পদ্মা নদীর ভাঙনে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সর্দারকান্দি ও শম্বু হালদারকান্দি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি রাতারাতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক এ ভাঙনে তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পরেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন, কেউ বা অন্যের জায়গায় ঘর নির্মাণ করছেন। ভাঙন রোধে নদীতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তীব্র স্রোতে নদীর তলদেশ থেকে সরে যাচ্ছে ফেলানো জিওব্যাগ। ভাঙন রোধে তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে এলাকাবাসী চিন্তিত। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় দিশেহারা হয়ে পরছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, সর্দারকান্দি ও শম্বু হালদারকান্দি গ্রামের নদী তীরবর্তী গ্রামবাসী বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে নির্বাক দাড়িয়ে আছে নদীর দিকে। চোখের পলকে গত পনের দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল শত শত বাড়ি-ঘর আর ফসলি জমি। নদী গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙতে ভাঙতে চলে আসলো প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে।
সর্দারকান্দি গ্রামের খোরশেদ আলম বলেন, গত দুই বছর ধরে এ এলাকা নদীতে ভাঙছে। গত বছর চরের জমি ভাঙতে থাকে এবার গত পনের দিনে ব্যাপক ভাঙনে সর্দারকান্দি ও শম্বু হালদারকান্দি গ্রামের শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে এক কিলোমিটার দক্ষিণে সরকারি রাস্তা ছিল। তার দক্ষিণে গ্রামবাসী বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকে। গত বছর সে রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হতে থাকে। তখন ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে আজ ব্যাপক ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো। নমকান্দি গ্রামের প্রধীপ গুপ্তের স্ত্রী তুলশী রাণী বলেন, রাতের বেলায় ভাঙন শুরু হয়। এলাকাবাসীর সহায়তায় কোনো রকমে একটি ঘর ভেঙে নিতে পেরেছি। ঘরসহ অনেক মালামাল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ২ সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে উঠেছি। তিন বছর আগেও বর্তমান নদীর অপর পাড়ে স্বামীর ভিটে বাড়ি ছিল। একই গ্রামের রাজু খালাসীর স্ত্রী রুমা রানী কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, রাতে ভাঙন শুরু হওয়ায় বসত ঘরটি নেয়া যায়নি। দুইটি ঘর নদীতে ভেসে যায়। কোনো রকম ছেলে মেয়ে নিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। দুই সন্তান নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। টাকার জন্য ঘর উঠাতে পারছি না। গৃহহীন মতিন মাঝি বলেন, রাক্ষুসি পদ্মা সময় দিলো না ঘর ভেঙে নেবার। সব হারিয়ে পথে বসেছি। দিন মজুর আজিজুল হোসেনের স্ত্রী কোলে ছয় মাসের সন্তান নিয়ে নদী ভাঙন এাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান সাহায্যের আশায়। নিজ নামটি লেখাতে চান ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকায়। নদীতে সব হারিয়ে পাঁচ সন্তান নিয়ে দিশেহারা। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শ্বশুরের দেয়া এক কানি জমিতে ধান লাগিয়ে তা দিয়ে সংসার চালাতাম। ভিটে বাড়িসহ শেষ সম্বল জমি টুকু নদী নিয়ে গেল। এখন কি হবে কিভাবে সংসার চলবে।
এলাকাবাসী জানান, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়ায় বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করায় এখানেও গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সর্দারকান্দি এলাকার দক্ষিণে চরটি কেটে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং নদী ড্রেজিং করলে এখনকার ভাঙন দেখা দিতো না। গত বছর যখন রাস্তা ভাঙনে তখন প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা আশ্বাস দিয়ে ছিলো ভাঙন রোধের।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন পীর বলেন, গত দশ দিনে নদী ভাঙনে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পরেছে। পদ্মা সেতুর জন্য মাওয়ায় নদী শাসন করা হয়েছে। নদীর গতিপথ দাক্ষণে প্রবাহিত না করলে এ এরাকায় আরো ভাঙনের আশংকা রয়েছে। বাংলাবাজার এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ২শ’ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ ফয়সাল আহম্মেদ বিল্পব নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য ৩ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, ভাঙন রোধে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫শ’ ২০ মিটার এলাকায় ৪১ হাজার ৪শ’ জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এড. মৃণাল কান্তি দাস বলেন, আপাতত ভাঙনরোধে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪১ হাজার ৪শ’ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। শুস্কমৌসুমে বাংলাবাজার ও শিলই ইউনিয়নে ৩টি স্পটে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন