শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তেল নিয়ে তেলেসমাতি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আগেই সয়াবিনের দাম বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোক্তারা জিম্মি

দেশে তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। সারাবিশ্বে জ্বালানির দাম কমলেও বাংলাদেশে সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এতে করে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, কৃষিসহ সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনের মধ্যেই সরকার দাবি করছে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিপিসির চেয়ারম্যান এ বিএম আজাদ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে সরকার জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দেয় না। সেন্টার পলিসি ডায়লগ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, তেল বিক্রির ৩৬ হাজার কোটি টাকার হদিস নেই। এ টাকা কোথায় গেল জানতে চাওয়া হয়। বিপিসির চেয়ারম্যানের দাবি সরকার ভর্তুকি দেয় না এবং সিপিডির এমন প্রশ্নে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতার বিষয়ে জনগণের কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। জ্বালানি নিয়ে এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোগ্যতেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম বাড়ানোর আগেই ভোগ্যতেল কোম্পানিগুলো বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃতিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি তেল নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও ভোজ্যতেল নিয়ে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তেলেসমাতিতে ভোক্তাদের নাস্তানাবুদ অবস্থা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উপেক্ষা করেই ভোজ্যতেল হিসেবে পরিচিত সয়াবিনের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিন সরবরাহ বন্ধ রেখে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সিদ্ধান্তের আগেই ভোজ্যতেলের বাজারে ফের ভোক্তাদের ‘পকেট কাটা’ শুরু হয়েছে। বাজারে কয়েকটি কোম্পানির তেলের সরবরাহ এরই মধ্যে কমে গেছে। আবার কিছুসংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ী বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে লিটারে ৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন। একইভাবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ডলারের দামটা বেড়েছে। যার জন্য যে সুফল পাওয়ার কথা সেটা পাচ্ছে না। তাহলে কি শিগগিরই দাম সমন্বয় করা হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ট্যারিফ কমিশন শিগগিরই বসবে। ওরা (ব্যবসায়ী) তো একটা দাম দিয়েছে, সেটা জাস্টিফাই কি-না ট্যারিফ কমিশন দেখবে।

বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম কমে ১৯০০ থেকে ১১০০ ডলারে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠায় সংগঠনটি। তবে এ প্রস্তাবে এখনও সাড়া দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরই মধ্যে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে খুচরা বাজারে বাড়তি মূল্যে তেল বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় চাহিদার এক চতুর্থাংশ সরবরাহ করা হলেও অনেক এলাকায় তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় কোম্পানিগুলো। ফলে ভোগ্যতেলের দাম বেড়ে যায়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, ওয়ারী, ফকিরাপুল, কমলাপুর, কারওয়ান বাজার, ঠাঁটারিবাজার ও নিউ মার্কেট এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানে সয়াবিন তেল নেই। কয়েকটি ব্র্যান্ডের তেলের সরবরাহ একেবারে কম। যেসব ব্র্যান্ডের তেল দেখা গেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই পাঁচ লিটারের বোতল। এ ধরনের বোতলের বিক্রিও বেশি। তবে কিছুটা কম দেখা গেছে এক ও দুই লিটারের বোতল। খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করছেন ৯১০ থেকে ৯৪০ টাকায়। বোতলের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯১০ টাকা লেখা থাকলেও এত দিন এগুলো কেনা যেত ৮৯০ থেকে ৯০০ টাকায়। একইভাবে এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। এর গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী বাজারে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কাছাকাছি জায়গায় ব্যবসা করেন। এ কারণে দোকানের নাম না লেখার অনুরোধ করে এক মুদি দোকানি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দু-একদিন পর থেকেই ডিলাররা তেলের সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। তারা এখন বোতলের গায়ে লেখা দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে তেল বিক্রি করছেন।

তবে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়নি বলে দাবি করেন কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের ডিলার সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সিদ্দিক। তিনি বলেন, আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। কারও কাছ থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রæপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। ডিলারদের কমিশন দিয়েই তেল সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো। বোতলের গায়ের দরের চেয়ে বেশি বিক্রি করার সুযোগ তাদের নেই। কেউ এ ধরনের অনিয়ম করলে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করছেÑ এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন