কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিনাঞ্চের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফানাই নদীর ওপর নির্মিত ৬টি গ্রামীণ সড়কের সেতু নদী পুন:খননের পর ভেঙে ও দেবে গিয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন ৪টি ইউনিয়নের ৪০ সহস্রাধিক মানুষ।
এসব সেতু দেবে যাওয়ার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছেন ‘ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিতভাবে নদী পুন:খনের জন্য সেতুগুলো দেবে গেছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন ‘কর্তৃপক্ষ নদীর পরিমাপ বিবেচনায় না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় এখন সেতু দেবে গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফানাই নদীর ওপর ১৯৯৭-'৯৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার হাসিমপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কে একটি, ভবানীপুর-নর্তন-তিলাসীজুড়া সড়কে একটি মুকুন্দপুর কবিরাজী সড়কে একটি, গুতগুতি-কবিরাজী সড়কে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবির) আওতায় উপজেলা প্রকল্প অফিসের বাস্তবায়নে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ভবানীপুর-হেলাপুর সড়কে একটি ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে মুকুন্দপুর-পালগ্রাম সড়কে নির্মাণ করা হয়। ২০২১-'২২ অর্থবছরে পাউবো প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফানাই নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে পুনঃখনন করে। কাজ সম্পন্নের আগেই অতিবৃষ্টিতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামে। তখন এসব সেতুর মধ্যবর্তী স্থান দেবে যায় ও সংযোগ সড়কের দুই পাশ ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে সিএনজিচালিত যাত্রীবাহী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৬টি সেতুর মধ্যে ২ টি সেতু এক বছর আগে দেবে গিয়েছে।হাসিমপুর লক্ষিপুর সড়কের দিন দিন দিন দেবে যাচ্ছে এলজিইডি সাইন বোড় আর লাল পতাকা বাঁধা রয়েছে। এটা দেখে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও যান চলাচল করছে,ও ভবানীপুর - নর্তন রাস্তায় কাজল মিয়ার বাড়ী পাশে সেতুটির একি অবস্হা।গত ৫ মাস আগে উজান ঢলে মুকুন্দপুর-পালগ্রাম সড়কে নির্মিত সেতুটি দুইপাশ ভেঙে গিয়ে সেতু পুরোপুরি দেবে যাচ্ছে।বাঁশের শাঁকো দিয়ে মানুষ চলাচল করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,এই সেতুটি এই নদীর উপর নির্মান করা ভুল ছিল। এই নদীতে আরো বড় সেতু নির্মান করা দরকার ছিল। নদী পুন:খননের পর থেকেই সেতুগুলো দেবে গিয়েছে। তিনটি সেতু দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপার হতে হয়। দুটি সেতু একেবারে ভেঙে গেছে।এদিকে নদী গভীরের ফলে লস্করপুর রাঙ্গিছড়া পাকা রাস্তার লক্ষিপুর অংশে প্রায় ৪শ মিটার রাস্তা নদীর পাহাড়ী ভেঙ্গে নিয়েছে। চৌধুরী বাজার মুকুন্দপুর পাকা রাস্তার হাসমত মিয়ার বাড়ীর পাশে প্রায় ৫ মিটার ভেঙ্গে গিয়েছে।রক্ষাকরার কোন উদ্যোগ নেই।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী বলেন, এডিবির আওতায় নির্মিত সেতু দুটি এখন আর সংস্কারের কোন সুযোগ নেই। নতুন করে বরাদ্দ হলে পুন:নির্মাণ করা হতে পারে। রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী সোহাগ বলেন ঝুকিপূণ সেতুগুলোর তালিকা পাঠিয়েছি।
এলজিইডির মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আজীম উদ্দীন সরদার মোবাইলে বলেন, ‘অপরিকল্পিত’ নদী পুনঃখননের কারণে এ অবস্থা হয়েছে। ওই স্থানে ৪টি সেতু নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
আজীম উদ্দীন সরদার আরো বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইউনয়িন ও প্রধান সড়কে চলাচলের জন্য নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এ সেতুগুলো গ্রামীণ সড়কের আওতায় সেজন্য অনুমোদন হবে কিনা জানিনা। তবে আমরা এগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ দেখিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এখন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে হয়তো সেতু করা যাবে।
‘অপরিকল্পিত’ নদী পুনঃখননের অভিযোগটি অস্বীকার করে পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, নদীর পরিমাপ অনুযায়ীই পুনঃখনন কাজ হয়েছে। সেতুটি অনেক আগে করা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদীর পরিমাপ বিবেচনায় আনেনি। ফলে, সেতুর এ অবস্থা ঘটেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন