বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে তার যুগোপযোগীকরণ অত্যন্ত জরুরি

মেহেদী হাসান পলাশ | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১ বছরপূর্তি। প্রতিবছর তিন পার্বত্য জেলায় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকায় সভা সেমিনার হয়। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়, টেলিভিশনে টকশোতে আলোচনা হয়। বস্তুত এ সকল আলোচনার মূল লক্ষ্য থাকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা ও নিরূপণ করা।
শান্তিচুক্তি একটি জাতীয় আকাক্সক্ষা। শান্তিচুক্তি কোনো একক ব্যক্তি বা কোনো একক সরকারের কৃতীত্ব নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম পার্বত্য অঞ্চলের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সংলাপের সূচনা করেছিলেন। তার সময়ের সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমানসহ আরো কয়েকজনের সাথে সফল আলোচনা হয়েছিল। তিনি সন্তু লারমার সাথে আলোচনা করে তার দলের সাথে এই আলোচনার জন্য তাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ তার স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে এরশাদ আমলে ৬টি, বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে ১৩টি ও শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ৭টি মিলে মোট ২৬টি সংলাপের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এ চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারার কৃতিত্ব শেখ হাসিনা সরকারের, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পার্বত্য জনসংহতি সমিতি তথা জেএসএস ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুই মেয়াদে এক দশক ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান হাজির করে সরকারের দাবি, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। বাকি অল্প কিছু ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শান্তিচুক্তিতে ৪ খণ্ডে সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে। সরকারের দাবি মতে, এর মধ্যে মোট ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে জেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা সরকারের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মতে, সরকার শান্তিচুক্তির মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়াও ১৩টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন করেছে এবং ৩৪টি ধারা অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। তিনি আরো দাবি করেছে, শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহের দুই তৃতীয়াংশ অবাস্তবায়িত রয়েছে। একই সাথে সন্তু লারমা আরো দাবি করে থাকেন, লিখিত শান্তিচুক্তির পাশাপাশি এর একটি অলিখিত রূপ বা প্রতিশ্রুতি ছিল। সন্তু লারমা লিখিত শান্তিচুক্তির চেয়েও শান্তিচুক্তির সমঝোতা বা প্রতিশ্রুতি বা অলিখিত রূপ বাস্তবায়নের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
শান্তিচুক্তির সাফল্য বা সুফল শান্তিচুক্তির ধারা বাস্তবায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ধারা বাস্তবায়নের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবকাঠামো, জীবনযাপন, পরিবেশ, অর্থনীতি, বিনিয়োগ, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুতায়ন, শান্তি ও স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় যুগান্তকারী পরিবর্তন। এসব ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এককথায় অভূতপূর্ব। এককালের পানিশমেন্ট জোন পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ট্যুরিস্ট জোন, এন্টারটেইনমেন্ট জোন- এটাই পার্বত্য চুক্তির অনত্যম বড় সাফল্য।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচ্য, সেটা হচ্ছে, শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ২১ বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনকারী সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শান্তিচুক্তি সম্পাদনকারী সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও শান্তিচুক্তির কিছু ধারা অবাস্তবায়িত, বাস্তবায়নাধীন বা আংশিক বাস্তবায়িত কেন থাকল? প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার কি শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়? আওয়ামী লীগ শাসন আমলের বিগত ১৫ বছরের বিশেষ করে শেষ ৫ বছরের সরকারের কার্যক্রম বক্তৃতা-বিবৃতি, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বিবৃতি, উদ্যোগ, আন্তরিকতা বিশ্লেষণ করে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে মোটেই অনাগ্রহী নয়, বরং অত্যন্ত আন্তরিক। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে এই দীর্ঘ সময়ে শান্তিচুক্তি কেন পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হলো না? এর উত্তর দীর্ঘ ও বহুমুখী, এই লেখায় বিস্তারিতভাবে তা আলোচনা করা সম্ভব নয়। খুব সংক্ষেপে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে বলতে হয়, এই চুক্তিতে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে, সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে, জাতীয় চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ। শান্তিচুক্তিকালে তাড়াহুড়ো, অসতর্কতা ও অসচেতনতার কারণে এই ত্রুটিগুলো রয়ে যায়। মানুষের সৃষ্টি কোনো বিধানই একবারে বা শুরুতেই ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব নয়। এটা সেরূপ একটা ভ্রম। এই অসচেতন ভুলগুলোই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়। নিম্নে এ লেখায় সেগুলো ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রথমেই শান্তিচুক্তির মুখোবন্ধের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। আলোচনার সুবিধার্থে অথবা বলার সুবিধার্থে কিংবা রাজনৈতিক কারণে এদেশের মানুষ এ চুক্তিকে ‘শান্তিচুক্তি’, ‘পার্বত্যচুক্তি’, ‘কালোচুক্তি’, ‘দেশ বিরোধী চুক্তি’- নানা নামে আখ্যা দিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে- এই চুক্তির নাম ‘শান্তিচুক্তি’, ‘পার্বত্যচুক্তি’, ‘কালো চুক্তি’- কোনোটিই নয়। সরকারি গেজেট অনুসারে এই চুক্তির নাম বলা হয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সহিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি’। সম্পাদনকালীন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নন। তিনি সংসদ সদস্য মাত্র। তাহলে সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত জাতীয় কমিটির সাথে জনসংহতি সমিতির চুক্তিকে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি বলে আখ্যা দেয়া কতটা সঠিক হবে? এ ছাড়া শান্তিচুক্তি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস করা হয়নি। যদিও শান্তিচুক্তির আলোকে গঠিত বিভিন্ন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, সংশোধিত হয়েছে। শান্তিচুক্তির এটি একটি অসম্পূর্ণতা ও দুর্বলতা।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অপরপক্ষ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ বা এর সভাপতি সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না, এমনকি তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের প্রতিনিধিও নন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালি, সন্তু লারমা কোনভাবেই তাদের প্রতিনিধি নন। বরং তিনি প্রচণ্ড বাঙালি বিদ্বেষী। বাঙালিদের দাবি, তিনি ত্রিশ হাজার বাঙালি হত্যার নেতৃত্বদানকারী। কাজেই সন্তু লারমার সাথে চুক্তি করে, সেই চুক্তি বাঙালিদের মেনে নিতে বলা অর্থহীন। কারণ, বাঙালিরা তো তাকে মানেই না। কেবল সন্তু লারমাই নন, পার্বত্য চুক্তিও প্রবলভাবে বাঙালি বিদ্বেষী ও বাঙালি স্বার্থ বিরোধী। এই চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা বলে আখ্যা দিয়ে এখানকার অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালির অবস্থানকে অস্বীকার করা হয়েছে। যে জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতির জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দি সংগ্রাম করেছে, চুক্তিতে সেই বাঙালিদেরকে ‘অউপজাতীয়’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি জাতিসত্ত্বার পরিচয় কেড়ে নেয়া হয়েছে। চুক্তিতে বাঙালির নাগরিকত্ব ও নির্বাচনের অধিকার উপজাতীয় সার্কেল চিফের করুণাধীন করা হয়েছে। এ চুক্তির ফলে সৃষ্ট সরকারি ও স্থানীয় সরকারের শীর্ষ পদে বাঙালিদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য পদেও বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যানুপাতে না করে চরমভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা এজন্য করা হয়নি যে, পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আওতায় করা হয়েছে। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া উপজাতীয় নাগরিকদেরও এই চুক্তিতে অবহেলা করে সবচেয়ে অগ্রসর জনগোষ্ঠি চাকমা আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সকল পদ উপজাতীয়দের এবং অন্যান্য পদেও উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষা ও সুবিধায় উপজাতীয় জনগোষ্ঠিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের দায়িত্ব শুধু উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অথচ একই কারণে বিপুল সংখ্যক বাঙালি উদ্বাস্তু হলেও তাদের এই চুক্তির আওতায় পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি। শান্তিবাহিনীর খুনী ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করে তাদের ২০ দফা প্যাকেজের আওতায় পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও তাদের কারণে হতাহত হওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাঙালিদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কথা বলা হয়নি। তাদের স্বজনের হত্যার বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভূমি কমিশন আইনে শুধু শরণার্থীদের বা বাস্তচ্যুত উপজাতীয়দের জমি প্রত্যার্পনের পরিবর্তে সকল জমির বিরোধ নিষ্পত্তি এবং তা মীমাংসার ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দেয়ায় সেখানকার বাঙালিরা ভূমিহীন হওয়ার ঝুঁকির মুখে উপনীত হয়েছে। এভাবে ছত্রে ছত্রে এই চুক্তিতে বাঙালিদের অস্তিত্ব ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এমন একটা চুক্তি বাঙালিরা কেন মানবে বা তাদের মানতে বলা হবে?
শুধু বাঙালি নয়, সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠিরও প্রতিনিধি নন। তার দল জনসংহতি সমিতি চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে না বা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় জনগোষ্ঠি জনসংহতি সমিতি করে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের মধ্যে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। পার্বত্য জনসংহতি সমিতি তার একটি। বাকীরা জনসংহতি সমিতির(সন্তু) গ্রুপের প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বী ও বিরোধী। কাজেই সন্তু লারমার সাথে বা জেএসএসের সাথে চুক্তি করে সন্তু বিরোধী এই সমস্ত উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনকে সেই চুক্তি মেনে নিতে বলা কতটা যুক্তি সঙ্গত তা প্রশ্নসাপেক্ষ। অনেক সাধারণ পাহাড়ি, যারা কোনো আঞ্চলিক সংগঠনের সাথে জড়িত নয়, কিন্তু হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ইত্যাদির কারণে সন্তু লারমা ও জনসংহতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও সমিতিকে ঘৃণা করে। তাদেরও জনসংহতি সমিতিকে প্রতিষ্ঠাদানকারী সন্তু লারমার সাথে কৃত চুক্তি মেনে নিতে বলা যুক্তিযুক্ত নয়। হয়তো কেউ কেউ বলতে পারেন, তখন তো চারটি সংগঠন ছিল না। একটি সংগঠন ছিল- জনসংহতি সমিতি। এ কথা ঠিক যে, তখন চারটি আঞ্চলিক সংগঠন ছিল না। কিন্তু জনসংহতি সমিতি সম্পূর্ণভাবে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। কাজেই সরকার যখন জেএসএসের একটি অংশের সাথে সংলাপ করে তার সাথে চুক্তি করেছে, তখন অপর অংশ এর বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। যারা শান্তিচুক্তির আলাপ ও সমঝোতা প্রক্রিয়ায় ছিলেন তারা আরেকটু সতর্ক হলে বিষয়টি এড়ানো যেতো। সন্তু লারমাও এ চুক্তির ব্যাপারে তার দলের প্রতিবাদী অংশের সাথে কোনোরূপ আলোপ-আলোচনা করা, তাদের মতামত নেয়া, তাদের পুনর্বাসনের আওতাভুক্ত করার কাজটি করেনি। কাজেই সন্তু লারমা অস্ত্র সমর্পণ করে পুনর্বাসিত হলেও তার বিরোধী অংশ অস্ত্র সমর্পণ না করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে সন্তু লারমা অংশের লোকেরাও সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ আস্থাশীল হতে না পারায় শান্তিবাহিনীর একাংশকে ভারী ও উন্নত অস্ত্রসহ জঙ্গলে রেখে ভাঙাচোরা অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তিবাহিনী অফিসিয়ালি অবলুপ্ত করার ঘোষণা দিলেও কার্যত শান্তিবাহিনী বহাল থাকে। এই দুই অংশের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শান্তিচুক্তির পর দুই দশকে নিজেদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ দ্বণ্দ্বে এবং আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভীষিকাময় জনপদে পরিণত করেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শান্তিচুক্তির পূর্বে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭৩, বিজিবি ৯৬, পুলিশ ৬৪, আনসার ভিডিপির ১০ জন। নিহত সেনা সদস্যদের মধ্যে অফিসার ৫ জন, জেসিও ৩ জন, বাকিরা সৈনিক। এছাড়াও দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ, ভূমিধস প্রভৃতি কারণে মারা গেছে আরো অনেকে। এর মধ্যে শান্তিচুক্তির পূর্বে শুধু ম্যালেরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬০ জন এবং পরে ৮১ জন মারা গেছে। উভয় কারণে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তবে শান্তিচুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য মারা গেছে। এর মধ্যে শান্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে মারা গেছে ১১ জন, ৫ জন রাঙামাটির ভূমিধসে।
শান্তিচুক্তির পূর্বে নিরাপত্তা বাহিনী ১৬ শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে গ্রেনেড ৩৫৯টি, মর্টার ৭০টি, মাইন ১৩টি এবং অন্যান্য গোলাবারুদ সাড়ে ৪ লক্ষ। এক পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, শান্তিচুক্তির পরে ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি ২৭৩০টি অস্ত্র ও ১ লক্ষ ৮৬ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শান্তিচুক্তির পূর্বে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ২৩৮ জন উপজাতি, ১০৫৭ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৮১ জন উপজাতি ও ৬৮৭ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ২৭৪ জন উপজাতি ও ৪৬৮ জন বাঙালি।
একই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শান্তিচুক্তির পরে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ৪৭৪ জন উপজাতি, ১৮৬ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬৪৬ জন উপজাতি ও ৬৪২ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ৯১০ জন উপজাতি ও ৩৮৪ জন বাঙালি। এমতাবস্থায় শান্তিচুক্তিতে উল্লেখ থাকা সত্তে¡ও সরকারের পক্ষে সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার সম্ভব হয়নি (আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস ও কৌশলগত ঝুঁকির কথা এখানে বিবেচিত হয়নি)। তবু শান্তিচুক্তির ২১ বছরে সরকার ২৪০টি নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে। দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর যেসকল ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, ওই সকল এলাকা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর অনেকগুলো বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসীরা দখল করেছে। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুনরায় নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন একপাক্ষিক বিষয় নয়, দ্বিপাক্ষিক। সন্তু লারমা অফিসিয়ালি শান্তিবাহিনী অবলুপ্ত ঘোষণা করলেও একথা সূর্যের মতো সত্য যে, শান্তিবাহিনী বিদ্যমান এবং এই বাহিনীর হাতে ভয়ানক মারণাস্ত্র রয়েছে। যে ব্যক্তি নিজে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র সমর্পণ করেননি তিনিই আবার সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি করছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে শান্তিচুক্তি করেও সন্তু লারমা নিজে এখনো বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পরিচয়পত্র গ্রহণ করেননি। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় থেকেও তিনি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালন করেননি। সরকারকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করার দাবি জানানোর পূর্বে তাকে স্বায়ত্ত¡শাসনের দাবি ছাড়তে হবে। কেননা, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাদেশিক কাঠামো বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।
অনেকেই জানেন, শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। এই রিটে উচ্চ আদালত শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারাকে সংবিধান বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। বর্তমানে এই রিটটির আপিল বিভাগে শুনানি চলমান রয়েছে। শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আদালতের এই অবর্জাভেশনগুলোরও সমাধান হওয়া জরুরি। এ চুক্তিতে যে আঞ্চলিক পরিষদের কথা বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত তাকে সংবিধান ও বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর বৈশিষ্ট্য বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে অঞ্চলভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠনের সুযোগ রাখা হয়নি। সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিশেষ উপজাতীয় গোষ্ঠিকে নয়। আদালতের রায়ে এ বিষয়েও বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কোনো পদ কোনো জাতির জন্য বারিত রাখার সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ পদগুলো বাঙালিদের জন্য বারিত করা হয়েছে। চুক্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারকে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পদগুলোতে নিয়োগ ও বদলীর দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের হাতে দেয়ার কথা বলা হয়েছে এবং এসব পদে উপজাতীয়দের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ধারা বাস্তবায়ন তো দূরেরর কথা, এ ধারার আওতায় ইতোমধ্যে মিশ্র পুলিশ সৃষ্টি করে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় পুলিশের আনুগত্য প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসকল কারণেও সরকারের আন্তরিকতা থাকা সত্তে¡ও শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সময় এসেছে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। শান্তিচুক্তিতে বিদ্যমান অসংঙ্গতি, বৈষম্যমূলক বিধান ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা বজায় রেখে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশে সংবিধান যদি ১৭ বার সংশোধিত হতে পারে তবে শান্তিচুক্তি কেন যুগোপযোগী হতে পারবে না? এমনকি শান্তিচুক্তি দ্বারা গঠিত বিভিন্ন আইন ইতোমধ্যে একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে। তাহলে শান্তিচুক্তি কেন আপডেইট করা যাবে না? এখানে সংশোধন শব্দটি পরিহার করে আপডেইট শব্দটি ব্যবহার করা হলো যার সুপ্রযুক্ত বাংলা হতে পারে যুগোপযোগীকরণ। সময়ের ব্যবধানে সন্তু লারমা নিজেও কিছু নতুন নতুন দাবি তুলেছেন, অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠিরও কিছু দাবি রয়েছে, বাঙালিদের দাবি রয়েছে। কাজেই সকলের দাবি আলোচনা করে সংবিধানের ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন দাবিগুলো বিবেচনা করে শান্তিচুক্তি যুগোপযোগী করা অত্যন্ত জরুরি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে এই যুগোপযোগীকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন সম্ভব।
প্রশ্ন হলো, শান্তিচুক্তি ও এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? সংক্ষেপে উত্তর, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হলেই কি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে? উত্তর, কোনোভাবেই নয়। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠিই এই শান্তিচুক্তির আওতার বাইরে রয়েছে। বেশিরভাগ জনগোষ্ঠিকে বাইরে রেখে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে? সন্তু লারমার চুক্তি প্রসীত বিকাশ খীসা, সুধাসিন্ধু কিম্বা তরু চাকমাকে মেনে চলতে বললে তারা তা কখনোই মানবে না। কারণ তারা কেউ সন্তু লারমাকে মানে না? অন্যদিকে শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমা পতাকা উড়িয়ে চলবেন, জেএসএস নেতারা সরকারি বিভিন্ন পদ-পদবী অলঙ্কৃত করে সুবিধা ভোগ করবেন আর প্রসীত বিকাশ খীসা, সুধাসিন্ধু, জলেয়াদের লোকেরা জঙ্গলে অনিশ্চিত জীবন কাটাবে যে চুক্তিতে সে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সে কারণে শান্তিচুক্তির যুগোপযোগীকরণে এদেরও অংশগ্রহণ থাকতে হবে। আমরা আন্তরিকভাবে মনে করি, সরকার যদি সন্তু লারমার সাথে আলোচনা করতে পারে তবে প্রসীত, সুধাসিন্ধু, তরুর সাথে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়? তারা কী এমন করেছেন যা সন্তু লারমা করেননি? পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত¡শাসন দাবি? সে তো সংবিধান মেনে চুক্তি করেও সন্তু লারমা দাবি করছে? হয়তো পূর্ণাঙ্গ শব্দটি ব্যবহার করেননি। কাজেই তারা পাপী হলে সন্তু লারমাকে পূণ্যবান ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে দীর্ঘদিন পুলিশ, র‌্যাব দিয়েও যা পারা যায়নি, বর্তমান সরকার আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনের বনদস্যু, মহেশখালীর জলদস্যুদের সাধারণ ক্ষমা ও পুনর্বাসনের আওতায় অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে সেসব এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে। শুধু সুন্দরবন বা মহেশখালী নয়, বছর দুয়েক আগেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমএনপির বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র সন্ত্রাসীর অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, এ সমস্যার সামরিক সমাধান নেই। তাহলে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার বিকল্প নেই। সে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জেএসএসের(সন্তু) বাইরে বিদ্যমান সকল উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠন ও তাদের সামরিক শাখার সাথে আলোচনা করে তাদের নায্য দাবিগুলো সংবিধানের আলোকে বিবেচনা করে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা জরুরি। অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের এ সকল আঞ্চলিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে আমার পেশাগত যেসব আলোচনার সুযোগ হয়েছিল তাতে আমি দেখেছি, তারা নিজেরাও সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহী এবং আলোচনায় বসলে তাদের নায্য দাবিগুলো বিবেচনা করলে সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী দাবিগুলোতে তারাও ছাড় দিতে প্রস্তুত বলেই আমার মনে হয়েছে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্ধেক জনগোষ্ঠি বাঙালিদেরকে, তাদের স্বীকৃতি ও দাবিগুলোকেও শান্তিচুক্তির আওতাভুক্ত করে বিদ্যমান শান্তিচুক্তিকে যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের স্বার্থে এর কোনো বিকল্পও নেই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Ameen Munshi ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও আশার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা এই চুক্তির ২১ বছরে এসে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে তাদের ইনসারজেন্সী তৎপরতা বন্ধ করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আজ ২১ বছরে এই চুক্তির সফলতা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
শান্তি চুক্তির অসঙ্গতিগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করবো, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। দেরি না করে এখনই চুক্তির যথাযথ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের গুনুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ডের প্রতি উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
Total Reply(0)
আমিন গাজী ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১০ এএম says : 0
লেখকের সাথে শতভাগ একমত। আমি মনে করি- আজ ২১ বছরের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তির ফলাফল বিবেচনা করার সময় এসেছে। চুক্তির ফলে কি করেনি সরকারের উপজাতীয় জনগণের কল্যাণ ও তাদের উন্নয়নে? আজ উপজাতীয় জনগণের প্রতিটি ঘরে শিক্ষিত তরুণ যুবক। প্রতি ঘরে কমপক্ষে একজন চাকুরীজীবী, চাকমাদের শিক্ষার হার ৯৭%। প্রতিটি এলাকার দেশী-বিদেশীদের অঢেল অর্থের উন্নয়ন। আজ উপজাতীয়দের চলাফেরা দেখলে মনে হয় আমরা কোন ইউরোপীয় দেশে আছি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, আর্মি অফিসার, পুলিশ অফিসার, অর্থশালী ব্যবসায়ী হাজারে হাজারে। বিসিএস সহ সকল চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থা, অগ্রাধিকার ব্যবস্থা, সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা ব্যবস্থা, ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ সহ সব মিলিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগনের উন্নয়ন এই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত যে কোন অঞ্চল থেকে অনেকগুণ উন্নত। এগুলো দেখতে ভালই লাগে। আমাদের উপজাতীয় ভাইয়েরা এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ব্যবসায় ট্যাক্স ভ্যাট দেয়া লাগে না, ঠিকাদারী ব্যবসায় ট্যাক্স মওকুফ, উন্নয়নে অর্থ গ্রহণে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অথরিটির মধ্যে অর্থাৎ আঞ্চলিক পরিষদ, ৩টি জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স, ৩ জন সার্কেল চীফ, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ সর্বত্র উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে চলছে। তিন পার্বত্য জেলার সকল সরকারি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবীদের সিংহভাগই উপজাতীয়। সেখানে পার্বত্য বাঙালি চাকুরীজীবী খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে। অথচ সন্তুু লারমার শুধু চাই আর চাই। চুক্তির শর্তানুযায়ী যে শান্তির জন্য এত কিছু এত উদ্যোগ সে শান্তি কি এসেছে? তাই আজ এই চুক্তি পনর্বিবেচেনার দাবি রাখে।
Total Reply(0)
Saiful Islam ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১৪ এএম says : 0
গত ২১ বছর যাবত সন্তু লারমা প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান। সে আঞ্চলিক পরিষদ শুধু সরকার থেকে নেয়, বাংলাদেশ সরকারকে একটি টাকাও কর বা আয় দেয় নাঅ সেই আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও তিনি কি তার গেরিলাজীবনের আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়েছেন? সরকার চুক্তির নামে সন্তু লারমাদের শুধু দিয়েই গেল, তার বিনিময়ে কি পেল বাংলাদেশ! আজ সে প্রশ্নও করতে হয়। সন্তু লারমা এদেশের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও বাংলাদেশের নাগরিক নন। ভোটার তালিকায় নাম নেই তার। বিজয় দিবসে বা শহীদ দিবসে স্মৃতিসৌধে বা শহীদ মিনারে যাওয়ার নজির তার নেই। কোন রাষ্ট্রীয় দিবসে তিনি দেননা কোন বাণী। তার জে এস এস নেতারা জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছেন। অতএব আজই সরকারকে বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে, যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধন্যবাদ লেখককে।
Total Reply(0)
বাকী বিল্লাহ ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১৬ এএম says : 0
উপজাতীয় সংগঠনগুলোর নেতারা ব্যস্ত ধর্ষন, চাঁদাবাজি, খুন রাহাজানিতে। সেখঅনে অস্ত্রের ঝনঝনানীতে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলীয় বি.এন.পি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, আর্মি, পুলিশ, প্রশাসন পর্যন্ত অসহায়। তাহলে চুক্তির ফল আমরা পেলাম কোথায়? একপাক্ষিক ভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারে না।
Total Reply(0)
আরিয়ান রাসেল চৌধূরী ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:১৯ এএম says : 0
সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয় জয়কার হলেও পার্বত্য এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জে এস এস এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে নমিনেশন পেপার পর্যন্ত কিনতে পারেননি। সাধারণ বাঙালিদের তাহলে কি অবস্থা, ৩য় শ্রেণীর নাগরিক হয়েই তাদের জীবন যাপন। চুক্তি তাদের জাতীয়তা পরিবর্তন করেছে। এদেশে এখন ৩ ধরনের নাগরিক। বাংলাদেশী, উপজাতীয় এবং অ-উপজাতীয়। পাহাড়ে কি আছে বাঙালীদের? নাই শিক্ষা, নাই চাকুরী, নাই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাই কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই, নাই ভূমি, নাই কোন আবাসন। বাঙালিরা আজ নিজ দেশে পরবাসী। হয়তো কিছুদিন পর রোহিঙ্গার মত পরিণতি ভোগ করতে হবে পার্বত্য বাঙালিদের। কারণ পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে পার্বত্য বাঙালিদের বৈধ, দখলীয় নিজ বাস্তুভিটা হতে উচ্ছেদ করার জন্য। অথচ চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করার কথা ছিল শুধু মাত্র উপজাতীয় নির্দিষ্ট সংখ্যক শরণার্থীদের ভূমি সমস্যার সমাধানের জন্য। এ সব কিছু আজ ভাবলে ক্ষোবে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। সরকারের দুর্বল অবস্থান এই সমস্যাকে জিয়ে রেখেছে।
Total Reply(0)
তামিম আবদুল্লাহ ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৪ এএম says : 0
আমরা সংবিধান পরিপন্থী পার্বত্য শান্তি চুক্তি মানি না। আপিল বিভাগে বিষয়টি পেন্ডিং থাকা অবস্থায়ও কিভাবে চুক্তি অনুযায়ী কাজ চলছে তা বুঝে আসে না। সাংবিধানিকভাবেও চুক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই। সংবিধান পরিপন্থী কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেয়া কখনিই ঠিক হবে না। আপিল বিভাগ রায় দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই এখন আপাতত আমরা এটা মানতে রাজি না।
Total Reply(0)
আমজনতা কহে ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
আসলে এই চুক্তি একদিকে উপজাতীয় জনগণকে দিয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা আর প্রাচুর্য আর বাঙালি জনগণ নিমজ্জিত হয়েছে না পাওয়ার হতাশা আর বেদনায়। বাঙালি জনগণের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধার বিধান এই চুক্তিতে রাখা হয়নি। তাই উপজাতীয় আর বাঙালি জনগণ দুই ভাইয়ের বিভেদ দিন দিন প্রকট হচ্ছে। আর একদিন এসব বিভেদ গণবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। একদিকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের তান্ডব অন্যদিকে অসহায় পার্বত্য বাঙালির কান্না পার্বত্য চট্টগ্রামের আকাশ পাতাল ভারী করে তুলেছে। সাধারণ বাঙালি চাকুরী, শিক্ষা-দীক্ষা হতে বঞ্চিত হয়ে বেছে নিয়েছে শ্রমিক, মজুর ক্ষেত খামারীর কাজ। সেখানেও শান্তি নাই। সবখানে চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের জোর জুলুম। নিজ দেশে এমন পরাধীনতা আমরা কখনই মেনে নিতে পারি না।
Total Reply(0)
অর্ণব ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:২৮ এএম says : 0
So Beautiful write-up. Lots of Thanks to writer Mehadi Hasan Palash. Save CHT, Save Bangladesh.
Total Reply(0)
আব্দুল্লাহ হাসান মামুন ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩১ এএম says : 0
আমি সরকারকে বলতে চাই- চুক্তি শুধু বাস্তবায়ন করলেই হবেনা। এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের সরকার কি পেল তা মূল্যায়নের সময় এখন হয়েছে। এখন ভাবতে হবে সন্তু লারমাকে এতসব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ কি পেল। সন্তু লারমাদের সকল সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে এখনও প্রতিদিন ধর্ষিত হয় বাঙালি নারী। কাপ্তাই লেকে ভেসে আসে নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়ার লাশ। এভাবে আর কতদিন। যে চুক্তি পার্বত্য বাঙালিরা মেনে নেয়নি সে চুক্তি পার্বত্য বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেয়া কতটুকু যুক্তি সংগত? পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন মগের মুল্লুক। এই মগের মুল্লুক হতে পার্বত্য বাঙালিরা রোহিঙ্গাদের পরিণতি ভোগ করতে মনে হয়, আর বেশিদিন দেরী নাই। তাই পার্বত্য জনগণকে নিজের ভূমি নিজের জীবন জীবিকা নিয়ে ভাবতে হবে। আর সরকারকে ভাবতে হবে কি প্রতিদান এল এই চুক্তি থেকে। চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন এখন সময়ের দাবী।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩২ এএম says : 0
একটা কথা মনে রাখতে হবে এক ঘরে দুই ভাইয়ের মধ্যে একভাইকে অনাহারে রেখে অন্যভাইকে বিরিয়ানী খেতে দিলে সে ঘরে শান্তি কোনদিন আসবে না। তাই পার্বত্য বাঙালিদের উন্নয়ন বঞ্চিত রেখে চুক্তির সফলতা দুরহ থেকে যাবে। ধন্যবাদ বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরার জন্য।
Total Reply(0)
Tugun Changma ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৪ এএম says : 0
শান্তি রে শান্তি গেলা তুমি কোথা রে?
Total Reply(0)
তানভীর আহমেদ ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৩৮ এএম says : 0
সরকার কি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূ-খন্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে? নাকি স্বাধীন জুমল্যান্ড গঠনে একধাপ এগিয়ে দিচ্ছে? এ প্রশ্ন এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯ লাখ বাঙালী সহ কোটি-কোটি নাগরিকের। উচ্চ আদালতে অবৈধভাবে ঘোষিত আঞ্চলিক পরিষদের নেতাদের সাথে বৈঠক করে তাদেরই সুপারিশে সরকার এমন একটি আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির উপর তথা বাংলাদেশের একদশমাংশ ভূ- খন্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাবে।দীর্ঘদিন ধরে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন এবং আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পৃথক ভূখন্ড গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছে একটি মহল। মূলত আড়াইশ বছরের অভিবাসী হয়ে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে তারা ৪ হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙালীদের বহিরাগত আখ্যাদিয়ে বিতারিত করার চেষ্টায় সক্রিয় রয়েছে। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত চুক্তিতে নিজেদের উপজাতীয় হিসাবে পরিচয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি নিয়েও আবার নিজেদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা নিতে উঠেপড়ে লেগেছে খোদ সন্তু লারমা তথা আঞ্চলিক পরিষদ। এটা প্রতিষ্ঠা পেলে পার্বত্য তিন জেলায় সরকার তার নিজ কর্তৃত্ব হারাবে ধারণা করছে অভিজ্ঞ মহল। উঠে যাবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত আইনের শাসন। পাহাড়ীরা তাদের নিজস্ব আইনের শাসনে চলবে। ইচ্ছা করলেও অন্য কেউ জায়গা কিনতে পারবে না। একই সঙ্গে সরকারের অধীনে থাকা কাপ্তাই প্রকল্প, বেতবুনিয়া ভূউপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমিও তাদের অধীনে চলে যাবে।সরকার স্ব-উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনার অধিকার বঞ্চিত হয়ে কার্যত: পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূ-খন্ডের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে। এরই মধ্য দিয়ে স্বাধীন জুমল্যান্ড (বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র) গঠনের স্বপ্নে আরেক ধাপ এগিয়ে নিলেন ষড়যন্ত্রকারীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ঠদের এধরনের ঐকমত্যের সিদ্ধান্তে হতবাক পাহাড়ের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ। উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বারবার উপেক্ষিত হয়ে আসা প্রায় ৯ লাখ পার্বত্য বাঙালি জনগোষ্ঠির মধ্যে।
Total Reply(0)
শাহ আলাম খোন্দকার ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
শান্তিচুক্তির সূচনায় অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, কথিত এই শান্তিচুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। কারণ, দীর্ঘ ২২ বছর আগে করা এই শান্তিচুক্তি শুরুতেই মেনে নেয়নি সেখানকার তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। বলা হয়, এ তিনটি গোষ্ঠীতে এখনো সক্রিয় রয়েছে প্রায় দুই হাজার সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এরা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিষ্ঠা করতে চায় জুমল্যান্ড কিংবা স্বায়ত্তশাসিত সরকার। এই গোষ্ঠী তিনটি হচ্ছে- জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- সন্তু), জনসংহতি সমিতি (সংস্কারবাদী) এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তাদের হাতে ভারি ভারি অস্ত্র রেখে কিভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব আমার বুঝে আসে না!!
Total Reply(0)
আবেদ সুলতান মনি ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 0
চুক্তির এতগুলি বছর পর পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ ও হতাশাজনক। এ অবস্থা চলতে থাকলে সেখানকার বাঙালিদের অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ন্যায় শিক্ষা ও চাকরি বা সামাজিক অবস্থান বিবর্জিত এক দুর্বল সম্প্রদায়ে পরিণত হবে। নৃতত্ব গবেষক ও বাংলাদেশের ইতিহাসবিদদের গবেষণায় প্রমাণিত যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতীয়রা আদিবাসী নয়। বরং বাঙালিরাই ঐ জনপদে মোঘল আমল থেকেই বসতি গড়ে তুলেছেন এবং ক্রমান্বয়ে বসবাসের উপযোগী করেছেন। পাহাড়ি জঙ্গল টিলা ভূমি আবাদ করে মানুষের বসবাসযোগ্য করেছেন এবং দীর্ঘকাল বন্য হিংস্র প্রাণীদের সাথে লড়াই করে পার্বত্য জনপদকে আবাদযোগ্য ও বিচরণযোগ্য করেছেন এ নির্মম সত্য কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। উপজাতীয়দের জীবন মান উন্নয়ন, চাষাবাদ সেখানো, সভ্য সমাজে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা ঐ এলাকায় স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, মক্তব নির্মাণ করে সভ্যতার আলো ছড়ানো বাঙালি জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করার সুযোগ কী আছে? বেশিদিন আগের কথা নয় একজন বাঙালি শিক্ষক পুরো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাকী শিক্ষা প্রদান করেছেন গহীন জঙ্গলে, যেখানে যাওয়া ও আসার ভাল কোন রাস্তা-ঘাট ছিল না। শিক্ষার আলো ছড়ানোর ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান শিক্ষকদের অবদানের কথা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? যে ভূমিকে তারা আবাদযোগ্য এবং বসবাসযোগ্যরূপে গড়ে তুললেন এবং যে ভূমিতে বংশ পরম্পরা তাদের বংশধরেরা বেড়ে উঠেছে এবং পার্বত্য এলাকার কবরস্থানগুলোতে বাঙালি মুসলমানরা কবরস্থ হয়েছে সে জনপদ থেকে বাঙালিরা বিতাড়িত হবে, অধিকার হারিয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে, এটা কি কল্পনা করা যায়? তাই পার্বত্য চুক্তি যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি।
Total Reply(0)
Nannu munshi ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ২:৫১ এএম says : 0
সে সময় সরকারের তরফ থেকে প্রতিবাদী দেশপ্রেমিক জনতাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, পার্বত্য জনপদে চিরদিনের জন্য শান্তির সুবাতাস বইবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভীত মজবুত হয়ে বাঙালি-পাহাড়ী একসাথে বসবাস করার পরিবেশ গড়ে উঠবে ইত্যাদি। কিন্তু সচেতন দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল মতাদর্শের বাঙালি ও সাধারণ উপজাতিবৃন্দ সরকারের একথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি। তারা আশঙ্কা করেছিলেন তথাকথিত শান্তিচুক্তির নামে এ জনপদ দেশের এক দশমাংশ ভৌগোলিক এলাকা ক্রমশ বিচ্ছিন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে এবং বিদ্রোহী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হবে। চুক্তির ২১ বছরে আজ এ বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে। সরকারের উদ্দেশ্য কতটুকুন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বিদ্রোহী উপজাতিবৃন্দের বিচ্ছিন্নতা কার্যক্রম কতটুকু এগিয়েছে আর সাধারণ বাঙালি জনগোষ্ঠী ও উপজাতীয়রা কেমন আছে?- এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কেননা সচেতন মহল মনে করেন শান্তিচুক্তি নামক অশান্তির বীজ বপণ করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে গেছে!!!
Total Reply(0)
তারেক ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩:৩৫ এএম says : 0
এভাবে এগোতে থাকলে , একসময় বাংলাদেশ পার্বত্য এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এটা নিশ্চিত। আমি অনেক চাকমাদের ফেবু আইডি আর পেজে জুমল্যান্ড নিয়ে নানান প্রচারণা করতে দেখেছি। সুতরাং আমাদের চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন