বাংলাদেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। এ তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে জানানো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত সোমবার মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনের সূচনায় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ওই তথ্য জানান। তিনি বাংলাদেশে গত মাসে তখনকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সফরের কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
নাদা আল-নাশিফ বিবৃতিতে গত মাসে বাংলাদেশে জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সফরের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মিশেল ব্যাচেলেট মতপ্রকাশে কড়াকড়ির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং নিষেধাজ্ঞামূলক আইনগুলো পর্যালোচনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। সেসময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ‘জোরপূর্বক গুম’র অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি ‘স্বাধীন, বিশেষ ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। যদিও সরকার দেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার এর পরই বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভ দমনে ‘বলপ্রয়োগ’ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত রাখা বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। তাছাড়া মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের পরিবারকে যেন কোনো প্রতিশোধপরায়ণতা বা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে না হয় সে বিষয়টিও তুলে ধরেন আল-নাশিফ।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে বিশ্বের অন্য যেসব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, সেগুলোর সর্বসাম্প্রতিক অবস্থাও পরিষদের সভায় তুলে ধরেন। তিনি বৈশ্বিকভাবে যুদ্ধের গুরুতর আর্থসামাজিক পরিণতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে জ্বালানির তীব্র ঘাটতি এবং খাদ্যনিরাপত্তার হুমকির কথা বলেন।
পরিষদের এই অধিবেশন চলবে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাচেলেটের স্থলাভিষিক্ত হবেন অস্ট্রিয়ার ভয়েকার টুর্ক। ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর নিয়োগ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হলেও কবে তিনি দায়িত্ব নেবেন, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট গত ১৪ আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান হিসেবে এটিই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশে চারদিনের সফর শেষে ১৭ আগস্ট রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এতে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং স্বাধীনভাবে এসব অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন