বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত হালদা নদী বাংলাদেশের মিঠা পানির মেজর কার্পজাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র থেকে মেজরকার্প (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বিগত দু’বছর (২০২১ ও ২০২২) সালে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে। হালদা নদী জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। গত জুলাই মাসে পরপর তিনটি ডলফিন ও তিনটি ব্রুড কাতলা মাছের মৃত্যুর পর চলতি আগস্ট মাসের গত কয়েক দিন আগেও হালদা নদীর মোবারকখীলের জামতল এলাকার শাখাখাল থেকে ১০ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি মৃত ব্রুড কাতলা মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। মাছটি পঁচে গিয়ে একটি চোখ ভেতরে ডুকে যায় ও অন্য চোখটি বিচ্ছিন্ন ছিল ও দুর্গন্ধ যুক্ত ছিল। মাছটি কিছুদিন আগে মারা গিয়ে পঁচে যায়।
অবৈধভাবে ব্যবহৃত জাল বা বড়শিতে আটকিয়ে মাছটির মৃত্যু হয়। এভাবে এক দিকে মাছের মৃত্যু অপর দিকে ডলফিনের মৃত্যু, উভয়ের মৃত্যর কারণে আজ হালদা বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই পর্যন্ত মোট ৩৮টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে বলে হালদা গবেষকরা জানান। গত মাসে হালদা নদী থেকে ৩টি মৃত মা মাছ উদ্ধার করেছে স্থানীয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন। এই ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মা মাছ মারা যাচ্ছে কয়েক দিন পর পর। এদিকে হালদা নদীর রক্ষার জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাও মা মাছ শিকার করছে। এ ব্যপারে হালদা নদীর উপর পিএইচডি ও এমএস (থিসিস) ডিগ্রিধারী হালদা গবেষক ও পরিবেশবিদ ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান জীববিজ্ঞান বিভাগের ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল উদ্ধারকৃত মা মাছটি মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, হালদা নদীতে অবৈধভাবে জাল ও বরশি ফেলার কারণে মা মাছের এত ঘন ঘন মৃত্যু হচ্ছে। এদিকে নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নৌপুলিশ কর্তৃক সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে এরপরও কেন মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে তার কারণ এখনো জানতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এভাবে মাছের মরণ হলে দেশের অর্থনৈতিক ও মৎস্যা খাতে মহাসংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এদিকে হালদা নদীর মাছ রক্ষার জন্য একটি এনজিও সংস্থাকে দায়িত্ব দিলেও গত ২/৩ দিন আগেও তাদের সদস্যদেরও এ নদী থেকে মাছ ধরার অভিযোগে এক সপ্তাহের জেল দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শহিদুল আলম। এবার সাধারণ মানুষ বিবেচনা করছেন কারা এই হালদা নদীকে রক্ষা করবে। তবে বিশেষজ্ঞ মহল বলেছেন এই হালদা নদীর মা মাছ রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ এলাকার স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে হালদা নদীর ওপর নজর দিলে এই হালদার মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন। হালদা নদীর ওপর মানুষের নানান নির্যাতনের কারণে মা মাছ সময়মতো ডিম দিতেও পারছে না। হালদা নদীর দিকে সরকারের কড়া নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন