রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হারিয়ে যেতে বসেছে ৫শ’ বছরের মিষ্টি তেঁতুল গাছটি

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রূহুল কুদ্দুস, কেশবপুর (যশোর) থেকে : যশোরের কেশবপুরে ঐতিহ্যবাহী বিরল প্রজাতীর ৫শ বছর বয়সী বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি অযতœ অবহেলায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজাঅর্চনাসহ বহুবিধ গুণের কারণে গাছটি এলাকায় অলৌকিক গাছ হিসেবে পরিচিত। এলাকার ভূমিদস্যুদের অত্যাচার নির্যাতনের কারণে গাছটি ৫ বছর আগে উপড়ে গিয়েও বেঁচে আছে। চিরজীবী গাছ হিসেবে ইহা সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর। জানা গেছে, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মূলগ্রাম আটঘোরা সড়কের পাশে সরকারি ২২ শতক খাস জমির ওপর ঐতিহ্যবাহী বিরল প্রজাতির ৫শ বছর বয়সী বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি অবস্থিত। গাছটির নামানুসারে সড়কটি নিলেমালা তেঁতুল তলা সড়ক নামে পরিচিত। অতীতে গাছটি আশপাশের প্রায় ২ বিঘা এরিয়া নিয়ে বিস্তৃৃত ছিল। কিন্তু গাছটির চারপাশের ভূমিদস্যুরা সরকারি জমি দখলকরাসহ গাছটির ওপর অত্যাচার নির্যাতন করায় গত ৫/৬ বছর আগে উপড়ে পড়ে। এরপরও অলৌকিকভাবে গাছটি বেঁচে আছে। বর্তমান গাছটি ৪ কাঠা জমির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ গাছের তেঁতুলের স্বাদ আলাদা, মিষ্টি। পতিত হওয়ার পরও গাছটি সজিবতা ফিরে পেয়েছে। এ জন্য এলাকাবাসী গাছটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। মূলগ্রামের বাসিন্দা আশোক বিশ্বাস বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই মূলগ্রাম, কোমরপোল, গৌরীপুর, খৈত্রপাড়াসহ দূর-দূরান্তের  সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ গাছের গোড়াই মানদ ও পূজাঅর্চনা করে আসছে। প্রবাদ রয়েছে, এ গাছের ডাল কাটলে মানুষের ক্ষতি হয়। এমনকি লোকের মৃত্যুও ঘটেছে। গত বছর রিশি সম্প্রদায়ের লোকেরা এ গাছের ডাল জ্বালানি হিসেবে নিয়ে যায়। কিন্তু রাতে স্বপ্ন দেখায় এ গাছের ডাল যে আগুনে পোড়াবে তার মৃত্যু হবে, তাই প্রাণের ভয়ে সেই কাঠ আবার রেখে আসা হয়। এ গাছের ফল নিয়ে অনেকেই রোপণ করেছে, কিন্তু বাঁচে না। এ গাছে গভীর রাতে জিনের আগমন ঘটে থাকে। মূলগ্রামের শতবর্ষী আনার সরদার জানান, তিনি দাদার মুখে শুনেছেন ত্রিপুরাপুর খেয়াঘাট থেকে একটি নদী মূলগ্রামের ভেতর দিয়ে মধ্যকুল হয়ে কালিগঞ্জ খেয়াঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দিনে একবার পাল তোলা নৌকায় চড়ে মানুষ এ নদী দিয়ে চলাচল করতো। এ নদীর পাড়েই বন বিবির তেঁতুল গাছটি লাগানো ছিল। কালের আবর্তে বর্তমান সে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। কে গাছটি লাগিয়েছিল তা তার দাদাও জানতেন না। তবে গাছটি ৫শ বছরের পুরনো হবে। এর নাম বন বিবির তেঁতুল গাছ হলো কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো বা বনের মধ্যেই গাছটি জন্মেছিল বলে এর নামকরণ করা হয় বন বিবির তেঁতুল গাছ। সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দীন বলেন, গত বছর কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে এ গাছের গোড়াসহ চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। যার কারণে গাছটি সজিবতা ফিরে পেয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহী বিরল প্রজাতির ৫শ বছর বয়সী এ বন বিবির মিষ্টি তেঁতুল গাছটি রক্ষাসহ অরক্ষিত ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। উপজেলা ফরেস্টার আলী আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদান করার পর এলাকার জনগণ গাছটি সংরক্ষণের দাবি জানায়। তখন সরেজমিন গাছটি পরিদর্শন করি। এ সময় বয়স্ক লোকদের কাছ থেকে গাছটির ইতিকথা জানার চেষ্টা করি। যেহেতু গাছটি সরকারি ২২/২৩ শতক জমির ওপর পতিত অবস্থায় রয়েছে। অদ্যাবধি তার মৃত্যু ঘটেনি। আমরণ বা চিরজীবী গাছ হিসেবে সরকারিভাবে এর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটন আলী বলেন, এ উপজেলায় সবেমাত্র যোগদান করেছি। গাছটির কথা আমি শুনিনি। সুযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে সরকারি জমি উদ্ধারসহ যাতে গাছটি সংরক্ষণ হয় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন