জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনসহ রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী নিয়ে দ্রোহের আগুনে পুড়ছে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টি। জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের বিরোধ দৃশ্যত মিটে গেলেও রংপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে এই আগুন ক্রমেই তীব্রতর হতে শুরু করেছে।
উপনির্বাচনে রওশনের ছেলে রাহুগির আল মাহির সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেয়ায় তা এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে জাতীয় পার্টি রংপুরে ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সাদ’র বিষয়টি এখনো মেনে নিতে পারেননি মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আহমেদ ও এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারসহ তৃণমুলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এর প্রেক্ষিতে কার্যতঃ ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়েছে রংপুর জাতীয় পার্টি। তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকেই প্রকাশ্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তৃণমুলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের মতে, দলের চেয়ারম্যান এইচ, এম এরশাদ এই আসনের এমপি হওয়ায় প্রায় দুই দশক ধরে তারা এমপিকে কাছে পান না। বিভিন্ন সময় বিষয় নিয়ে এমপি’র সুপারিশ কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে এমপি’র ধারের কাছেও তাদের যাওয়া সম্ভব হয়নি। এতদিন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ এই আসনের প্রার্থী হওয়ায় তারা এ বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তার অবর্তমানে তারা এ বিষয়টিতে ছাড় দিতে নারাজ। তারা এখন স্থানীয় ব্যক্তিকেই এ আসনে এমপি হিসেবে দেখতে চান। সে কারনে মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস,এম ইয়াসিরকে তারা প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের সর্ব শেষ সিদ্ধান্তে তারা চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন।
এরশাদের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন লালু (সাবেক এমপি)’র ছেলে সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর এবং মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস,এম ইয়াসির উপ-নির্বাচনে মনোনয় পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে এর মধ্যে এস,এম ইয়াসিরের মনোনয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহুর্তে গিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাদ এরশাদকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে করে রংপুরের তৃণমুলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটার যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন। সিটি মেয়র এবং মহানরগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সরাসরি ঘোষণা দেন- রংপুরের নেতাকর্মীরা সাদ’র পক্ষে কাজ করবে না এবং তার পক্ষেও সাদ এরশাদের হয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। সাদ এরশাদকে চূড়ান্ত প্রার্থী করায় ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর এবং এস,এম ইয়াসির আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আর এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ঘোষণা দেন। ফলে জাতীয় পার্টির একপি গ্র“প প্রকাশ্যেই আসিফ শাহরিয়ারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নেয়।
জি এম কাদেরপন্থীরা বলছেন, প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভা করে সিদ্ধান্ত হলো ব্যারিস্টার আনিস ও ফখরুলকে অব্যাহতি দেয়ার। এ বিষয়ে আমাদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা না করেই এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হলো। পার্টির এ সিদ্ধান্তে সে বৈঠকে উপস্থিত সিনিয়র ৩৪ জন নেতাকে অপমান করা হয়েছে।
এ ছাড়া যে ব্যক্তি পার্টি অফিসে মনোনয়নপত্রই জমা দেননি এমনকি আমাদের মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাৎকার দেননি তাকেই মনোনয়ন দেয়া হলো। এতে করে বৃহত্তর রংপুরের তৃণমূলের আস্থা হারিয়েছেন জি এম কাদের।
রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, জি এম কাদের যদি নিজের অবস্থান শক্ত করতে না পারেন, অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারেন তাহলে দল শক্তিশালী করা তার পক্ষে কঠিন হবে। আমাকে মনোনয়ন বোর্ড সিলেক্ট করে পরে আবার সাদকে মনোনয়ন দেয়া হলো। রংপুরের তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছেন। মনোনয়ন পরিবর্তন করে শুধু আমাকেই নয় রংপুরবাসীকেও অপমান করা হয়েছে। আমাকে পার্লামেন্টারি বোড মনোনয়ন দিয়েছিল। তাই আমি মনোনযন পত্র সংগ্রহ করেছিলাম।
এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার বলেন, দল বারবার ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বার বার দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি পরিবারের সদস্য এবং জাপার সাবেক একজন এমপি হিসেবে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছি।
জি এম কাদেরপন্থী পার্টির এক সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আমরা শুনেছি আওয়ামী লীগ রংপুর-৩ আসনে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনেরাও রংপুরে সাদকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। সাদ বিজয়ী হওয়ার পর আগামী ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাপার কাউন্সিলে সাদ যদি পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী হন তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা যারা জি এম কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম তাদের বেশির ভাগই তিনি আর কাছে পাবেন না। আমরা মনে করি জি এম কাদের আপস করেছেন। পার্টির অনেক সিনিয়র নেতাসহ তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মী পার্টির কর্মকাণ্ড থেকেও নিস্ক্রিয় হয়ে যাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন