উত্তর : আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস মতে, নবি-রাসুলদের পর শ্রেষ্ঠ মানুষ হলেন প্রিয় নবির সা. প্রিয় সাহাবাগণ রা.। তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবা। আবার তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন ইসলামের প্রথম চার খলীফা। তাঁদের মধ্যে প্রধান হলেন আবু বকর সিদ্দিক রা.। নবিজি সা. বলেন, ‘মেরাজের রাতে যে আসমানেই পৌঁছেছি সেখানেই নিজ নাম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ এবং সঙ্গে আবু বকর সিদ্দিকের নাম লিখা দেখেছি। (তাবরানী আওসাত) হযরত আলি রা. বলেন,‘আল্লাহর রাসুলের সা. পর শ্রেষ্ঠ মানুষ আবু বকর রা.। (ইবনে মাজা) সহিহ বুখারিতে এসেছে- ‘নবি-রাসুলদের পর শ্রেষ্ঠ মানুষ আবু বকর তারপর উমর।’ ইবনে উমর বলেন,‘আমরা রাসুলের সা. যুগে আবু বকরের রা. চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে মনে করতাম না । তারপর উমর রা. এবং তারপর উসমানের রা. স্থান নির্ধারণ করতাম। (বুখারি) তাবরানি আওসাতে এসেছে- ‘নবিজি সা. তাঁদের এসব কথা শুনতেন কিন্তু কিছু বলতেন না।’ নবি-রাসুলদের পর সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী লোকটিও তিনিই হবেন। জান্নাতের প্রত্যেক দরজা তাঁকে প্রবেশের জন্য ওয়েলকাম জানাবে। এ ছাড়াও নবিজির সা. বহু কর্মগত ও উক্তিগত ইঙ্গিত রয়েছে যা আবু বকরের রা. শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। এ প্রবন্ধে আমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কারণগুলো খোঁজে বের করার প্রয়াস চালাবো ইনশা আল্লাহ ।
বংশীয় আভিজাত্য: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বংশ আরবের বিখ্যাত ‘কুরাইশ’ বংশ। হযরত ইবরাহিমের আ. পুত্র ইসমাইলের আ. অধ:স্তন পুরুষ ফিহিরের ডাক নাম ‘কুরাইশ’ থেকেই এ বংশের উৎপত্তি। প্রিয় নবির সা: বিখ্যাত উক্তি- ‘আল আয়িম্মাতু মিন কুরাইশ’ তথা নেতা হবে কুরাইশ বংশ হতে- কথাটি থেকেই এ বংশের শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করা যায়। এ বংশের বনু তামীম শাখায় ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক শুভক্ষণে সরদার আবু কোহাফা ও মহীয়সী নারী উম্মুল খায়ের সালমার রা. ঘরে মোকাররমায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। নাম আবদুল্লাহ। বাবা মায়ের খুবই আদরের পুত্র। বড় হয়ে পরিচিতি পান আবু বকর নামে। সিদ্দিক বা আতিক ছিল তাঁর উপাধি।
সামাজিক মর্যাদা: জাহেলি যুগে কিছু যোগ্যতা বা গুণাগুণ মানুষকে নেতৃত্ব ও মর্যাদার আসনে সমাসীন করত। কবিত্ব, পান্ডিত্ব, বাগ্মিতা, বীরত্ব, দানশীলতা, উদারতা , আথিতেয়তা, আর্থিক সচ্ছলতা, বাণিজ্য-অভিজ্ঞতা ইত্যাদি গুণের মানুষ সবার নজর কাড়ত। আবু বকর রা. এমনই একজন পুরুষ ছিলেন। ‘ইলমুল আনসাব’ বা বংশ তালিকার বিদ্যায় মক্কায় তাঁর দ্বিতীয় ছিল না। সম্পদ বন্টনে আরব্য রীতি মোতাবেক বংশ তালিকার প্রয়োজন হত। তাঁর কাছে আসলে তিনি এসব খুব সহজে বলে দিতেন। নবিজি সা. বলেন, তিনি হলেন কুরাইশদের মাঝে ‘বংশ-বিদ্যায়’ সবচেয়ে বেশি পারদর্শী পুরুষ।’(মুসলিম) ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা ২০ বছর বয়স থেকেই ছিল। সিরিয়া ইয়ামেনসহ নানা দেশ তিনি যৌবনে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মক্কার ধনী ব্যক্তিদের তিনি অন্যতম ছিলেন। প্রচুর বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বশীল হওয়ায় যৌবনেই তিনি গোত্রের নেতৃত্ব পান। (ইবনে কাসির) তিনি রুচিশীল, সুন্দর কবিতাও আবৃত্তি করতে পারতেন। তাঁর সুন্দর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে জান্নাতি সুসংবাদ প্রাপ্ত পাঁচজন সাহাবাসহ অনেকে মুসলমান হয়েছিলেন। গরিব-দুঃখীদের সেবাসহ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় ইসলাম পূর্বেই তিনি সুনাম কুড়িয়েছিলেন।
ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য: আবু বকর সিদ্দিক রা: ছোট থেকেই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতেন। এমন কি মদ্যপান আরবের লোকদের সহজাত প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত বিষয় হলেও তিনি কখনো মদ পান করেননি। হযরত আয়েশা বলেন, ‘আমার পিতা আবু বকর নিজের ওপর মদ হারাম করেছিলেন। তিনি জাহেলি যুগেও তা পান করেননি ইসলাম গ্রহণের পরও নয়।’ (সিরাত ও হায়াতে সিদ্দিক) মূর্তিপূজা মন থেইে ঘৃণা করতেন। কখনো মূর্তির সামনে মাথা নত করেননি। সাহাবাদের সঙ্গে একবার গল্পকালে তিনি এ কথা শুনান। একবার তাঁর পিতা মূর্তির ঘরে নিয়ে তাকে পূজার আহ্বান জানিয়ে চলে আসেন। তিনি তাদের কাছে খাবার চান, বস্ত্র চান কিন্তু মূর্তিগুলো কোনো উত্তর দিতে পারেনি, তখন তিনি তাদের মুখে পাথর মেরে চলে আসেন। জাহেলি যুগে তিনি হানিফ ধর্মে অটল ছিলেন। ( আল-খোলাফা আর রাশিদিন)
উত্তর দিচ্ছেন : আবদুল আউওয়াল, শিক্ষাবিদ, গবেষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন