শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আ.লীগ মনে করে দেশটাকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি’

জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা এখনই জেলে যাওয়ার বিষয়ে ভাবনায় পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এখনো আন্দোলন শুরুই হয়নি। তাতেই জেলের ভয় ধরেছে!

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন জেলে যাওয়ার বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন কেন? আপনি কেন বলেন- ‘পালাবো না, আমরা জেলে যাবো’। এগুলো আরো আগে ভাবা উচিত ছিলো।

দলের বিভাগীয় সমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভাগীয় সমাবেশগুলো দেখে যা মনে হয়েছে, মানুষ সব বাধা উপেক্ষা করে চলে আসছেন। বরিশালের সমাবেশের দুদিন আগে লঞ্চ, যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া। এমনকি খেয়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সাঁতরে পর্যন্ত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন।

সমাবেশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একজন সাধারণ মানুষ যখন বলেন চেষ্টা করতে হবে, এটা আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আমরা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি এই সমাবেশগুলো থেকে। আমাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে। আমরা যে যেখানেই ছিলাম, অনেক বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত আমাদের দল। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করার বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে দ্রুত আলোচনা করা হবে।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনকে কীভাবে দমননীতি এবং মামলা দিয়ে বন্ধ করা যায় সেই প্রচেষ্টা তারা (সরকার) শুরু করেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না, জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এখন অবহেলিত বঞ্ছিত নির্যাতিত মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই মামলা-হামলা করে কোনো লাভ হয়নি, এখনো হবে না। গত ১৫ বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে বিএনপিকে তো দমিয়ে রাখতে পারেননি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের মন্ত্রী বানাতে হবে না, কিন্তু পরিবর্তনটা আনুন, দেশের মানুষকে বাঁচতে দিন। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের প্রধান সংকট একটা রাজনৈতিক দল যারা নিজেদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল মনে করে। এদেশটাকে তারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলেও মনে করে। সেই দল আজকে এই রাষ্ট্রের সমস্ত কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জনগণের যে আশা-আকাঙ্খা ছিল যেটাকে তারা স্বাধীনতার চেতনা বলে। সেই চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধুলিস্যাত করে দিয়ে তাদের যে অপকর্ম, নিজেদের বিত্ত-সম্পদ তৈরি করা, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা, এই কাজগুলোকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে। আমি সবসময় বলি এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। ’৭৫ সালে তারা ১১ মিনিটে সংসদে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছিল। সেখান থেকে তারা এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের ‘বডি কেমিস্ট্রিতে’ দুটো জিনিস। একটা হচ্ছে পুরোপুরিভাবে সন্ত্রাস, আর একটা হচ্ছে চৌর্যবৃত্তি-চুরি। যখনই তারা সুযোগ পায় এই দুটো জিনিসের বাইরে তারা যেতে পারে না। যার ফলে তারা গত ১৫ বছরে দেশটাকে পুরোপুরি একটা সন্ত্রাসী দেশে পরিণত করেছে। অন্যদিকে চুরি বললে কম বলা হয়, এটাকে পুরোপুরি লুটেরা দেশে পরিণত করেছে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ওই সময় বলেছিলেন, এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ না বলে এটার নাম রাখা উচিত নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ‘আমি চারদিকে শুধু চাটার দল দেখতে পাচ্ছি। এত কম্বল আসলো আমার কম্বলটা কোথায় গেলো?’ এগুলো হালকা কথা, কিন্তু সত্য।
গোয়েন্দা সংস্থার উধ্বৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গত ৫ নভেম্বর শুনলাম, সত্য মিথ্যা জানি না- বাংলাদেশে প্রতিটা জেলায় ১০/১২ জন করে মিলিয়নিয়ার পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে আমি বেশি যাচ্ছি না। আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এই ভয়াবহ দানবকে আমরা কি করে সরাবো। যারা সবকিছু দুমরে-মুচরে শেষ করে দিচ্ছে। এখন আমাদের যুগপৎ অথবা জোট যেভাবেই হোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে এদেরকে সরাতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা করবো। আসুন আমরা সবাই মিলে এই দানব সরকারকে সরাতে আন্দোলন করি।

বিভিন্ন দলের মধ্যে কিভাবে ঐক্য হবে সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা আলোচনা করি। আপনারা প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি। সামনের দিনে কি হবে, কিভাবে আমরা এগুতে পারবো। ভবিষ্যত রাষ্ট্র কিভাবে গঠন করবো। আসুন সে বিষয়ে কথা বলি, চেষ্টা করি। আমার বিশ্বাস কোথাও কিছু আটকাবে না।
মহিলা দল নেত্রী সুলতানা আহামেদকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে প্রশ্ন করে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে সুলতানার মুক্তি দাবি করেন।

বরিশালে যাওয়ার পথে ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা ও তার বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন আবার গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে। সাভারে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, মিছিল ছিল না, কিছু ছিল না সেখানে। ডা. সালাহউদ্দিন সাহেবকে (ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি) এক নম্বর আসানি করে প্রায় দেড়শ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অর্থাৎ প্রসেস হ্যাজ স্টার্টেট। আন্দোলনকে কিভাবে হামলা করে, মামলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া যায়। দমননীতি চালিয়ে সেই প্রক্রিয়া এরা শুরু করেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে জনগণের পিঠ কিন্তু দেয়ালে ঠেকে গেছে। জনগণ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এস এম আকরাম, আ স ম আব্দুর রব, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাসনাত কাইয়ূম, নুরুল হক নূর প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন