শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পদ্মার ভাঙন আগ্রাসীরূপে

দৌলতদিয়ায় সচল হয়নি ৫নং ঘাট, ভেসে যাচ্ছে মাটি ভর্তি জিওব্যাগ

মো. নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট। ৭ দিন পেরুলেও ঘাটটিকে সচল করতে পারেনি বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে সাত নম্বর ফেরিঘাট এলাকায়। জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলছে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ জিওব্যাগে বালুর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে মাটি। পরিমানে দেয়া হচ্ছে অর্ধেক, যে কারনে বস্তা ফেলার সাথে সাথে স্রোতে ভেসে যাচ্ছে জিওব্যাগ।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই পদ্মার আগ্রাসী রুপ দেখেন রাজবাড়ীবাসী। গত ২০১৫ সালে প্রমত্তা পদ্মার পেটে গেছে দৌলতদিয়ায় ১ ও ২ নম্বর ফেরি ঘাট। ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে চলছিলো পারাপার। এ বছরে ভাঙনে গত ৬ সেপ্টম্বর থেকে বন্ধ ৫ নম্বর ফেরিঘাট। পুনরায় শুক্রবার ভাঙন দেখা দিয়েছে ৭ নম্বর ঘাট এলাকায়। বাকি ৩টি ঘাট দিয়ে চলছে পারাপার। পারাপার নির্বিঘ্ন করতে জরুরি ভিত্তিতে ভেঙে যাওয়া ৫ ও ৭ নম্বর ঘাটে জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিটিএ আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৫ সালে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট আধুনিকায়ন করতে নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে সাড়ে চার কিলোমিটার ও পাটুরিয়ায় আড়াই কিলোমিটার এলাকার জন্য প্রায় ৭ শত কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্যে দাম বৃদ্ধি ও বিআইডব্লিটিসি কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী দৌলতদিয়ার ৭টি ও পাটুরিয়ার ৪টি ঘাটের প্রতিটি ঘাটে তিনটি করে পকেট গেট। যার একটি হাইওয়াটার, অন্যটি মিডওয়াটার ও বাকি ঘাটটি লোওয়াটার হিসেবে করতে বলা হলে নকশার পরিবর্তন আনা হয়। আবার নকশার পরিবর্তন অনুযায়ী ও দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বাজার অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষকে নকশা ও ব্যায় নির্ধারণ করতে বলা হলে তারা ১৩শ’ ৫১ কোটি টাকার একটি খসড়া হিসেব পেশ করেন। যে কারনে ওই প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে আছে বছরের পর বছর।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে এক বিশাল কর্মযোগ্য। কেউ ট্রাকে করে বালু আনছেন। কেউ বালু বস্তায় ভরাট করছেন আবার কেউ ট্রলারে করে সেই বালু পদ্মায় ফেলছেন। সবারই উদ্দেশ্য নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ মোটর চালক শ্রমিক লীগ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তপু বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালুর পরিবর্তে জিওব্যাগে দিচ্ছে মাটি আর ১৮০ কেজির বস্তায় দিচ্ছেন ১০০ কেজিরও কম যে কারনে স্রোতেই ভেসে যাচ্ছে জিওব্যাগ। লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কোন কাজে আসছে না তা।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (বড় নজরুল) বলেন, জিওব্যাগ কোন স্থায়ী সমাধান না। তারপরও জিও ব্যাগ ফেলে এক শ্রেনীর মানুষের পকেট ভারি করা ছাড়া আর কোন কাজে আসে না। তাই নদী শাসন ও কাজের সঠিক তদারকিতেও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, গত ১৯৯৮ সাল থেকে দৌলতদিয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিবছরই ভাঙন দেখা দেয়। বালুর বস্তা ছাড়া আর কোন কাজ হয় না। যে কারণে দৌলতদিয়ার ১৭টি মৌজার অন্তত ১৫ হাজার পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এখন দৌলতদিয়ায় মাত্র চারটি মৌজা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়া নামটা হারিয়ে যাবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মহম্মদ আলী মোল্লার প্রোপাইটর মহম্মদ আলী মোল্লা বলেন, বিআইডব্লিটিএ’র নির্দেশনা ও তাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিআইডব্লিটিএ আরিচা সেক্টরের সহকারী প্রকৌশলী রিশাদ আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে আপাতত জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে, ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্প ভুমি মন্ত্রণালয়ে পাশ হয়েছে তিন মাসের মধ্যে দৌলতদিয়ার ভুমি অধিগ্রহন কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে বুয়েট প্রশাসন নকশার পরিবর্তন করে এই কাজের ব্যায়সহ নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে জমা দিবেন। সব ঠিক থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন