শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

অস্তিত্ব সঙ্কটে দেওয়ানগঞ্জের খালগুলো

বিপর্যয়ের পথে প্রাকৃতিক ভারসাম্য : খনন ও সংস্কার জরুরি

মো. শামছুল হুদা, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রকৃতি প্রদত্ত নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুরে ভরপুর দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় প্রায় পনেরোটি খাল ছিলো। যা এখন শুধুই স্মৃতির পাতায়। খালগুলোর অভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য এখন বিপর্যয়ের পথে। প্রতিনিয়ত পুনঃউদ্ধার, সংস্কার ও সংরক্ষণের কথা চলছে সচেতন ব্যক্তি ও জনতার মুখে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল সন্ধানে জানা যায়, অনেক খাল ছিলো। এলাকাবাসী দু’চারটি খালের নাম বলতে পারেন। বাকি খালগুলো দেখেছেন কিন্তু নাম মনে নেই বলেন। আবার একই খালের নাম একেক জন একেক নামে বলেন। তার মধ্যে ঘেগারচর খাল, বিন্দুরচর খাল, চরমাদার খাল (এটি সিলেট খাল নামেও পরিচিত) সরদারপাড়া খাল, গুলুঘাট খাল, চিকাজানি খাল, চরভবসুর খাল, ঢাকা খাল, উৎমারচর পূর্ব ও উৎমারচর পশ্চিম খাল, দাসপাড়া খাল এখনও সর্বজনরে মুখে মুখে আছে।
দেওয়ানগঞ্জ ভ‚মি অফিস সূত্রে জানা যায় ভিন্ন তথ্য, উপজেলার মাত্র দু’টি খাল সরকারি রেকর্ডে আছে। উৎমারচর পূর্ব, উৎমারচর পশ্চিম খাল। বাকি খালগুলো আরএস এবং বিএস রেকর্ডে ভুল তথ্য দিয়ে অনেকেই ব্যক্তি মালিকানায় অন্তভুক্ত করেছেন। এরপর দিনদিন বসত বাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে খালের শ্রেণি পরিবর্তনে করেছেন। ২০১৮ সালে ইসলামিক রিলিফ থেকে উৎমারচর পূর্ব, উৎমারচর পশ্চিম খাল দুটো খনন করে সংস্কার করা হয়। যা এখনও রয়েছে। চিকাজানি খালটি নিশ্চহ্নি হয়ে এ কে এম মেমোরিয়াল কলেজের সামনে এসে ছোট একটি বিলে পরিনত হয়েছে। এভাবেই অন্যান্য খালগুলো বিলীন হয়েছে। প্রতিটি খালের সংযোগ এবং পানি উৎস ছিলো যমুনা-ব্রক্ষপুত্র নদী। সারাবছর পানিতে টয়টম্বুর থাকতো। পন্যবাহী নৌকা পারাপার ছিলো। সমস্ত উপজেলার ধান, পাট, গমসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি নৌকা যোগে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন বিভাগীয় বন্দর পর্যন্ত যেতো। ২০০৬ সাল থেকে উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ।
উপজেলার গুজিমারির জাহিদুল ইসলাম জানান, সমস্ত পণ্য এখন সড়ক পথে আনা-নেয়া করা হয়। অতিরিক্ত পণ্য বহনে সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্খা বেড়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সড়কের। কিন্তু পানি পথ ব্যবহার করলে সড়ক হবে নিরাপদ, কমবে দুর্ঘটনা।
উপজেলার ৮০ ভাগ কৃষি জমি। আধুনিক সেচ সুবিধা থাকলেও খালের অভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অনেক সময় সেচ মেশিন পানি তুলতে সমস্যা হয়। বসতবাড়ির টিউবওয়েল পানি থাকছে না। ফসলি জমি মাটির উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে। আশানুরূপ উৎপাদন হচ্ছে না। তাই স্থানীয় কৃষকরা খালগুলো পুনঃখনন করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে গত কয়েক বছর ধরেই।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, খালের নব্যতা সঙ্কটে কৃষি আজ হুমকির মুখে। শীত মৌসুমে এই উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নে ২০০ একর জমি পানির নিচে থাকে। মানব সৃষ্ট এই সমস্যার সম্মুখী হয়ে দেওয়ানগঞ্জবাসী খালের অভাব বুঝতে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এফসিডি) এর নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন হারুন জানান, খালগুলো উদ্ধার হলে কৃষি বাণিজ্য ও জলজ অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা গড়ে উঠবে। জরুরি ভিত্তিতে এই খাল উদ্ধার করার জন্য আমাদের সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ড করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খাল উদ্ধারের প্রথম কর্মসূচি হিসাবে আমরা গণ-স্বাক্ষর অভিজান করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন