আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১ বছরপূর্তি। প্রতিবছর তিন পার্বত্য জেলায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকায় সভা সেমিনার হয়। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়, টেলিভিশনে টকশোতে আলোচনা হয়। বস্তুত এ সকল আলোচনার মূল লক্ষ্য থাকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা ও নিরূপণ করা।
শান্তিচুক্তি একটি জাতীয় আকাক্সক্ষা। শান্তিচুক্তি কোনো একক ব্যক্তি বা কোনো একক সরকারের কৃতীত্ব নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম পার্বত্য অঞ্চলের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সংলাপের সূচনা করেছিলেন। তার সময়ের সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমানসহ আরো কয়েকজনের সাথে সফল আলোচনা হয়েছিল। তিনি সন্তু লারমার সাথে আলোচনা করে তার দলের সাথে এই আলোচনার জন্য তাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ তার স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে এরশাদ আমলে ৬টি, বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে ১৩টি ও শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ৭টি মিলে মোট ২৬টি সংলাপের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারার কৃতিত্ব শেখ হাসিনা সরকারের, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতি তথা জেএসএস ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুই মেয়াদে এক দশক ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান হাজির করে সরকারের দাবি, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। বাকি অল্প কিছু ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শান্তিচুক্তিতে ৪ খণ্ডে সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে। সরকারের দাবি মতে, এর মধ্যে মোট ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে জেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা সরকারের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মতে, সরকার শান্তিচুক্তির মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়াও ১৩টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করেছে এবং ৩৪টি ধারা অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। তিনি আরো দাবি করেছে, শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহের দুই তৃতীয়াংশ অবাস্তবায়িত রয়েছে। একই সাথে সন্তু লারমা আরো দাবি করে থাকেন, লিখিত শান্তিচুক্তির পাশাপাশি এর একটি অলিখিত রূপ বা প্রতিশ্রুতি ছিল। সন্তু লারমা লিখিত শান্তিচুক্তির চেয়েও শান্তিচুক্তির সমঝোতা বা প্রতিশ্রুতি বা অলিখিত রূপ বাস্তবায়নের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
শান্তিচুক্তির সাফল্য বা সুফল শান্তিচুক্তির ধারা বাস্তবায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ধারা বাস্তবায়নের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবকাঠামো, জীবনযাপন, পরিবেশ, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুতায়ন, শান্তি ও স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী পরিবর্তন। এসব ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এককথায় অভূতপূর্ব। এককালের পানিশমেন্ট জোন পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ট্যুরিস্ট জোন, এন্টারটেইনমেন্ট জোন- এটাই পার্বত্য চুক্তির অনত্যম বড় সাফল্য।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচ্য, সেটা হচ্ছে, শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ২১ বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনকারী সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিচুক্তি সম্পাদনকারী সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও শান্তিচুক্তির কিছু ধারা অবাস্তবায়িত, বাস্তবায়নাধীন বা আংশিক বাস্তবায়িত কেন থাকল? প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার কি শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়? আওয়ামী লীগ শাসন আমলের বিগত ১৫ বছরের বিশেষ করে শেষ ৫ বছরের সরকারের কার্যক্রম বক্তৃতা-বিবৃতি, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বিবৃতি, উদ্যোগ, আন্তরিকতা বিশ্লেষণ করে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে মোটেই অনাগ্রহী নয়, বরং অত্যন্ত আন্তরিক। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে এই দীর্ঘ সময়ে শান্তিচুক্তি কেন পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হলো না? এর উত্তর দীর্ঘ ও বহুমুখী, এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তা আলোচনা করা সম্ভব নয়। খুব সংক্ষেপে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে বলতে হয়, এই চুক্তিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে, সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে, জাতীয় চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ। শান্তিচুক্তিকালে তাড়াহুড়ো, অসতর্কতা ও অসচেতনতার কারণে এই ত্রুটিগুলো রয়ে যায়। মানুষের সৃষ্টি কোনো বিধানই একবারে বা শুরুতেই ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব নয়। এটা সেরূপ একটা ভ্রম। এই অসচেতন ভুলগুলোই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়। নিম্নে এ লেখায় সেগুলো ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রথমেই শান্তিচুক্তির মুখোবন্ধের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। আলোচনার সুবিধার্থে অথবা বলার সুবিধার্থে কিংবা রাজনৈতিক কারণে এদেশের মানুষ এ চুক্তিকে ‘শান্তিচুক্তি’, ‘পার্বত্যচুক্তি’, ‘কালোচুক্তি’, ‘দেশ বিরোধী চুক্তি’- নানা নামে আখ্যা দিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এই চুক্তির নাম ‘শান্তিচুক্তি’, ‘পার্বত্যচুক্তি’, ‘কালো চুক্তি’- কোনোটিই নয়। সরকারি গেজেট অনুসারে এই চুক্তির নাম বলা হয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সহিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি’। সম্পাদনকালীন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নন। তিনি সংসদ সদস্য মাত্র। তাহলে সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির সাথে জনসংহতি সমিতির চুক্তিকে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি বলে আখ্যা দেয়া কতটা সঠিক হবে? এ ছাড়া শান্তিচুক্তি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস করা হয়নি। যদিও শান্তিচুক্তির আলোকে গঠিত বিভিন্ন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, সংশোধিত হয়েছে। শান্তিচুক্তির এটি একটি অসম্পূর্ণতা ও দুর্বলতা।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অপরপক্ষ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ বা এর সভাপতি সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না, এমনকি তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের প্রতিনিধিও নন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালি, সন্তু লারমা কোনভাবেই তাদের প্রতিনিধি নন। বরং তিনি প্রচণ্ড বাঙালি বিদ্বেষী। বাঙালিদের দাবি, তিনি ত্রিশ হাজার বাঙালি হত্যার নেতৃত্বদানকারী। কাজেই সন্তু লারমার সাথে চুক্তি করে, সেই চুক্তি বাঙালিদের মেনে নিতে বলা অর্থহীন। কারণ, বাঙালিরা তো তাকে মানেই না। কেবল সন্তু লারমাই নন, পার্বত্য চুক্তিও প্রবলভাবে বাঙালি বিদ্বেষী ও বাঙালি স্বার্থ বিরোধী। এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা বলে আখ্যা দিয়ে এখানকার অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালির অবস্থানকে অস্বীকার করা হয়েছে। যে জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতির জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি সংগ্রাম করেছে, চুক্তিতে সেই বাঙালিদেরকে ‘অউপজাতীয়’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বার পরিচয় কেড়ে নেয়া হয়েছে। চুক্তিতে বাঙালির নাগরিকত্ব ও নির্বাচনের অধিকার উপজাতীয় সার্কেল চিফের করুণাধীন করা হয়েছে। এ চুক্তির ফলে সৃষ্ট সরকারি ও স্থানীয় সরকারের শীর্ষ পদে বাঙালিদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য পদেও বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যানুপাতে না করে চরমভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা এজন্য করা হয়নি যে, পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আওতায় করা হয়েছে। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া উপজাতীয় নাগরিকদেরও এই চুক্তিতে অবহেলা করে সবচেয়ে অগ্রসর জনগোষ্ঠি চাকমা আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সকল পদ উপজাতীয়দের এবং অন্যান্য পদেও উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা ও সুবিধায় উপজাতীয় জনগোষ্ঠিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের দায়িত্ব শুধু উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অথচ একই কারণে বিপুল সংখ্যক বাঙালি উদ্বাস্তু হলেও তাদের এই চুক্তির আওতায় পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি। শান্তিবাহিনীর খুনী ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করে তাদের ২০ দফা প্যাকেজের আওতায় পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও তাদের কারণে হতাহত হওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাঙালিদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি। তাদের স্বজনের হত্যার বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভূমি কমিশন আইনে শুধু শরণার্থীদের বা বাস্তচ্যুত উপজাতীয়দের জমি প্রত্যার্পনের পরিবর্তে সকল জমির বিরোধ নিষ্পত্তি এবং তা মীমাংসার ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেয়ায় সেখানকার বাঙালিরা ভূমিহীন হওয়ার ঝুঁকির মুখে উপনীত হয়েছে। এভাবে ছত্রে ছত্রে এই চুক্তিতে বাঙালিদের অস্তিত্ব ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এমন একটা চুক্তি বাঙালিরা কেন মানবে বা তাদের মানতে বলা হবে?
শুধু বাঙালি নয়, সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠিরও প্রতিনিধি নন। তার দল জনসংহতি সমিতি চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে না বা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠি জনসংহতি সমিতি করে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের মধ্যে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি তার একটি। বাকীরা জনসংহতি সমিতির(সন্তু) গ্রুপের প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বী ও বিরোধী। কাজেই সন্তু লারমার সাথে বা জেএসএসের সাথে চুক্তি করে সন্তু বিরোধী এই সমস্ত উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনকে সেই চুক্তি মেনে নিতে বলা কতটা যুক্তি সঙ্গত তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অনেক সাধারণ পাহাড়ি, যারা কোনো আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে জড়িত নয়, কিন্তু হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদির কারণে সন্তু লারমা ও জনসংহতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও সমিতিকে ঘৃণা করে। তাদেরও জনসংহতি সমিতিকে প্রতিষ্ঠাদানকারী সন্তু লারমার সাথে কৃত চুক্তি মেনে নিতে বলা যুক্তিযুক্ত নয়। হয়তো কেউ কেউ বলতে পারেন, তখন তো চারটি সংগঠন ছিল না। একটি সংগঠন ছিল- জনসংহতি সমিতি। এ কথা ঠিক যে, তখন চারটি আঞ্চলিক সংগঠন ছিল না। কিন্তু জনসংহতি সমিতি সম্পূর্ণভাবে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। কাজেই সরকার যখন জেএসএসের একটি অংশের সাথে সংলাপ করে তার সাথে চুক্তি করেছে, তখন অপর অংশ এর বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। যারা শান্তিচুক্তির আলাপ ও সমঝোতা প্রক্রিয়ায় ছিলেন তারা আরেকটু সতর্ক হলে বিষয়টি এড়ানো যেতো। সন্তু লারমাও এ চুক্তির ব্যাপারে তার দলের প্রতিবাদী অংশের সাথে কোনোরূপ আলোপ-আলোচনা করা, তাদের মতামত নেয়া, তাদের পুনর্বাসনের আওতাভুক্ত করার কাজটি করেনি। কাজেই সন্তু লারমা অস্ত্র সমর্পণ করে পুনর্বাসিত হলেও তার বিরোধী অংশ অস্ত্র সমর্পণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে সন্তু লারমা অংশের লোকেরাও সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ আস্থাশীল হতে না পারায় শান্তিবাহিনীর একাংশকে ভারী ও উন্নত অস্ত্রসহ জঙ্গলে রেখে ভাঙাচোরা অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তিবাহিনী অফিসিয়ালি অবলুপ্ত করার ঘোষণা দিলেও কার্যত শান্তিবাহিনী বহাল থাকে। এই দুই অংশের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শান্তিচুক্তির পর দুই দশকে নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বণ্দ্বে এবং আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভীষিকাময় জনপদে পরিণত করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শান্তিচুক্তির পূর্বে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭৩, বিজিবি ৯৬, পুলিশ ৬৪, আনসার ভিডিপির ১০ জন। নিহত সেনা সদস্যদের মধ্যে অফিসার ৫ জন, জেসিও ৩ জন, বাকিরা সৈনিক। এছাড়াও দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ, ভূমিধস প্রভৃতি কারণে মারা গেছে আরো অনেকে। এর মধ্যে শান্তিচুক্তির পূর্বে শুধু ম্যালেরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬০ জন এবং পরে ৮১ জন মারা গেছে। উভয় কারণে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তবে শান্তিচুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য মারা গেছে। এর মধ্যে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে মারা গেছে ১১ জন, ৫ জন রাঙামাটির ভূমিধসে।
শান্তিচুক্তির পূর্বে নিরাপত্তা বাহিনী ১৬ শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে গ্রেনেড ৩৫৯টি, মর্টার ৭০টি, মাইন ১৩টি এবং অন্যান্য গোলাবারুদ সাড়ে ৪ লক্ষ। এক পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, শান্তিচুক্তির পরে ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি ২৭৩০টি অস্ত্র ও ১ লক্ষ ৮৬ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শান্তিচুক্তির পূর্বে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ২৩৮ জন উপজাতি, ১০৫৭ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৮১ জন উপজাতি ও ৬৮৭ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ২৭৪ জন উপজাতি ও ৪৬৮ জন বাঙালি।
একই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শান্তিচুক্তির পরে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ৪৭৪ জন উপজাতি, ১৮৬ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬৪৬ জন উপজাতি ও ৬৪২ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ৯১০ জন উপজাতি ও ৩৮৪ জন বাঙালি। এমতাবস্থায় শান্তিচুক্তিতে উল্লেখ থাকা সত্তে¡ও সরকারের পক্ষে সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার সম্ভব হয়নি (আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস ও কৌশলগত ঝুঁকির কথা এখানে বিবেচিত হয়নি)। তবু শান্তিচুক্তির ২১ বছরে সরকার ২৪০টি নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে। দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর যেসকল ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, ওই সকল এলাকা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর অনেকগুলো বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসীরা দখল করেছে। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুনরায় নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন একপাক্ষিক বিষয় নয়, দ্বিপাক্ষিক। সন্তু লারমা অফিসিয়ালি শান্তিবাহিনী অবলুপ্ত ঘোষণা করলেও একথা সূর্যের মতো সত্য যে, শান্তিবাহিনী বিদ্যমান এবং এই বাহিনীর হাতে ভয়ানক মারণাস্ত্র রয়েছে। যে ব্যক্তি নিজে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সমর্পণ করেননি তিনিই আবার সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি করছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে শান্তিচুক্তি করেও সন্তু লারমা নিজে এখনো বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পরিচয়পত্র গ্রহণ করেননি। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় থেকেও তিনি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালন করেননি। সরকারকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি জানানোর পূর্বে তাকে স্বায়ত্ত¡শাসনের দাবি ছাড়তে হবে। কেননা, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাদেশিক কাঠামো বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।
অনেকেই জানেন, শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। এই রিটে উচ্চ আদালত শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারাকে সংবিধান বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। বর্তমানে এই রিটটির আপিল বিভাগে শুনানি চলমান রয়েছে। শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আদালতের এই অবর্জাভেশনগুলোরও সমাধান হওয়া জরুরি। এ চুক্তিতে যে আঞ্চলিক পরিষদের কথা বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত তাকে সংবিধান ও বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর বৈশিষ্ট্য বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে অঞ্চলভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠনের সুযোগ রাখা হয়নি। সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিশেষ উপজাতীয় গোষ্ঠিকে নয়। আদালতের রায়ে এ বিষয়েও বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কোনো পদ কোনো জাতির জন্য বারিত রাখার সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদগুলো বাঙালিদের জন্য বারিত করা হয়েছে। চুক্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পদগুলোতে নিয়োগ ও বদলীর দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং এসব পদে উপজাতীয়দের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধারা বাস্তবায়ন তো দূরেরর কথা, এ ধারার আওতায় ইতোমধ্যে মিশ্র পুলিশ সৃষ্টি করে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় পুলিশের আনুগত্য প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসকল কারণেও সরকারের আন্তরিকতা থাকা সত্তে¡ও শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সময় এসেছে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। শান্তিচুক্তিতে বিদ্যমান অসংঙ্গতি, বৈষম্যমূলক বিধান ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা বজায় রেখে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশে সংবিধান যদি ১৭ বার সংশোধিত হতে পারে তবে শান্তিচুক্তি কেন যুগোপযোগী হতে পারবে না? এমনকি শান্তিচুক্তি দ্বারা গঠিত বিভিন্ন আইন ইতোমধ্যে একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে। তাহলে শান্তিচুক্তি কেন আপডেইট করা যাবে না? এখানে সংশোধন শব্দটি পরিহার করে আপডেইট শব্দটি ব্যবহার করা হলো যার সুপ্রযুক্ত বাংলা হতে পারে যুগোপযোগীকরণ। সময়ের ব্যবধানে সন্তু লারমা নিজেও কিছু নতুন নতুন দাবি তুলেছেন, অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরও কিছু দাবি রয়েছে, বাঙালিদের দাবি রয়েছে। কাজেই সকলের দাবি আলোচনা করে সংবিধানের ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন দাবিগুলো বিবেচনা করে শান্তিচুক্তি যুগোপযোগী করা অত্যন্ত জরুরি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে এই যুগোপযোগীকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন সম্ভব।
প্রশ্ন হলো, শান্তিচুক্তি ও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? সংক্ষেপে উত্তর, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হলেই কি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে? উত্তর, কোনোভাবেই নয়। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠিই এই শান্তিচুক্তির আওতার বাইরে রয়েছে। বেশিরভাগ জনগোষ্ঠিকে বাইরে রেখে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে? সন্তু লারমার চুক্তি প্রসীত বিকাশ খীসা, সুধাসিন্ধু কিম্বা তরু চাকমাকে মেনে চলতে বললে তারা তা কখনোই মানবে না। কারণ তারা কেউ সন্তু লারমাকে মানে না? অন্যদিকে শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমা পতাকা উড়িয়ে চলবেন, জেএসএস নেতারা সরকারি বিভিন্ন পদ-পদবী অলঙ্কৃত করে সুবিধা ভোগ করবেন আর প্রসীত বিকাশ খীসা, সুধাসিন্ধু, জলেয়াদের লোকেরা জঙ্গলে অনিশ্চিত জীবন কাটাবে যে চুক্তিতে সে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সে কারণে শান্তিচুক্তির যুগোপযোগীকরণে এদেরও অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আমরা আন্তরিকভাবে মনে করি, সরকার যদি সন্তু লারমার সাথে আলোচনা করতে পারে তবে প্রসীত, সুধাসিন্ধু, তরুর সাথে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়? তারা কী এমন করেছেন যা সন্তু লারমা করেননি? পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত¡শাসন দাবি? সে তো সংবিধান মেনে চুক্তি করেও সন্তু লারমা দাবি করছে? হয়তো পূর্ণাঙ্গ শব্দটি ব্যবহার করেননি। কাজেই তারা পাপী হলে সন্তু লারমাকে পূণ্যবান ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে দীর্ঘদিন পুলিশ, র্যাব দিয়েও যা পারা যায়নি, বর্তমান সরকার আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনের বনদস্যু, মহেশখালীর জলদস্যুদের সাধারণ ক্ষমা ও পুনর্বাসনের আওতায় অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে সেসব এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে। শুধু সুন্দরবন বা মহেশখালী নয়, বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমএনপির বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র সন্ত্রাসীর অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, এ সমস্যার সামরিক সমাধান নেই। তাহলে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার বিকল্প নেই। সে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেএসএসের(সন্তু) বাইরে বিদ্যমান সকল উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠন ও তাদের সামরিক শাখার সাথে আলোচনা করে তাদের নায্য দাবিগুলো সংবিধানের আলোকে বিবেচনা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা জরুরি। অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সকল আঞ্চলিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে আমার পেশাগত যেসব আলোচনার সুযোগ হয়েছিল তাতে আমি দেখেছি, তারা নিজেরাও সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহী এবং আলোচনায় বসলে তাদের নায্য দাবিগুলো বিবেচনা করলে সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী দাবিগুলোতে তারাও ছাড় দিতে প্রস্তুত বলেই আমার মনে হয়েছে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালিদেরকে, তাদের স্বীকৃতি ও দাবিগুলোকেও শান্তিচুক্তির আওতাভুক্ত করে বিদ্যমান শান্তিচুক্তিকে যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের স্বার্থে এর কোনো বিকল্পও নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন