লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অপারেশন থিয়েটার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকার পরও দু’একটি নরমাল ডেলিভারি ছাড়া অন্য কোন ছোট-বড় অপারেশন করা হয় না এই হাসপাতালে। নিরুপায় হয়ে রোগীরা পাশের কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচসহ নানা হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় নদী ভাঙা এ অঞ্চলের লাখো মানুষকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, এ হাসপাতালে নিয়মানুসারে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদে ৪ জনের স্থলে ১ জন রয়েছে। ২১ জন ডাক্তারের স্থলে ১১ জন, ২২ জন নার্সের বিপরীতে ১৩ জন নার্স রয়েছে। এমএলএস ৫ জনের বিপরীতে ১ জন, ওয়ার্ড বয় ৩ জনের বিপরীতে ১ জন, ২ জন ওটি বয় থাকার কথা থাকলেও বর্তমান একজনও নেই। নেই একজন আয়াও। ২ জন সিকিউরিটি গার্ড থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই। ৫ জন পরিছন্নকর্মীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ২জন। মালির পদটিও শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। বাথরুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধে রোগিদের ওয়ার্ডেও থাকা বড় দায়। বহিঃবিভাগে রোগীরা লাইনের পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় জমাতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে স্যালাইন পুশ করে দিতে টাকা দিতে হয়। পরীক্ষার জন্য টাকা গ্রহন করা হলেও রশিদ দেয়া হয় না। ঠিকমত ওষুধ দেয়া হয় না। বাইর থেকে ওষুধ ক্রয় করতে হয় রোগীদের। হাসপাতালের ভেতরের অবস্থা খুবই নোংরা।
এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সরবরাহকৃত রোগিদের খাবার নিয়ে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলেও এতে অনিয়ম রয়েই গেছে। এখনো প্রায় সময়ে দুপুর ও রাতের খাবারে দেয়া হয় শুধুমাত্র ডিম ও ঝোল। সকালে নাস্তা হিসেবে দেয়া হয় পাউরুটি কলা। দুপুরে খাবারে পাঙ্গাস দেবার অভিযোগও রয়েছে। সময়ানুযায়ী দেয়া হয় না দুপুরের খাবার। নিয়মিত আপডেট করা হয় না রোগি ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যবোর্ডটিও। ল্যাব কার্যক্রমের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বাহিরের লোকবল দ্বারা।
কারামতিয়া চৌরাস্তা এলাকা থেকে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগি বাদশা আলম জানান, শুক্রবার দুপুর এবং রাতে শুধুমাত্র ডিম দেয়া হয়েছে। এর আগের দিন দুপুর বেলা দেয়া হয়েছে পাঙ্গাস মাছ। অনেকেই অভিযোগ করে আরো বলেন, খুব সামান্য সমস্যায়ও রোগীদের রেফার্ড করা হয় অন্য হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ গোলাম ছারোয়ার জানান, নির্ধারিত জনবল না থাকায় এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশীষ মজুমদার জানান, ব্যাপক জনবল সঙ্কটের কারণে আমাদের চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন ১২০-২৫ টাকা দিয়ে তিনবেলা খাবার কিভাবে দিবে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন তবুও আগের ছেয়ে সেবার মান অনেক বেড়েছে। অন্য সমস্যাগুলো তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন