ডলার সাশ্রয় করতে সরকার জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ওই সময়ে শিল্প উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা কম। বাংলাদেশের গড় উৎপাদন সক্ষমতা ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে ৫৫ শতাংশ। লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে কিছু ইউনিট চালু রাখতে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে খরচ আরও বেশি বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে আজও। রাজধানীর কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা করে আবার কোনো এলাকায় দুই ঘণ্টা করেও লোডশেডিং হবে।
রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দার তানবীর আহমেদ বলেন, সারদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। রাজধানীর কোনো এলাকায় এক ঘণ্টা করে আবার কোনো এলাকায় দুই ঘণ্টা করেও লোডশেডিং হবে। কিন্তু অনেক এলাকায় বিদ্যুতের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। কেউ উৎপাদন করতে পারছে না।
জ্বালানি সাশ্রয়ের নামে গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে দিনে একবার ১ ঘণ্টা লোডশেডিং করার ঘোষণা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি বিতরণ কোম্পানিকে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী শিডিউলও ঘোষণা করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু শুরু থেকেই দেশের বেশির ভাগ এলাকায় এ শিডিউল মানা হয়নি। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ডিজেল চালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। পরে প্রয়োজনে লোডশেডিং বাড়ানো হবে। কিন্তু পরের শিডিউল আজো ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু বিদ্যুৎ লোডশেডিং হচ্ছে হরহামেশাই। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই এলাকাভেদে দিনে তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সিলেটে দিনে রাতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) তাদের আওতাভুক্ত বেশির ভাগ এলাকায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের রুটিন করেছে। আবার কিছু জায়গায় দুই ঘণ্টা করেও লোডশেডিং হবে। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাধীন এলাকাগুলোতে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের রুটিন দেওয়া হয়েছে।
ডিপিডিসি লোডশেডিং শুরু করছে সকাল ১০টায়। তবে ডেসকো লোডশেডিং করছে দিন-রাতজুড়ে। শুরুতে এই দুই সংস্থা এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করত। ডিপিডিসি বলেছে, লোড পাওয়ার ভিত্তিতে লোডশেডিং কম বা বেশি হতে পারে । আজ কোথায়, কখন লোডশেডিং হবে, তার তালিকা দিয়েছে সংস্থা দুটি। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত ডিপিডিসি ও ডেসকোর সময়সূচি থেকে জেনে নিতে পারেন কোথায়, কখন লোডশেডিং হবে।বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ১৮ জুলাই।
রাজধানীতে ডিপিডিসি ও ডেসকো এই দুই বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা তালিকা দিয়েছে। ঢাকার বাইরেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকা দিয়েছে। তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সেই তালিকা মেনে চলা হচ্ছে না বলে অনেক গ্রাহক জানিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে। সেখানে লোডশেডিং রাজধানীর তুলনায় অনেক বেশি।
পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের মধ্যেই শিল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ কারণে একেক শিল্প এলাকায় একেক দিন কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প এলাকার ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে। গতকাল কাল শুক্রবার থেকেই নতুন এ তালিকা অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এটি জানানো হয়েছে। গতকাল থেকেই বিভিন্ন শিল্প এলাকার ছুটির নির্দেশ কার্যকর হবে। এর আগে ৭ আগস্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ছুটির বিষয়ে প্রস্তাব করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ীরাও সরকারি এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন ওই বৈঠকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন