৩৪ কিলোমিটার ছাতক-সিলেট রেলপথ স্থাপিত হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে। সিলেট স্টেশন থেকে ছাতক পর্যন্ত রয়েছে খাজাঞ্চি, সৎপুর ও আফজলাবাদ রেল স্টেশন। সব ক’টি স্টেশন কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে রেল বিভাগের। এই রেলপথ সরকারের একটি লাভজনক খাত ছিলো। ১৯৭৯ সালে ছাতক রেলওয়ে স্টেশন রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রেল বিভাগে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করে। সরকারি ও বেসরকারি মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে এই রেলপথের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে করোনা মহামারির কারণে সারা দেশের সাথে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে আর চালু হয়নি। চলতি বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এ রেলপথের ছাতক থেকে তাজপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে লাইন লন্ডবন্ড হয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। মেরামত ছাড়া এ রেলপথে আর ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে না। ছাতকের সীমানায় অনেক স্থানে লাইনে পাথর নেই। পানির প্রবল স্রোতে মাটি ও পাথর সরে গেছে। উপড়ে গেছে লাইন। ঝুলে আছে সিøপার। লাইনের কোনকোনো স্থানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ৩ বছর ধরে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। সড়ক পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে মানুষকে। রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে এখানে ব্যবসা-বানিজ্যেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও অপরদিকে রয়েছে ছাতক-সিলেট রেলপথ। ট্রেন ও সড়ক পথের ক্রস হয়েছে গোবিন্দগঞ্জে। গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টের রেল গেটের দায়িত্বে আছেন আশরাফ। যদিও ট্রেন চলাচল না থাকায় রেল গেটটি অরক্ষিত। তিনি ২০১৯ সাল থেকে আছেন এখানের দায়িত্বে। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে অরক্ষিত হয়ে আছে ছাতকবাজার-সিলেট ৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রেলপথ। এ সুযোগে ছাতকের অংশে রেলপথে চলছে লুটপাট। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে রেলপথের নিচ থেকে অনেক অংশে পাথর সরে গিয়ে রাস্তার পাশে পাথর স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। এসব পাথর ও রেলের সিøপার চুরি হচ্ছে। রেলের জায়গায় দোকানপাঠ তৈরি হচ্ছে। রেলপথে লাখ লাখ টাকার গাছ-গাছালি কেটে বিক্রি করছে রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি। ছাতকবাজার রেলওয়ে কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে বহিরাগত ২৩টিরও বেশি পরিবার। দুর্নীতিবাজ কিছু কর্তাকে ম্যানেজ করে রেল লাইনের পাশে বালুর ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সব মিলিয়ে এ বিভাগে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে লুটপাটের উৎসবে মেতেছেন গোবিন্দগঞ্জে পরিত্যক্ত রেল গেটের দায়িত্বরত গেটম্যান আশরাফ। প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা সরকারি বেতন পেলেও অনিয়ম-দুর্নীতিকে ছাড়তে পারছেন না। সে তার উর্ধতন একাধিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে গোবিন্দগঞ্জ রেলগেটের পাশে সরকারি জায়গায় নির্মাণ করেছের ৩টি দোকান কোঠা। এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে তার অবৈধভাবে আয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। প্রতি মাসের দোকান ভাড়ার টাকা যায় তার পেটে। এছাড়া তার যোগসাজশে রেলের সরকারি জায়গা থেকে গাছ-গাছালিসহ মূল্যবান সম্পদ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর গোবিন্দগঞ্জ রেলগেট সংলগ্ন রেলের ৩৯৮/৩ থেকে ৪-এর সীমানায় সরকারি জায়গা থেকে আনুমানিক দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৫টি অর্জুন গাছ কাটা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে গোবিন্দগঞ্জের পরিত্যক্ত রেলের গেইটম্যান আশরাফ সিন্ডিকেট করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সে গাছগুলো কেটে বিক্রি করেছে। ইতোমধ্যে কর্তন করা তিনটি গাছ রাতের আঁধারে সরিয়ে নিলেও অর্ধেক কর্তন করা অবস্থায় ঝুলে আছে আরও বড় দু’টি অর্জুন গাছ। আলামত ঢাকতে কর্তন করা গাছের গুড়ায় ভিট বালু ফেলা হচ্ছে। এসব গাছের পাশ দিয়ে বিদ্যমান রয়েছে পিডিবির বিদ্যুৎ লাইন। ঝড় বা বাতাসে গাছগুলো যে কোন সময় পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে আশপাশের একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ গেটম্যান আশরাফ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, সিলেট অফিসের তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেলের খালি জায়গায় দু’টি দোকান তৈরি করে দিয়ে ভাড়ার টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু অপর চায়ের দোকান থেকে মাসে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। রেলের জায়গা থেকে ৫টি গাছ কর্তনে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান ওই গেটম্যান।
ভাড়াকৃত ৩টি দোকানের ব্যবসায়ীরা স্বীকার করে বলেন, রেলের গেটম্যান আশরাফ প্রতি মাসে ভাড়ার টাকা নিজেই নেন। দুই দোকান থেকে প্রতি মাসে ৭ হাজার ও একটি দোকান থেকে মাসে আড়াই হাজার টাকা তারা তাকে দিয়ে আসছেন। এছাড়া দুই দোকান থেকে অগ্রীম ২৫ হাজার টাকাও নিয়েছেন গেটম্যান আশরাফ।
রেলের বিভাগের সিলেটের আইডব্লিউ এর সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম বলেন, কোন প্রকার অনুমতি ছাড়া সরকারি জায়গায় গাছ কাটার কোন বৈধতা নেই। গেটম্যান কর্তৃক দোকান কোঠা তৈরি করে ভাড়া নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত জানান, ছাতক-সিলেট রেলপথের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথটি সংস্কারের আওতায় আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন