রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা পদ থেকে সরাতে সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের পর একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। গতকাল দলের চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে প্রেসিডিয়ামের সভায় রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই পদে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বসানোর বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সংসদীয় দল ও প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধানের পর রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ ছাড়তেই হচ্ছে।
জানা গেছে, রওশন এরশাদ সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দলকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টায় জাতীয় কাউন্সিলের আহবান করেছেন বলে মনে করছেন দলের নেতারা। নেতাদের বক্তব্য তারা আর আওয়ামী লীগের বি-টীম হিসেবে থাকতে চান না। দলের পরিচিতি ক্রাইসিস থেকে বের হতেই রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা রাখতে চাচ্ছেন না।
গতকাল শনিবার প্রেসিডিয়ামের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে সংসদীয় দলের সভার প্রস্তাবণার প্রতি সমর্থন জানানো হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে কেউ হাত মেলালে সে যে লেভেলের নেতাই হোক, তাকে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হবে।
এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে দেবর-ভাবির মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। এরশাদের মৃত্যু পর রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের পৃথকভাবে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য স্পিকারকে পত্র দেন। তখন বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন রওশন এরশাদ। স্পিকার শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদকে প্রমোশন দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা ও জিএম কাদেরকে উপনেতা করেন। গত ৩১ আগস্ট রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে ২৬ নভেম্বর পার্টির কাউন্সিল আহ্বান ও একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরাতে গত ১ সেপ্টেম্বর স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল এক যোগদান অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের বি-টিম থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। তিনি বলেছেন, দেশে নারীদেরও এখন অপহরণ করা হচ্ছে। হতভাগ্য নারীদের কেউ ফিরে আসছেন আবার কেউ চিরদিনের মতো হারিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশি গণমাধ্যমে এমন সংবাদে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবেক্ষুন্ন হচ্ছে। এ দেশে এখন আর গণতন্ত্র নেই। দেশের মানুষের কোনো অধিকার নেই। দেশের কোথাও জবাবদিহিতা নেই।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা আছে। জাতীয় পার্টি কখনোই আওয়ামী লীগের বি-টিম নয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। তারা দেশের মানুষের সাথে মিথ্যাচার করে বলেছে, এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামলের চেয়ে জনগণকে বেশি অধিকার দেওয়ার কথা হবে। আসলে, পল্লীবন্ধুর দেশ পরিচালনার সময় সাধারণ মানুষ যে অধিকার ভোগ করেছে, এখন তার ছিটেফোটাও নেই। এখন নির্বাচনের নামে প্রহসণ চলছে। তিনি আরো বলেন, প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। অথচ তারা ইচ্ছেমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারছেন না, এমনকি পছন্দ মতো না হলে প্রতিনিধি পরিবর্তনেও তারা আজ অপারগ। প্রতিনিধিদের সরকার পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন দৃশ্যমান নয়। এক কথায় জনগণ মালিক বা দেশ যে প্রজাতন্ত্র তা বাস্তবে অনুপস্থিত। দেশের ওপর সাধারণ জনগণের মালিকানা স্বত্ত্ব ছিনতাই হয়ে গেছে।
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, সাধারণ মানুষ রাজনীতি ও ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চাই প্রকৃত গ্রণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণ, দুর্নীতির অবসান ও বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধশালী নতুন বাংলাদেশ গড়াই আমাদের রাজনীতি।
প্রেসিডিয়াম সভায় বক্তৃতা করেন জাতীয় পাটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, বিরোধীয় দলীয় চীফ হুইপ মোঃ মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ আবুল কাশেম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাহিদুর রহমান টেপা, এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফকরুল ইমাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এ. টি. ইউ. তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা এমপি, আব্দুর রশীদ সরকার, আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন