শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

জনবল সঙ্কটে সেবা দিতে হিমশিম

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

জনবল সঙ্কটে ভুগছে সাতক্ষীরার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ২৩ জনের স্থলে মাত্র ১০ জনকে নিয়ে গ্রাহক সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। একই সাথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা নাগরিকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে পাসপোর্ট করতে আসা শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুদের লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। বেলা যতো বাড়ে ততোই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো ঘামতে থাকেন। একটা সময়ে প্রচণ্ড ভীড়ে অফিসের বারান্দা থেকে রাস্তায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় গ্রাহকদের। যদিও দূর-দূরন্ত থেকে পাসপোর্ট করতে আসা এসব গ্রাহকদের সেবা দিতে খোদ সহকারি পরিচালক মো. সাহজাহান কবির নিজে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। গ্রাহকদের লাইন ঠিক করে দেয়াসহ তাদের অসুবিধার কথা শুনে তা সমাধানের চেষ্টা করছেন। বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদের তিনি অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দায়িত্বে থাকা সকলকে।
২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মো. সাহজাহান কবির সাতক্ষীরায় যোগদানের পর থেকেই সেবার মান বেড়েছে। নতুন নতুন পাসপোর্ট করতে আগ্রহী হচ্ছেন জনসাধারণ। এখন প্রতিদিন শতশত মানুষ পাসপোর্ট করার জন্য এখানে আসেন।
পাসপোর্ট করতে আসা দিপু, কবির, ইসমাইল, রেহেনা খাতুনসহ অনেকেই জানান, পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবিরের নানামুখী উদ্যোগে অনেকাংশে কমেছে জনভোগান্তি। দালালদের মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি পাসপোর্ট করতে পারায় আমরা খুশী। এছাড়া, অল্প সময়ের মধ্যেও পাসেপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে এই অফিস থেকে।
জানা গেছে, ২০২১ সালেই সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ১৪ হাজার ৬০০টি পাসপোর্ট বিতরণ করে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯ কোটি ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৫ টাকা। নতুন পাসপোর্টের জন্য তালিকাভূক্তি হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৯৭ জন। যার মধ্যে সাধারণ পাসর্পোর্ট ছিল ১৫ হাজার ৭০২টি ও জরুরি ৩ হাজার ৯৫টি।
চলতি বছর রাজস্ব আয় বিগত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ার আশাবাদ করে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাহজাহান কবির বলেন, সাতক্ষীরায় বর্তমানে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। ই-পাসপোর্টের আবেদনকারী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে, ফরমপূরণ করে আবেদন ফরমের সাথে পুরাতন পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড সংযুক্ত করে সরাসরি জমা দিচ্ছেন। এরপর আমরা ছবি উঠানো, আইরিশ, ফিঙ্গার প্রিন্ট ধারণ করি এবং সাথে সাথে তদন্তে পাঠাই। আর যাদের এপ্রুভাল প্রিন্টের দরকার হয় তাদেরটা এপ্রুভাল দিয়ে প্রিন্টিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। এছাড়া নাম, বয়স, বানানসহ কিছু কারেকশনের জন্য আসলে আমরা উপযুক্ত ডকুমেন্টস জমা নিয়ে সিস্টেমে আপলোড করে কারেকশনের জন্য ঢাকাতে পাঠাই। পাসপোর্ট গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানকল্পে প্রতি সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত গণশুনানী গ্রহণ করা হয়। ফলে গ্রাহকরা সাথে সাথে জানতে পারেন তাদের পাসপোর্টের সমস্যা কোথায়? শুনানীর দিন ছোট ছোট সমস্যাগুলো আমি সাথে সাথে সমাধান করি। আর যেগুলো আমার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না সেগুলো আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এই অফসে দালালের কোন অপতৎপরতার সুযোগ নেই। সব কিছু গ্রাহক নিজে নিজে করতে পারছেন। ফলে এই অফিসে দিনদিন গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ছে। এছাড়া কেউ যদি কারও খপ্পড়ে পড়ে তবে সরাসরি তিনি আমাকে জানাতে পারবেন। নিচে আমি বিভিন্ন ব্যানারে লিখে দিয়েছি। আমাকে জানালে আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি পাসপোর্ট অফিসের গেটে একটি জবাবদিহীতা বক্স স্থাপন করেছি। ফলে গ্রাহক কেমন সেবা পেলো সেটি লিখে জানাতে পারবেন। এই অফিসের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী যদি ভাল ব্যবহার করে তাকে পুরস্কৃত করা, আর খারাপ ব্যবহার করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার জন্যই ওই জবাবদিহীতা বক্স স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অফিসে সরকারি পোস্ট রয়েছে ২৩টি। আর কাজ করছি ১৩ জন। ১০ জনের ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অন্ততপক্ষে আরো ২/৩ জন জনবল বৃদ্ধি পেলেও গ্রাহকরা অনেক উপকৃত হতেন। তারা আরো একটু বেশি সেবে পেতেন। জনবল সঙ্কট সমাধান করে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস আরো অগ্রগতি লাভ করুক, আরো বেশি বেশি মানুষ এখানে আসুক, সরকারের রাজস্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাক এই প্রত্যাশায় তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন