সাগরে দু’টি নিম্নচাপ কেটে ফের লঘুচাপ : বন্দরে ৩ নম্বর সঙ্কেত
টানা অনাবৃষ্টি, খরা ও তাপদাহে কেটেছে ভরা পুরো বর্ষাকালের আষাঢ়-শ্রাবণ মাস। এবার ভাদ্র মাস শুরু হতে না হতেই তীব্র গরমে-ঘামে সর্বত্র অতিষ্ঠ জনজীবন। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকালের মতো বৃষ্টিপাতের জের থাকে ভাদ্র মাসেও। অথচ শরতের ভাদ্র মাসে চৈত্র-বৈশাখের মতো খরতাপ। ‘ভাদ্রের তালপাকা গরম’। সৈয়দপুরে বুধবার তাপমাত্রার পারদ উঠে গেছে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত বেশি।
স্বস্তির বৃষ্টির দেখা নেই। প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গরমের দাপট অসহনীয়। দিনভর সূর্যের কড়া তেজে যেন আগুন ঝলসে পড়ছে। রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা বিভাগসহ গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অসময়ের তাপদাহে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বৈরী আবহাওয়ায় দিন এনে দিন খাওয়া, দরিদ্র, মজুরদের কষ্ট-দুর্ভোগ অশেষ। এদের আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে।
গেল জুলাই অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ভরা বর্ষাকালেই সারা দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭.৬ শতাংশ কম (অর্ধেকেরও কম) বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা গত ৪১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত তথা অকালে খরার রেকর্ড। এ সময়ে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তপ্ত ছিল আবহাওয়া-প্রকৃতি। ভরা বর্ষা-বাদলের গত জুলাই মাসে সারা দেশে বৃষ্টি ঝরেছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। মওসুমের এ সময়ে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৯৬ মি.মি.।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরাবর্ষায় খরা-অনাবৃষ্টি এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর নেতিবাচক ধারায় পরিবর্তন। গত কয়েক বছর যাবৎ ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বিরূপ আচরণে আবহাওয়া-জলবায়ুর অস্বাভাবিক মতিগতি এবং চরম-ভাবাপন্নতা দেখা যাচ্ছে। চলতি আগস্ট মাসেও দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে করে খরা-অনাবৃষ্টি আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
ভাদ্র মাসেও বর্ষার বৃষ্টির যে জের থাকে এখন সেই স্বাভাবিক বৃষ্টিটুকুও এখন নেই। ফল-ফসল বিশেষ করে আমন চাষাবাদে পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে এবং এ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট পর পর দু’টি নি¤œচাপ ঘনীভ‚ত হওয়ার আগেই কেটে গেছে। এর ফলে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, গতকাল উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভ‚ত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
খরা-অনাবৃষ্টি ও অকালে তাপদাহের কারণে ঘরে ঘরে মানুষ জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ হতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস হেতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান তাপপ্রবাহ কোথাও কোথাও কমতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন