স্টাফ রিপোর্টার : ১৯ বছরেও পার্বত্য শান্তিচুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরো একবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। দশ দফা দাবিতে জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জেএসএস এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের’ অভিযোগ তুলেছেন পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেছেন, এরকম চলতে থাকলে পাহাড় আবারও ফুঁসে উঠতে পারে। সন্তু লারমা অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসে বললেও আমি বিশ্বাস করতে পারব না যে চুক্তির সবগুলো ধারা বাস্তবায়িত হবে। কারণ গত ১৯ বছরে বিশ্বাসভঙ্গের অনেক ঘটনা ঘটেছে, অনেক প্রতারণা করা হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘দলীয়করণের নগ্ন প্রতিফলন ঘটেছে। দশ দফা দাবিতে জনসংহতি সমিতির অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে কাজ করব। সরকার যদি অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে, অবদমনে তৎপর থাকে, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা এভাবে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কয়েক দশকের সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সরকার ওই চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণ এবং ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়নের কথা বললেও জনসংহতি সমিতি তাকে অসত্য প্রচার বলে আসছে। তাদের ভাষ্য, বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৫টি ধারা। সেখানে তো কোনো সরকার আমি দেখি না! যেখানে যাই সেখানে একটা সরকার। রাজা দেবাশীষ রায় একটা সরকার, প্রতিমন্ত্রী নববিক্রম ত্রিপুরা একটা সরকার; বহুমুখী শাসনব্যবস্থা সেখানে। কে কার কথা শুনে কাজ করবেÑ সেটাই বোঝা যায় না। আইনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনেক কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ নেই। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলাসহ সব কর্মকা- চালায় সেনাবাহিনী। তারপরে আছেন জেলা প্রশাসক, এসপি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। প্রশাসনে একজন কর্মকর্তাও নেই যারা শান্তিচুক্তির প্রতি সংবেদশীলন।
সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ে আদিবাসীরা ক্রমান্বয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন ও সরকার নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে, হয় দেশ ছেড়ে চলে যাও, নয়তো নতজানু হয়ে থাকো। রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ করার বিরোধিতায় তিনি বলেন, যোরা আমাদের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না, তাদের পক্ষ হয়ে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ করা যাচ্ছে। উদ্দেশ্য তাদেরকে নতুনভাবে পুনর্বাসন করা। আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি যে উন্নয়ন, সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই, চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন।
সন্তু লারমা বলেন, ঐক্যন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য আলোচনা সভায় বলেন, আজকের এই আলোচনা সভা রাষ্ট্রীয় প্রতারণাবিরোধী সমাবেশ, শোকের উৎসব এবং জাতীয় মিথ্যাচারের প্রতিবাদ বলে আমি মনে করি। ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে সরকারের চুক্তিবিরোধী প্রতারণা বড় রকমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে বর্ণবাদী ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, বৈরী অবস্থায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে আদিবাসী অধিকার আদায়ে নামা যেভাবে ন্যায়সঙ্গত ছিল, সেভাবে আজও যদি তারা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অসহযোগ আন্দোলনে নামে তাহলে সেটাও ন্যায়সঙ্গত হবে। এটা যে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ থাকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে সেটেলার বাঙালিদের সংখ্যাগুরু বানানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি এক ধরনের এথনিক ক্লিনজিংয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেটা বিশ্বব্যাপী অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
জাসদ সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নূর আহম্মেদ বকুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন