২৪ বছরেও পূর্নাঙ্গ রুপ পায়নি রাঙামাটির বিসিক শিল্পনগরি। বর্তমানে ৮৬টি প্লটের মধ্যে ৮৫টি প্লট বরাদ্দ হলেও মাত্র ১৩টি ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। রাস্তাঘাট ও পানির তীব্র সংকটসহ নানান সমস্যার কারণে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এছাড়া এই শিল্প নগরীর জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হলেও গত পাঁচ বছর ধরে সেটি অকেজো পড়ে রয়েছে। তবে রাঙামাটির বিসিক শিল্পনগরীর কর্তৃপক্ষ বলছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি মেরামতের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ১৯৯৮ সালে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করে। পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন এবং বিকাশে কাজ শুরু করে তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মোট সাড়ে ১২ একর জায়গায় এ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে মাত্র ১৩টি ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা। এর মধ্যে রয়েছে আইচপ্লান্ট, তন্ময় অটোরাইস মিল, রাঙামাটি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল খায়ের ফার্নিচার মার্ট, প্যারামাউন্ট অটো ফ্লাওয়ার মিল, বাবর টেক্সটাইলসহ ইত্যাদি। এই শিল্প নগরীর ৮৬টি প্লটের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮৫টি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শিল্পনগরীর নানান সমস্যা ও সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের সংলগ্ন নিচু এলাকায় মাটি ভরাট করে শিল্প নগরীটির জায়গা নির্ধারণ করা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুম আসলে শিল্প নগরীটি এলাকাটি পানিতে তলিয়ে যায়। শিল্পনগরীতে মালামাল নেয়ার জন্য গাড়ি চলাচলের অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হলেও সেটি ভেঙে গেছে। এ পর্যন্ত কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া শিল্পনগরীর এলাকার চারপাশে কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত রয়েছে। দৃশ্যত শিল্পনগরী এলাকাটি এখন গোচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে আরো জানা গেছে, এই শিল্পনগরীর অন্যতম সংকট হচ্ছে পানি সরবরাহ। দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হলেও ২০১৭ সালের দিকে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আর কোন মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে কোটি টাকার মূল্য সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি দেখাশুনার জন্য ইসমাইল নামে একজনকে দায়িত্বে হলেও গত পাঁচ বছর ধরে নষ্ট থাকায় তারও এখন কোন কাজ নেই। শুধুমাত্র ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির সরঞ্জামগুলো কেউই চুরি না হয় তার জন্য দেখাশুনা করে যাচ্ছেন।
বিনিয়োগকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তন্ময় অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তপন কান্তি পাল বলেন, শিল্পনগীর অভ্যন্তরীণ সড়কটি করা হলেও সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। সড়কটি এমনভাবে করা হয়েছে কারখানা থেকে মালামাল উঠানো যায় না। এ ব্যাপারে বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার দাবি জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। এছাড়া এখানে পানি তীব্র সংকট রয়েছে। যে পাম্প মেশিনটি বসানো হয়েছে সেটি নষ্ট হওয়ার পর আর কোন সংস্কার করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই শিল্পনগরীতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে কারখানা করেছেন। বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ জন শ্রমিক তার কারখানায় কাজ করছেন। সরকারের কাছ থেকে কোন সহায়তা এখনো পাননি। সরকার যদি প্রণোদনা হিসেবে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার ঋণ দিলে আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। তিনি বলেন, বহু বছর আগে এই শিল্প নগরী এলাকা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিনিয়োগকারীরা প্লট ক্রয় করলেও তারা এখনো কোন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেননি। বিসিকের আইনে রয়েছে প্লট ক্রয়ের এক বছরের মধ্যে কারখানা স্থাপন করতে হবে।
রাঙামাটি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা বাঁধন হাসান বলেন, শিল্পনগরী পুরোদমে চালু করতে একটু সময় লাগবে। কারণ এখানে কিছুটা প্রতিকূলতা রয়েছে। এর মধ্যে এলাকাটি নিচু স্থানে হওয়ার কারণে বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায়। এখানে আরো রাস্তাঘাট করে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ঢাকায় চাহিদা চেয়ে বাজেট পাঠানো হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে বাজেট পাওয়া যেতে পারে। আশা করছি ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এই শিল্পনগরটি কর্মব্যস্ত হয়ে উঠবে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসের কারণে এই শিল্পনগরীর জন্য দুই কোটি টাকার ব্যয়ের স্থাপনকৃত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে অকেজো অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে মেরামতের জন্য বিসিকের প্রধান অফিসে মেরামতের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সেটি পুনরায় মেরামতের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন পড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন