ইনকিলাব ডেস্ক : চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার চীনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়া ও বেআইনিভাবে আর্থিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার অভিযোগে একের পর টুইট-বোমা ফাটিয়েছেন ট্রাম্প। টুইটে খোলামেলাভাবে চীনের সমালোচনা করেন তিনি। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ ঘটনাকে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের আস্থাশীল অবস্থানের লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করে চীনা সরকার। এ নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই টুইট করে আবারও উত্তেজনা ছড়ালেন তিনি।
গত রোববার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, চীন তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে আমাদের পণ্যের ওপর উচ্চমাত্রায় করারোপ করে চলেছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে,। এ সম্পর্কে তারা কি আমাদের কাছে শুনেছে তারা ঠিক করছে কিনা। ট্রাম্পের ভাষ্য, মুদ্রার অবমূল্যায়ন করায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও কথা বলেছে। মুদ্রার অবমূল্যায়নে চীনের কোম্পানিগুলো অবৈধভাবে রপ্তানি সুবিধা পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র চীনকে হুঁশিয়ার করে আসছে, তারা যেন দক্ষিণ চীন সাগর ও দ্বীপগুলোর একক মালিকানা দাবি বন্ধ করে। কারণ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ এর মালিক। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে নৌজাহাজ পাঠায়, যার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা জারি করে চীন। অবশ্য উভয় দেশ এ সাগরে সামরিক উপস্থিতি ঘটানোর জন্য পরস্পরকে দায়ী করে থাকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। চীনের দাবি, তাইওয়ান তাদের অংশ। এখন সেটি তাদের কাছে বিচ্ছিন্ন প্রদেশমাত্র। যুক্তরাষ্ট্রও এ দাবি মেনে নিয়ে চীনের ‘এক দেশ নীতি’ সমর্থন করে ১৯৭৯ সালে। সেই থেকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। কিন্তু প্রায় চার দশকের এ অবস্থান উল্টে দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তাইওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ট্রাম্প। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীন নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে খুব বেশি কথা বলতে রাজি নন। তবে ট্রাম্প কেন নীতি পাল্টাচ্ছেন, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে কূটনৈতিক মহলে। গত রোববার এনবিসি নিউজে এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেন্স বলেন, এ হলো ছোট বিষয়ে বড় আলোড়ন। তিনি যোগ করেন, আমি মনে করি, আমার চীনা প্রতিপক্ষকে একটি কথাই বলার আছে, এখন আমাদের সৌজন্য দেখানোর সময়। চীনের গণমাধ্যমের খবর মতে, চীন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনকে তাইওয়ান ইস্যু সতর্কভাবে দেখভালের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং।
এদিকে, তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন দেশ মনে করে। কিন্তু চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের অংশ। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বৈরিতা চলছে। তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। তাছাড়া, দেশটির সঙ্গে মাত্র ২৬টি দেশের সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দূতাবাস নেই তাইওয়ানে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কেনে তাইওয়ান। দাপ্তরিক নয়, ব্যক্তি পর্যায়ে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। বিবিসি, ওয়েবসাইট ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন