দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত যেখানে ইলিশ খেতে পায় না। দিন কে দিন বাড়ছে ইলিশের দাম। এ অবস্থায় ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে রিট করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান এ রিট করেন। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিটটির শুনানি হবে Ñমর্মে জানিয়েছেন এ আইনজীবী।
রিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণসম্পদ মন্ত্রণালয, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয মাছ। কিন্তু বর্তমানে অত্যধিক দামের কারণে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ইলিশ কেনার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। অন্যদিকে দেশের মধ্যবিত্তরা ইলিশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারে ইলিশের দাম গড়ে ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা কেজি। সবচেয়ে সুস্বাদু পদ্মার ইলিশের দাম গড়ে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা কেজি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরচেয়েও বেশি। কিন্তু পদ্মা থেকে এখন সীমিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায় না। যেসব ইলিশ পাওয়া যায় সেগুলো মূলত অন্য নদী বা সমুদ্রের ইলিশ। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ যেখানে ইলিশ কিনতে পায় না তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। ভারতে ইলিশ রফতানির ফলে দেশের স্থানীয বাজারগুলোতে ইলিশের দাম আরও বেড়েছে। আরও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এই যে, দেশের বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে ভারতে ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে। ভারতে যে ইলিশ রফতানি করা হচ্ছে সেগুলো মূলত পদ্মার ইলিশ। এমনিতেই পদ্মা থেকে সীমিত পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়। পদ্মার ইলিশগুলো ভারতে রফতানির ফলে দেশের বাজারগুলোতে পদ্মার ইলিশ যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের রফতানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য পণ্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অনায্যভাবে, জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার যদি বিদেশিদের ইলিশের স্বাদ উপভোগ করাতে চায়, সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ‘ইলিশ উৎসব’ আয়োজন করতে পারে। যেখানে বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বাংলাদেশে ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার। এমনকি আসন্ন দুর্গাপূজায় ভারতীয়দের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে, বাংলাদেশ ভ্রমণ করে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করার।
প্রসঙ্গত, পর্যটন কর্পোরেশন আইন (বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন অর্ডার) এর ধারা ৫ অনুযায়ী পর্যটনের উন্নয়ন, বিকাশ ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করাসহ পর্যটনের সকল প্রকার উৎকর্ষ সাধনের দায়িত্ব পর্যটন কর্পোরেশনের।
আখাউড়া দিয়ে ভারতে গেল ২ হাজার ৮০০ কেজি ইলিশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও আখাউড়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব দূর্গাপূজা উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ২টি ট্রাকে করে ২ হাজার ৮০০ কেজি ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হয়েছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারের প্রতিষ্ঠান ফিশ বাজার, স্থানীয় সি এন্ড এফ এজেন্ড খলিফা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে মাছগুলো রপ্তানি করা হয়।
জানা যায়, দূর্গাপূজা উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে ৫৯টি মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানি করার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ফিশ বাজারের তত্বাবধানে এই স্থল বন্দর দিয়ে মাছগুলো ভারতের আগরতলায় যাবে। ভারতের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ১০ ডলার করে ধরা হয়েছে।
রপ্তানিকরাক প্রতিষ্ঠানের সি এন্ড এফ এজেন্ড খলিফা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি মো. শাহনেওয়াজ মিয়া শানু বলেন, ৫০ টন চালানের মধ্যে আড়াই টন ইলিশ ভারতের আগরতলায় পাঠানো হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চালানের সবগুলো ইলিশ ভারতে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক বছর পূজা উপলক্ষে ভারতে ইলশ মাছ রপ্তানি করা হয়। এ ইলিশ রপ্তানির মধ্যে দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন