব্যাংকেই নগদ ডলারের দাম বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি করছে। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে গত মঙ্গলবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১২ টাকায় বেচাকেনা হয়। পরে সেখান থেকে কিছুটা কমেছে। রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়িয়েছে। এরপরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের দাম। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এ কারণে দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন