টানা ১০ দিন আন্দোলনের পর ১১ দিনের মাথায় শনিবার বিকেলে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু প্রত্যাহারের মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই ফের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন শ্রমিক নেতারা। এ নিয়ে শ্রমিকদের একাংশ বিভ্রান্তির মধ্যেও পড়েছেন। এদিকে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের বাগানগুলোর শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। কিন্তু রোববার দুপুরে হঠাৎ জগদীশপুরসহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরে রাস্তা অবরোধ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। তাদের অনুরোধে প্রায় ৪ ঘন্টা পর বেলা সাড়ে ৩ টায় অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আন্দোলন চলমান থাকবে। আমিতো শ্রমিকদের বাইরে যেতে পারবোনা। আমরা বলেছিলাম কিন্তু শ্রমিকরা মানেনা। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ রাখতে তখন আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরা না মানার কারণে আবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা কাঞ্চন পাত্র বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা আর পারছিনা। এত অল্প মজুরী শ্রমিকরা মানছেননা। তাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতেই চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার বাগানগুলোর ৮/১০ হাজার শ্রমিক আজ (রোববার) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তা প্রত্যাহার করা হয়।
চা শ্রমিক চন্দা রাণী ভৌমিক বলেন, সারা জীবন ধরেই আমাদেরকে সবাই ঠকায়। ফলে আমরা আজ মাঠে নেমেছি। আমরা ১৪৫ টাকায় মানিনা। আমাদেরকে ৩০০ টাকাই দিতে হবে। আমরা বঁাচার মতো বঁাচতে চাই। আমরা খাবার পাইনা। দুর্গম এলাকাই থাকি। আমাদের অধিকার দেয়া হয়েছে ভোটের জন্য। আমাদের স্বার্থ দেখার জন্য নয়। এ দেশে আদিবাসী, রোহিঙ্গাদের জায়গা হয়েছে। কিন্তু চা শ্রমিকদের নিজস্ব ভিটে কোথায়। আমি জানতে চাই সরকার চা শ্রমিকদের কোথায় রেখেছে। শুধু ভোটের জন্য আমাদের ব্যবহার করছে।
জানা গেছে, দৈনিক মজুরী ৩০০ টাকার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ৪ দিন ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি করেন চা শ্রমিকরা। এরপর তারা ১৩ আগস্ট থেকে পূর্নদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি। ইতিমধ্যে তারা একাধিকবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত শনিবারের বৈঠকে তাদের মজুরী ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই তারা নিজেদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর প্রেক্ষিতে রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও হবিগঞ্জের চান্দপুর, জগদীশপুর, নলুয়া, আমু, চন্ডি, নোয়াপাড়া, তেলিয়াপাড়া, বৈকুন্ঠপুর, বেগমখানসহ চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলার বাগানগুলোর শ্রমিকরা বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বরে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন