উত্তর: যুদ্ধে অংশগ্রহণ: বদর থেকে তাবুক প্রতিটি যুদ্ধে তিনি নবিজির সা. সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। বদরের যুদ্ধে নবিজির সা. তাবু পাহারার দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই ছিল। খন্দকের যুদ্ধে একটি অংশের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন। সে অংশে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল যা আজ মসজিদ-ই-আবু বকর রা. নামে পরিচিত। হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তিতে সাক্ষী হিসাবে তিনি স্বাক্ষর করে ছিলেন। হুনাইনের যুদ্ধে নবিজিকে সা. রক্ষার দায়িত্বে যে কয়জন ছিলেন তিনি তাদেরও অন্যতম ছিলেন। তাবুক যুদ্ধে সমুদয় সম্পত্তি দান করে ইতিহাস হয়ে আছেন।
বিপদে ধৈর্যধারণ: দশম হিযরিতে নবিজির সা. ইন্তেকাল ছিল সাহাবাদের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্দিন ও বিপদের মুহুর্ত। প্রিয় মনীষীর ইন্তেকালে সবাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। হযরত উমর রা. তলোয়ার উঁচিয়ে বলছিলেন, ‘যে বলবে রাসুলুল্লাহ সা. ইন্তেকাল করেছেন তাকে আমি গর্দান উড়িয়ে দেবো। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. তখন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেন, ‘হে লোক সকল, যারা মুহাম্মাদের ইবাদাত করতে তোমাদের জানা উচিত, তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে। কিন্তু যারা আল্লাহর ইবাদাত করতে তাদের জানা উচিত, আল্লাহ চিরঞ্জীব তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না’ একথা বলে পাঠ করেন কুরআনের এই আয়াত- ‘মুহাম্মাদ একই রাসুলই, যার পূর্বে অনেক রাসুল অতিবাহিত হয়েছেন। তাহলে কি তিনি মারা গেলে বা শহিদ হয়ে গেল তোমরা পেছনে ফিরে যাবে?’ (সুরা আলে ইমরান:১৪৪) সিদ্দিকে আকবরে জাদুময়ী এই ভাষণে সাহাবাদের হুশ ফিরল। উমর শান্ত হলেন। সবাই বলতে লাগলেন- ‘আমাদের মনে হলো এই আয়াত মাত্র নাযিল হয়েছে।’
ইসলামের প্রথম খলীফা: নবিজির সা. ইন্তেকালের পর মুসলমানদের জন্য জরুরি হয়ে ওঠলো নবিজির সা. কোনো খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া। নতুবা মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা খন্ড-বিখন্ড হয়ে যেতে পারে। তাই ‘বনু সায়েদার’ বৈঠকখানায় আনসারগণ এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে দিলেন এবং তারা যেহেতু মদিনার বাসিন্দা এবং ইসলামের দুর্দিনে সাহায্যকারী তাই এ দায়িত্বের জন্য নিজেদেরকেই যোগ্য মনে করতে লাগলেন। এ সংবাদ আবু বকর ও উমর রা.-দের কানে গেলে তারাও আলোচনায় অংশ নেন । হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. তখন আনসারদের দ্বীনের জন্য দেয়া ত্যাগ-কুরবানির প্রশংসা করেন। এবং নবিজির সা. বিখ্যাত হাদিস- ‘আল আয়িম্মাতু মিন কুরাইশিন’ তথা নেতা হবে কুরাইশদের থেকে উক্তিটি তাদের শুনিয়ে দেন। আনসার মুহাজিরদের মাঝে এ নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকলে হযরত উমর রা. নিজে প্রথম আবু বকর রা.-র হাতে বায়আত নেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে সব বিবাদ মিটে যায় ও উপস্থিত জনতা সবাই তাঁর হাতে বায়আত নিতে ভেঙ্গে পড়ে। (খেলাফতে রাশেদা)
বিদ্রোহ দমন ও ইসলামি হুকুমত সংরক্ষণ: নবিজির সা. ওফাতের পর ধর্মান্তর ফেতনার ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলো। দীর্ঘকাল ধরে বিচ্ছনতাবাদী ও স্বাধীনচেতা আরব জনগোষ্ঠী যারা বংশীয় কৌলীন্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলতো আজ সবাই একই দলে আবদ্ধ। একই নির্দেশের আওতাধীন। এটা তাদের স্বাধীন মনোভাবে আঘাত হানল। তাই ইসলাম থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবনের জন্য দলে দলে মুরতাদ হতে শুরু করল। তাছাড়া নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের কাছে যাকাত একটি বোঝা হয়ে দাঁড়াল। তাদের প্রিয় পানীয় মদ ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ায় এটা যেনো কোনোভাবেই মানতে পারছিল না । তাই ইসলাম ত্যাগ করাকেই সমস্যার সমাধান মনে করল। সাহাবায়ে কেরামদের মাঝে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। কেউ কেউ যাকাত অস্বীকারকারীদের বিষয়ে ছাড় দেয়ার কথা বলছিলেন। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘ আল্লাহর কসম, নবিজির যুগে যারা একটি ছাগলছানা যাকাত দিত তারা যদি আজ তা দিতে অস্বীকার করে আমি তাদের বিরুদ্ধেও জিহাদ করব। এই বলে তিনি নিজেই আবাস ও যাবরান গোত্রের বিরুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন। এবং সমস্ত ফেতনা দূর করে মদিনায় ফিরেন। তার দৃঢ়তার ফলে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। (খেলাফতে রাশেদা, কাজী যাইনুল আবেদিন মিরাঠি)
ভন্ডনবীদের উৎখাতকারী: নবিজির সা. ইন্তেকালের পর অনেকের মাঝে নবুয়তের পাগলামি চেপে বসল। তারা নিজেদের নবি দাবি করে ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেলে। তুলাইহা, আসওয়াদ আনাসি, মালেক বিন নুয়াইরা, মুসাইলামাতুল কাজ্জাব এরা সবাই আলাদা আলাদা নবুয়ত দাবি করে বসল। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন এবং কঠোর হস্তে তাদের দমন করেন। তুলাইহা তাওবা করে ফিরে এলেও বাকিরা সব যুদ্ধ করে নিহত হয়।
উত্তর দিচ্ছেন : আবদুল আউওয়াল, শিক্ষকতা, কাব্যচর্চা ও গবেষণা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন