শোকের মাস আগস্টে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘শোকের মাস’ হিসেবে মাসব্যাপী দলীয় কর্মসূচি ও কার্যক্রম পালন করে থাকে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন, রাজপথ দখল করার চেষ্টায় অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্ষমতাসীনদের মাঝে। তবে শোকের মাসে বিএনপিকে মোকাবেলা করতে চায় না আওয়ামী লীগ। সেজন্য আগামী মাসের জন্য অপেক্ষা করছেন দলটির নেতারা। এ নিয়ে চলছে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি, হুংকার ও পাল্টা হুংকার। একধিক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতা বিএনপির উদ্দেশ্যে হুংকার দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ কাউকে রাজপথ ইজারা দেয়নি। আগষ্ট মাস চলে যাক। সেপ্টেম্বরে টের পাবেন। তাই আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রাজনীতিতে কী ঘটতে চলেছে তা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্ব মহলে। এ নিয়ে নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান মন্তব্য করছেন।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, হুমকি-ধমকি দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানো যাবে না। আগস্ট মাসটা যাইতে দেন তারপর টের পাবেন কত ধানে কত চাল। গত শনিবার তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে এ হুংকার দেন। নানক বলেন, আমাদেরকে রাজপথের ভয় দেখান? লাভ নেই। নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটুন। নির্বাচনকে মোকাবিলা করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামরিকতন্ত্রকে পদাঘাত করার জন্য এই আওয়ামী লীগই লড়াই করেছে। ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আগস্ট মাসটা যাইতে দেন তারপর টের পাবেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসীরা আবার মাঠে নেমেছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে এবং রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। বিএনপির সমাবেশে আমরা কখনো বাধা দিইনি, দেবো না। তারা নিজেরা নিজেরাই মারামারি করে। কিন্তু যদি পেট্রোল বোমা বাহিনীদের দেখি, তখন কিন্তু আমরা বসে থাকব না, প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
গত শনিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনের নামে কেউ হামলা-ভাঙচুর ও বোমাবাজি করে জনজীবন অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকারের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার অধিকার কারও নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেছেন, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এর জন্য শেখ হাসিনা জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে এতদুর পর্যন্ত যেতে পেরেছে। আগামী দিনে আমাদেরকে সাহসী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সব সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পাশে আমাদের থাকতে হবে। যারা জাতির পিতার হত্যাকারীদের পাশে দাঁড়াবে, খুনিদের মত কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলছে এবং সামনেও চলবে। তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে ঢাকার বাহিরে এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতারাও হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন যেন বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে না নামেন। ফেনীর মানুষকে কষ্ট দিয়ে বিএনপি-জামায়াত কোনো ধরনের নৈরাজ্য করলে তার পরিমাণ ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। গত ১৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে হুংকার দিয়ে তিনি বলেন, ফেনীর মানুষ সুন্দরভাবে চলছে, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। এই সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কেউ নৈরাজ্য করলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের এমন হুংকার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর বিতর্ক, মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সেপ্টেম্বর মাসে হয়তো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দল তথা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলা করতে মাঠে নামার কর্মসূচি পালন করবে। তবে বেশির ভাগ নেটিজেন সেপ্টেম্বর মাসে কী হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন