মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা ও শত শত একর আবাদিজমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটচ্ছে মধুমতি পাড়ের শত শত মানুষ। কেউ কেউ ঘর ও মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। জমি জমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে। অসহায় অবস্থায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে খোলা স্থানে।
নদী ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বসতভিটা ও গাছপালা মধুমতির গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত ঘরসহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিক্রি করে দিয়েছে গাছপালা। দেখা যায় স্বর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। চোখের সামনে ভিটেবাড়ি মধুমতিতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
ক্ষতিগ্রস্ত একজন কৃষক জানান, এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বাড়ি সরিয়েছি। আমরা দরিদ্র কৃষক পরিবার। এবারও ভাঙনে তাদের বসতবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। দূরে কোথাও নতুন করে বাড়িঘর তোলার সামর্থ নেই। দুঃখ ভারাক্রান্তভাবে এসব কথা বলেন, রেহেনা খাতুন নামে এক গৃহবধূ। তিনি উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামের হাসান কাজীর স্ত্রী। শুধু রেহেনা খাতুনই নয়, এ রকম অগণিত পরিবার একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েও মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকুও রক্ষা করতে পারছেন না। রাক্ষুসী মধুমতি গিলে খাচ্ছে লোকালয়।
উপজেলার উত্তরে চরসেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালিশংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতংক। এর মধ্যে গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুর গ্রামগুলোও ভাঙনের শিকার। এসব গ্রামের মানুষের কাছে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রুপ নিয়ে দেখা দেয় মধুমতি।
মধুমতি নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, স্কুল, বাজার, মন্দির ও অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। নদীপাড়ের শতশত পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। এতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যাও। তাই তাদের দাবি স্থায়ী বাঁধের।
গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি মধুমতি নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। একটা পরিবার পাঁচ থেকে সাতবার বাড়ি সরিয়ে নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। তাই নদীপাড়ের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জি এম রাইসুল ইসলাম জানান, মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা কিছুদিন আগে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক পরিদর্শন করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। খুব দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় গত বছরের ন্যায় জিওব্যাগ ফেলা হবে। ইতোপূর্বে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা পর্যন্ত ৩০০ মিটার এলকায় জিওব্যাগ ফেলা এবং কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এ বছরেও নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন প্রবন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন