রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সৈয়দপুরে ভার্চুয়াল জুয়ায় আসক্ত যুবসমাজ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। ইচ্ছা করলে আঙুলের এক ক্লিকেই সব কিছু নিমিষে জানা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্মার্ট ফোন-ট্যাব বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে থাই ও কালিয়ান জুয়ায় জড়িয়ে নিজেদের ধংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির কিশোর-যুবক। ভার্চুয়াল এই জুয়ায় আসক্ত সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা অসংখ্য তরুণ ও যুবক।
সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহরের কাজীপাড়া, গোলাহাট, হাতিখানাসহ গ্রামীণ জনপদ কামারপুকুর, হাজারীহাট বোতলাগাড়ীসহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রসার ঘটেছে এই জুয়ার। জুয়াড়িদের অনেকে আবার বিভিন্ন মাদকেও আসক্ত। তাই অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যাও। এদের ব্যবহার করে একটি চক্র প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে ভর্চুয়াল এই জুয়াকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে একাধিক কিশোর গ্যাং। তারা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে মাদক বেচা-কেনাসহ নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে।
থাই জুয়ায় আসক্ত আশরাফ (ছদ্মনাম) জানায়, থাই ও কালিয়ান অনলাইনভিত্তিক জুয়া। মূলত এগুলো এক ধরনের লটারি। অর্থাৎ যারা এই জুয়া খেলে তারা বিভিন্ন প্রকার লটারির টিকেট তৈরি করে। এই টিকেটগুলোতে বিভিন্ন প্রকার নম্বর থাকে যেগুলোর ওপর বাজি ধরতে হয়। নম্বরের সঙ্গে মিলে গেলে টাকা বিকাশ বা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে বা তুলতে হয়। বেশির ভাগ সময় নম্বর দেওয়ার আগে জুয়াড়িরা অগ্রিম টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়ে নেয়। পরে টাকা হাতে এলে ফোন বন্ধ করে দেয়। এভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নম্বর দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা।
নিয়মিত জুয়ার আসরে অংশ নেওয়া শহরের কাজীহাট মহল্লার আকাশ জানান, এটি থাইল্যান্ডভিত্তিক একটি বৈধ লটারি। স্থানীয় জুয়াড়িরা এই লটারির আদলে বিভিন্ন প্রকার লাটারির টিকেট বানিয়ে থাইল্যান্ডের লটারি বলে চালিয়ে দেয়। আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতা বা খেলোয়াড় হচ্ছে বাইরের দেশের। তারা জুয়ায় অংশ নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইমু ও ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারকে বেছে নেয়।
সৈয়দপুরে এই জুয়ার প্রাণকেন্দ্র শহরের ১০নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া। এখানকার বিভিন্ন নিভৃত অংশে আবাসিক এলাকার অলি-গলিতে জটলা করে প্রকাশ্যে জুয়া খেলতে দেখা যায় এখানকার কিশোর-যুবাদের।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘সারা দিন মোবাইল নিয়ে জটলা করতে দেখি পাড়ার ছেলেদের। প্রথম প্রথম কিছু বুঝতে পারিনি। পরে শুনেছি ওরা থাই জুয়া খেলছে। তবে মহল্লার মানুষ ওদের কিছু বলতে ভয় পায়। কারণ ওরা সংগঠিত। কেউ কিছু বললেই সংগঠিত হয়ে তাকে হেনস্তা করতে ছাড়েনা।’
সচেতন এই অভিভাবকের মতে, ‘চোখের সামনে একটি প্রজন্ম জুয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণে পরিবারও নিঃস্ব হচ্ছে অথচ আমরা কিছু করতে পারছি না। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
অনলাইন জুয়া সম্পর্কে সৈয়দপুর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সৈয়দপুরে অনলাইন জুয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানেও নামছি। কিন্তু শুধু পুলিশি অভিযানে এ জুয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য এলাকাভিত্তিক সামাজিক প্রতিরোধও প্রয়োজন।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন