আবারও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার শত শত পরিবার। ইতোমধ্যেই গত এক মাসে ওই ইউনিয়নের মুসুল্লিপাড়া, সরকারপাড়া, ব্যাপারিপাড়া, রাসুলপুর ও মোল্লারহাট এলাকার প্রায় তিন শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন হয়েছে। এখনও অব্যাহত ভাঙন চলছে। তবে দেখা গেছে, যে যার মতো পারছেন তাদের বাড়ি-ঘর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে পরিবারের সবাই মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এমতাবস্থায় নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। ভাঙনের কবলে পড়ে গতকাল অর্ধশত বছরের পুরানো মুসুল্লিপাড়া জামে মসজিদটিও নদীতে বিলীন হয়েছে।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসুল্লিপাড়া জামে মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওই এলাকার ইব্রাহিম খলিল (৬০)। তিনি বলেন, তীব্র ভাঙনের কারণে মসজিদটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার পরেও কিছু কংক্রিটের সিঁড়ি নদীতে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আসে আর দেখে যায়, কোন কাজ করে না। ভাঙনটা কেমন যেন থেমে থেমে ভাঙছে। যখন ভাঙছে কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। মসজিদের পাশাপাশি অনেক পরিবারও নিঃস্ব হয়ে গেছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসুল্লিপাড়া এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি কমলেও ভাঙছে, বাড়লেও ভাঙছে। আমরা নদী পাড়ের যারা আছি খুব একটা বিপদে দিন পার করছি। গতকাল মুসুল্লিপাড়া জামে মসজিদটি ভাঙনের কবলে পরলে তাড়াহুড়ো করে ঘর ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মসজিদটির বয়স কমপক্ষে হলে ৫০-৬০ বছর। আমি ছোট বেলা থেকেই এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছি। আজ মসজিদটি নেই খুব খারাপ লাগছে কোনভাবেই মসজিদটি ঠেকানো যায়নি।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মোল্লার হাটের কড্ডার মোড়ে কিছু কাজ করছে। আর যদি ৫শ’ মিটার এলাকাজুড়ে কাজ করতো তাহলে এতো পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া বলেন, বর্ষা মৌসুম আসছে থেকে আমার ইউনিয়ন ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে আমার ইউনিয়নের তিন ভাগের দুই ভাগ ব্রহ্মপুত্র নদে চলে গেছে। অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে গেছে। গত একমাসে কমপক্ষে তিন শতাধিক বাড়ি ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। সরকারিভাবে কেউ কেউ সহায়তা পাইছে, কেউ এখনো পায় নাই। এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে আবাদি ফসলও পানিতে তলিয়ে আছে।
তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা মিলে বিভিন্ন পয়েন্ট প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়েই ভাঙছে। এবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড দু’টি পয়েন্ট মাত্র ৬-৭ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। তা দিয়ে কি আর এতো বড় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এ মাসে মাত্র ১ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। যেভাবে ভাঙছে আগামী বছরের মধ্যে পুরো ইউনিয়নটি নদীতে চলে যাবে মনে হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন