সিরাজগঞ্জ জেলার নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ও নদী পাড়ের ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও লাগাতরা বর্ষণে নদীর পাড় নেতিয়ে পড়ায় ও দখিনা বাতাস যুক্ত হওয়ায় ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঘুটিয়া, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া, পাঁচঠাকুড়ি, শাহজাদপুরের বিনোটিয়া, চৌহালির এনায়েতপুর, খাসকাউলিয়া এলাকায় নদী ভাঙনে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বসত ভিটাসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকা মনুষ নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করছে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারা সর্বশান্ত মানুষ সরকারি জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। রোদ ও বৃষ্টিতে অসহায় অবস্থায় তাদের দিন কাটছে।
বিশাল জলরাশি নিয়ে বয়ে চলা যমুনার ঘূর্ণি স্রোতে ধসে গেছে নদীর তীর। গত এক সপ্তাহে যমুনার প্রবল স্রোতে সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে ডান তীর রক্ষা বাঁধে নেমেছে ধস। ফলে দুঃস্বপ্নের মত তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিনোটিয়া গ্রামের বিধবা স্বর বানু আর দুলু খাতুনসহ আরও অনেকের বসতভিটা।
অপরদিকে উপজেলার সোনাতুনি ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের ৫৪ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন একদশক আগে ভিটেমাটি নদীতে হারিয়ে বাড়ি করেছিলেন যমুনার কোল ঘেষে। ভেবেছিলেন আর ভাঙনের কবলে পরতে হবে না। কিন্তু তার দুঃখের দিন শেষ হলো না। একরাশ হতাশার মধ্যে সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার করে দিয়েছে যমুনা তীররক্ষা বাঁধে ধস নামে। এভাবেই অত্র এলাকার রূপচাঁদ মোল্লা, মো. এরশাদ মোল্লা, মজনু মোল্লা, আলী মোল্লা, আমদ আলী মোল্লা, বাতেন মোল্লাসহ অর্ধশতাধিক মানুষ কোনক্রমে ঘরের চাল খুলে নিয়ে খুজে ফিরছেন আশ্রয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধে নতুন করে ধস শুরু হয় সপ্তাহ খানেক আগে। তীররক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে ইতোমধ্যেই মসজিদসহ অন্তত ২৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে শুরু করে মাত্র কয়েক দিনেই যমুনার ঘূর্ণি স্রোতে ধসে যায় যমুনার তীর রক্ষা বাঁধ। উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনোটিয়া পয়েন্টে কয়েকটি স্থানে এ ধস শুরু হয়।
কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই এই এলাকার ঐতিহ্যবাহী শিমুলকান্দি জামে মসজিদ নদী গর্ভে চলে যায়। তারপর একে একে অন্তত ২৫টি ঘরবাড়ি যমুনার গর্ভে চলে যায়। ভাঙন অব্যাহত থাকায় এলাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পরেছে।
এবিষয়ে গালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন জানান, ‘বাঁধ নির্মাণের সময় তীররক্ষা বাঁধের একেবারে নিকট থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীরা অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করেছে। এ কারনে সিসি ব্লকের নিচ থেকে বালু ও জিওব্যাগ সরে গিয়ে বাঁধের বিভিন্ন অংশে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনেক আগেই লিখিত জানালেও তারা কার্যকরি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার শাহীন কামাল জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আমরা জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছি। আশা করি আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারি মো. নুরুল ইসলাম জানান, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় হঠাৎ করেই ধস শুরু হয়েছে। তবে আমরা ভাঙন ঠেকাতে সাথে সাথেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে জানানোর পর সাথে সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। ইতোমধ্যেই তারা জিওব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সত্যি বিচিত্র্য এই যমুনা নদী আরোও বিচিত্র এর গতি পরিবর্তন। কখন কোনদিকে টার্ন নেয়, আবার কখনও ইউটার্ন করে তা বলাই মুশকিল। সেই গানের কলির মত ‘নদীর একূল গড়ে ওকূল গড়ে এই তো নদীর খেলা’। বর্তমানে ওই এলাকার ৬০০ মিটারে জিওবস্তা ফেলা হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের কাজের টেন্ডার হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে এ এলাকা ভাঙন মুক্ত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন