শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পুকুরে রঙিন মাছ চাষে সফলতা

আশিকুর রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন বিশ^জিৎ। নিজ বাড়ির পাশে লীজ নেওয়া একটি পুকুরে মুক্তভাবে রঙিন মাছ চাষ করছেন শাররিকভাবে অসুস্থ এই বেকার যুবক। বিশ^জিৎ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের শিবু মন্ডলের ছেলে। গত এক মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা মাছ বিক্রি করেছেন। পুকুরে এখনো লক্ষাধিক টাকার মাছ রয়েছে। বেকার জীবনের অভিশাপ কাটিয়ে বিশ^জিৎ এখন রঙিন মাছে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন।
বিশ^জিৎ রাজধানীর জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। সিলেটে কর্মরত অবস্থায় বিয়ে করেন। বিয়ের ২১ দিনের মাথায় ২০১২ সালে ব্রেইন স্ট্রোক হয়। এরপর শরীরের ডানপাশ অবস হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। দুইবছর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেননি। তিন ভাই এক বোনের সবার ছোট বিশ^জিৎ। ভাইদের দেয়া সহযোগীতায় চলতে থাকে চিকিৎসা। এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হননি। কিছুটা সুস্থ্য হলে একটি টং দোকান দেন কিন্তু সেখান থেকে উপার্জন ভালো না হওয়ায় রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। অল্প পুঁজিতে স্বল্প সময়ে কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন।
পুকুরে রঙিন মাছ চাষে সফলতার গল্প বলেন বিশ^জিত নিজ মুখে। তিনি জানান, প্রথম দিকে বাড়িতে কয়েকটি ড্রামে এই মাছ চাষ শুরু করেন। সেখানে মাছ বড় হতে থাকে। কয়েক মাস পর বিক্রিও করেন। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পুকুরে বিদেশি জাতের রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। মাছগুলো আকারে ছোট হলেও বেশ সতেজ ও বাহারি নানা রঙের। পুকুরে ১২ থেকে ১৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। মাছগুলো অনেকে অর্নামেন্ট ফিসও বলে থাকেন।
বিশ^জিৎ জানায়, তার বাবা একজন কৃষক। মাঠে তাদের চার বিঘা চাষযোগ্য জমি নেই। তার আরো দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। অভাবের সংসার হলেও বাবা আমাদের লেখাপড়াা শেখাতে কার্পন্য করেননি। আমি মাস্টার্স শেষ করেছি। চাকরিও শুরু করেছিলাম। কিন্তু স্ট্রোক আমার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। কিছুটা সুস্থ্য হলে চলতি বছরের মে মাসে যশোরের চৌগাাছা মাছ ব্যবসায়ী সালমান সর্দারের নিকট থেকে গাপ্পি মলি, গোল্ডফিস, কমেন্ট, রেডটিকা, কইকাপ এবং প্লাটিসহ বিভিন্ন জাতের মাছ কিনে আনি। এ পর্যন্ত পরিচর্যা ও মাছ ক্রয় বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি।
এরমধ্যে মা মাছগুলো ডিম ছেড়ে রেনু পোনার জন্ম দিয়েছে। গত একমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এখনও যে পরিমাণের মাছ রয়েছে তা কমপক্ষে এক লাখ টাকা হবে।
মালিয়াট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান খা জানান, বিশ^জিৎ লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করছিল।
বিয়েও করেছিল কিন্তু অসুস্থ্যতার জন্য তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বর্তমানে রঙিন মাছ চাষ শুরু করে ঘুরে দাড়িয়েছে। সৌখিন মানুষেরা যদি তার কাছ থেকে মাছ কেনেন তাহলে বিশ^জিৎ বেচে থাকার লড়াইয়ে সফল হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো. হাসান সাজ্জাদ জানান, শিক্ষিত বেকার যুবক বিশ^জিৎ বাড়িতে একটি পুকুরে রঙিন মাছের চাষ করছে। তার মাছ চাষ পরিদর্শন করেছি। এলাকায় এ মাছ চাষ অনেকটা নতুন হওয়ায় মৎস অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার আশ^াস দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন