প্রভাবশালী ইরাকি শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় রাজধানী বাগদাদে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ সহিংসতায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির পর নিজের সমর্থকদের ইরাকের রাজপথ ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইরাকের শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদর। গতকাল এক টেলিভিশন ভাষণে সমর্থকদের এক ঘণ্টার মধ্যে রাজপথ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারে দেখা যায় তার সমর্থকেরা রাজপথের অবস্থান ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন। এদিকে ইরাকের সেনাবাহিনী কেবলই কারফিউ শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে রাজপথে আবারও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সোমবার মুক্তাদা আল সদর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তার সমর্থকেরা রাজধানী বাগদাদের সুরক্ষিত অঞ্চল গ্রিন জোনে ঢুকে পড়লে সহিংসতা শুরু হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। ইরাক এবং জাতিসংঘের বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা ধৈর্য্য ধারণের আহŸান জানানোর পর মুক্তাদা আল-সদর টেলিভিশণ ভাষণে বলেন, ‘এটা কোনও বিপ্লব নয়’। প্রায় ১০ মাস আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এখনও পর্যন্ত দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মুক্তাদা আল সদরের দলের তরফে উত্থাপিত কিছু দাবির কারণে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেই সোমবার এক বিবৃতিতে স্থায়ীভাবে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন সদর। ওই ঘোষণার পর তার সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। মূলত ইরান সমর্থিত শিয়া গ্রæপগুলোর সঙ্গে মুক্তাদা আল-সদর আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানোর পর ইরাকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। এর জেরেই রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন সদর। সদর অক্টোবরের নির্বাচনে বিজয়ী হন। তিনি ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকার গঠনে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাÐ ঠেকাতে পার্লামেন্ট থেকে তার দলের আইনপ্রণেতাদের পদত্যাগ এবং সমর্থকদের সরকারি ভবন দখলে নিলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সোমবার তা সহিংসতায় রূপ নেয়। গতকাল ইরাকে আরও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দেশটির সঙ্গে থাকা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। মুক্তাদা আল সদরের ঘোষণার আগেই তার সমর্থকদের মেশিন গান এবং রকেট চালিত গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায়। সুরক্ষিত গ্রিন জোনের কংক্রিটের দেয়ালের একটি অংশ গুড়িয়ে দেয় সদর সমর্থকেরা। গ্রিন জোনের অভ্যন্তরে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিচ্ছিন্নভাবে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। ইরাকের দুই মেডিক্যাল কর্মকর্তা জানিয়েছেন অন্তত ৩০ জন নিহত এবং চারশ’র বেশি মানুষ আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে সদর সমর্থক এবং তাদের বিরোধীরাও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সূত্র : এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন