মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর থেকে : আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখলে নিতে সরকারের সাথে আঁতাতকারী ও অকার্যকর নেতাদের ব্যাপক আনাগোনা শুরু হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ রেখে ৫ জানুয়ারি থেকে লাপাত্তা, সরকারি দলের সাথে গোপন আঁতাত, দলের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র, পিছিয়ে আড়ালে থাকা, গা বাঁচাতে বিদেশে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা ও দুর্নীতিবাজ এই সব সুবিধাভোগী নেতারা এখন জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পদগুলো আবারো বাগিয়ে নিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। শুরু করেছে নিরন্তর দৌড়ঝাঁপ। তা দেখে শংকিত হয়ে পড়েছে বিগত দিনগুলোতে আন্দোলনে সক্রিয় জেলা ও উপজেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের নেতাদের দাবি অবিলম্বে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি ভেঙে মোনাফেক ও বেইমানদের বাদ দিয়ে ত্যাগী যোগ্য তরুণ নেতাদের দিয়ে নতুন কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, যদি সম্মেলন করতে রাজনৈতিক অথবা নিজ দলীয় কোন ধরনের সংকট বা অসুবিধা থাকে তাহলে জাতীয় সম্মেলনের আগে কুমিল্লা উত্তর জেলা ও উপজেলা কমিটির যেসব ধাপ্পাবাজ ও আঁতাতকরীরা শীর্ষ পদ দখলে আছে সেখানে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করার দাবি জনান। নেতাকর্মীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না বর্তমান জেলা কমিটির তালিকায় কে কোথায় আছে। তারা বলেন, দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির অবস্থা এই হাল হলে আমরা কার নেতৃত্বে তৃণমূলের রাজনীতি করব। এদিকে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ে এসব ধাপ্পাবাজ ও স্বার্থলোভি নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে দলকে আরেকধাপ অন্ধকার গহব্বরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ দলের চেয়ারপারসন জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার ও চট্টগ্রামের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলছেন, আবারো এসব সুবিধাভোগিদের দলে ঠাঁই হলে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। আবারো ঘুরে দাঁড়াবে অকৃতজ্ঞরা। এদিকে, দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ১/১১ এবং ৫ জানুয়ারির পর থেকে যে সব নেতা গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, শাসক দলের সাথে মিলেমিশে দলের বারোটা বাজিয়েছে, বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকেছে, আন্দোলনে ছিল অনুপস্থিত, দলকে বিপদে রেখে এখনো বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। এই সব অকৃতজ্ঞ ও বেঈমানÑমোনাফেক নেতাদের অন্তত কুমিল্লা উত্তর জেলা ও উপজেলা বিএনপিতে স্থান হবে না। তারা বিএনপি, জনগণ ও গণতন্ত্রের শত্রু। তাদের ক্ষমা নেই। সারাদেশে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে সমধিক পরিচিত কুমিল্লা জেলা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ মেধাবী শিক্ষক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক কেবিনেট সচিব এমকে আনোয়ার কঠোর পরিশ্রম করে, মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে শেকড় থেকে গড়ে তুলেছেন কুমিল্লা (উত্তর ও দক্ষিণ) জেলা বিএনপিকে। এই দুই নেতা বিএনপির শাসনামলে দুই মেয়াদে মন্ত্রী থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস ও মেঘনা উপজেলাকে আধুনিক শহরে পরিণত করেছেন। এ অঞ্চলকে সাজিয়েছেন জনগণের চাহিদামতো। উন্নয়নের সুফল পৌঁছেছে এখন মানুষের ঘরে ঘরে। জানা গেছে, ১/১১ এবং পরবর্তী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে মূলত কুমিল্লা উত্তর বিএনপিতে বেহাল ও রুগ্ন অবস্থার সূত্রপাত হয়। কতিপয় সুবিধাভোগী অকৃতজ্ঞ নেতা বিএনপির ক্ষতি করতে শাসক দলের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিএনপির শাসনামলে নানান পথে উপার্জিত অর্থসম্পদ সুরক্ষা করতে এবং মামলা নির্যাতন থেকে গাবাঁচাতে ওরা সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে। তারা বিএনপিকে দ্বিখ-িত-ত্রিখ-িত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কেউ কেউ গাবাঁচাতে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমায়। দলের প্রতি তাদের কোন দরদ নেই। বিএনপির আদর্শবোধ ভুলে গিয়ে ওই নেতারা বেছে নেয় বিলাসবহুল জীবন। কুমিল্লা উত্তর জেলা এবং কেন্দ্রীয় বিএনপিতে পদ পেতে সেই অকৃতজ্ঞরা এখন নানান পথে লবিং করছে। তাদের লবিং ও তদ্বিরের দৌড়ঝাঁপ দেখে শংকিত হয়ে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, দলের দুই নীতিনির্ধারক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং এমকে আনোয়ারের কাছে তৃণমূলের নেতারা দাবি জানিয়েছেন, বিগত দিনের মাঠের আন্দোলনে তৃণমূলের তরুণরা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। আন্দোলনে সক্রিয় এইসব ত্যাগী তৃণমূলের যোগ্য নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বে দল শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে, গণতন্ত্র বিকশিত হবে, সর্বোপরি জনগণ উপকৃত হবে। আগামী আন্দোলন হবে অনেক বেশি চাঙ্গা ও গতিময়। তৃণমূলের নেতারা বলেন, বিগত আন্দোলনে যে সব অকৃতজ্ঞ ও সুবিধাবাদী ব্যক্তি অনুপস্থিত ছিল, তারা বিএনপি’র অনেক বড় ক্ষতি করেছে। এই অকৃতজ্ঞদের কিছুতেই দলে জায়গা দেয়া যাবে না। তারা বলেন, ৫ জানুয়ারি থেকে যেসব নেতারা আত্মগোপনে চলে যায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে এর দায়িত্ব দল নেবে কেন। আন্দোলন করার কারণে তো তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এসব নেতাদের ভূমিকা এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন