দেশজুড়ে সংঘাত পরিস্থিতিতে রাজধানী নেপিডো এবং আশেপাশের শহরগুলোয় রাতে কারফিউ জারি করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শহরে চলাফেরা করা যাবে না। সেই সঙ্গে চারজনের বেশি একত্র হওয়া যাবে না। কোনরকম বিক্ষোভ বা প্রকাশ্য বক্তব্য দেয়া যাবে না।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদপত্র ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, কারফিউয়ের পাশাপাশি রাজধানীতে বাঙ্কার তৈরি করছে সামরিক বাহিনী। এছাড়া পুলিশের নতুন নতুন চৌকি তৈরি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, মিয়ানমারে এখন যে অবস্থা চলছে, তাতে অচিরেই দেশটি একটি পুরাদস্তুর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সামরিক বাহিনীর সদস্য বা পরিবার বসবাস করে, সেসব এলাকায় চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ও বার্তা সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, সহিংসতা প্রবণ এলাকাগুলো ছাড়াও মিয়ানমারের অসংখ্য শহরে কারফিউ এবং মানুষজনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার তারা নতুন একটি আইন জারি করেছে যে, সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী কোন পোস্টে লাইক বা শেয়ার করা হলেও কারাদণ্ড দেয়া হবে। ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের শীর্ষ সাতটি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্যরা ওয়া রাজ্যের পাংসাংয়ে আজ (বুধবার) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
কোভিড মহামারির পর এই প্রথম এসব গোষ্ঠীর নেতারা একত্রে বৈঠকে বসছেন। এসব গোষ্ঠীর প্রায় ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আরাকান আর্মির একজন মুখপাত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনের কারণেই তারা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন এবং সেখানে মূল্য লক্ষ্য হবে নিজেদের মধ্যে একতা আরও বৃদ্ধি করা। বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস জানিয়েছে, এখন উত্তর রাখাইন রাজ্য, চীন রাজ্য, শান ও কাচিন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। তারা ভারী অস্ত্র ও ট্যাঙ্কের সহায়তা অনেকগুলো শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা সেখানকার একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।
বিবিসির বার্মিজ সার্ভিস বলছে, সাধারণ জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর ভারী অস্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকারের রণকৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সম্প্রতি এই হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মান জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে এই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে এদের মধ্যে থেকে বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে সামরিক সরকারের প্রতি তাদের মনোভাব বদলে যাচ্ছে।
এদিকে ইরাওয়ার্দি জানিয়েছে, অব্যাহত যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়া থেকে চারটি সুখই ফাইটার জেট বিমান পেতে যাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র এই খবর দিয়েছেন। দুই হাজার আঠারো সালের একটি চুক্তি অনুযায়ী এর আগে দুইটি জেট বিমান সরবরাহ করেছে রাশিয়া। ইরাওয়ার্দি খবর দিয়েছে, আরাকান আর্মি দাবি করেছে, মিয়ানমারের একশো জনের বেশি সৈনিক ও অফিসার পক্ষ ত্যাগ করে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন অফিসার রয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে আরাকান আর্মির কয়েকটি ঘাঁটি তারা দখল করে নিয়েছে। রাখাইনের মংডু এবং পালেতয়া শহর ঘিরে সড়ক এবং নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ফলে সেসব এলাকায় খাবার ও জরুরি সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। সামরিক বাহিনীর অভিযানের ফলে মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন