মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অসময়ে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে উত্তাল ঢেউ আর প্রবল গ্রোতের কারণে ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে পদ্মা নদী ঘেঁষা উপজেলার আশপাশের গ্রাম ও বসতভিটা। গত ২/৩ দিনে তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়-নওপাড়া গ্রামে ইতোমধ্যে ৯টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। অনেকে সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে। সর্বনাশা পদ্মার ছোবলে প্রতিবছরই আঘাত হানছে আড়াই লাখ জনসংখ্যার বসবাসরত এই উপজেলার মানচিত্রে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস ধরে তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামে কমবেশি ভাঙছে। তবে সপ্তাহ খানেক ধরে তীব্র গতিতে ভাঙন চলছে। দিনে-রাতে অনিয়মতান্ত্রীতভাবে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচলে উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর সকালে মিঠু মোল্লার ৪শ’ বছরের পুরনো ভিটেবাড়ি পদ্মার গর্ভে চলে যায়। পরে তরিগরি করে ঘরটি ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে রাখা হয়। এছাড়া মামুন মোল্লা, মুকুল মোল্লা, কুতুব মোল্লা, হোসেন মোল্লা, তাজুল শিকদার, জাহাঙ্গীর শিকদার, ইউনুছ মোল্লা, রাকিব মোল্লার বসতঘর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। টেউটিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বড় নওপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কখন পদ্মায় গিলে খায় সে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীর পাড়ের মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, এর আগে ৫০ হাজার টাকার বাঁশ-খুঁটি ও বালুভর্তি ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
এরও আগে চলতি বছরের ১৮ মে উপজেলার শামুরবাড়ি ও হাড়িদিয়া গ্রামে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উপজেলাবাসীদের মধ্যে যখন আনন্দের বন্যা বইছে, ঠিক তখনই হঠাৎ নদী ভাঙন দেখা দেওয়ায় আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
খবর পেয়ে গত শনিবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে থেকে দ্রুত ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা কাজ শুরু করেছি।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত পদ্মার বাম তীর ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। খড়িয়া থেকে দিঘিরপাড় পর্যন্ত এলাকার দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হলেও শুধু ভাঙন প্রবণ ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু টেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত না। তবে ভাঙন রোধে আজ থেকে জিওব্যাগ ফেলা হবে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন