সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পানি সঙ্কটে নষ্ট হচ্ছে সোনালি আঁশ

আর্থিক ক্ষতির মুখে মানিকগঞ্জের কৃষকরা

শাহীন তারেক, মানিকগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মানিকগঞ্জে পাটের এবার বাম্পার ফলন হলেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো কৃষক। ফলে পাট জাগ দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। বাজারে পাটের দাম ভালো থাকলেও ভালোভাবে জাগ দিতে না পারায় মান ভালো হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অনেক চাষি নিরুপায় হয়ে অন্যের পুকুর-ডোবা ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৩ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে তোষা তিন হাজার ২৯৪ হেক্টর, দেশি ৬৬৬ ও ১৩ হেক্টর জমিতে মেস্তা জাতের পাট রয়েছে। সাধারণত আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে পাট কেটে জাগ দেয়া হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৫০/৬০ শতাংশ পাট কাটা হয়েছে। মানভেদে বাজারে পাটের বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি সঙ্কটে পাট জাগ দিতে না পারা এবং পচা পানিতে পাট জাগ দেয়ার জন্য কিছু পাট ক্ষেতেই পড়ে থেকে লালচে হয়ে গেছে। অনেকে পাট কেটে বাধ্য হয়ে অপরিষ্কার পানিতে জাগ দেয়ার ফলে কালচে রঙের আকার ধারণ করেছে পাটের আঁশ। ফলে এ পাটের বাজার মূল্য কম। এ জন্য লম্বা ও আঁশে পরিপুষ্ট হলেও মানিকগঞ্জ জেলার পাটচাষিরা পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আগে মাঠে জমে থাকা বর্ষার পানিতে জাগ দেয়া হতো। তবে এবার পানি না থাকায় দুই তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে অন্যত্র নিয়ে যেতে তাঁদের খরচ বেড়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৈতরা গ্রামের পাট চাষি আব্দুল হালিম জানন, পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। কিন্তু পাট জাগ দেয়ার জন্য ক্ষেতে পাশে পানি নাই। এজন্য ডোবা পুকুর দশ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিয়েছি। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার কথা তাঁকে কেউ বলেননি।
ঘিওর উপজেলার রাথুরা গ্রামের কৃষক বাঁধন বিশ্বাস বলেন, আগে পাটের দাম ছিল না বলে চাষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কয়েক বছর ধরে দাম বেশি থাকায় আবার চাষে আগ্রহ বাড়ছে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এবার অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে বিঘাপ্রতি সাত থেকে সাড়ে সাত মণ পাট উৎপাদন হয়েছে।
সদর উপজেলার আইরমাড়া আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার বন্যাও হয়নি, বর্ষার পানিও নেই। এ জন্য পাট কেটে জাগ দেয়ার জন্য নদীর পাড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার দাম ভালো হলেও অনাবৃষ্টির কারণে পাটের মান ভালো হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার বর্ষায় সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। এতে জমিতে পানি ওঠেনি। পানিতে ডুবিয়ে পাট জাগ দেয়া সনাতন পদ্ধতি। কৃষকরা এতে বেশি অভ্যস্ত। পানি না থাকলেও রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানো যায়।
তিনি বলেন, পাট কাটার পর আঁশ ছাড়িয়ে অল্প পানিতে বেশি জাগ দেয়া যায়। এ পদ্ধতিতে জাগ দেয়া আঁশের গুণগত মান অনেক ভালো থাকায় বাজারে এর দামও বেশি পাওয়া যায়। পানির অভাবে কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন